যে ৫ কারণে আলোচনায় ঈদের সিনেমা
ঢাকার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে বাংলা সিনেমার টিকিট মিলছে না। আপনি যদি আজ টিকিট কেটে আজই দেখতে চান, পারবেন না। কাটতে হবে পরদিন বা তার পরদিনের টিকিট। কিন্তু কোন জাদুবলে বদলে গেল বাংলাদেশের সিনেমার দৃশ্যপট?
বড় তারকার উপস্থিতি
এবার ঈদে সবচেয়ে বেশি হলে মুক্তি পাওয়া সিনেমা প্রিয়তমায় অভিনয় করেছেন শাকিব খান। ব্যস, ছবি চলতে আর কী চাই। কয়েক বছর ধরেই বছরে একটি বা দুটি ছবি করেন শাকিব, তাই বড় পর্দায় প্রিয় নায়ককে দেখতে ভিড় করেছেন ভক্তরা। অন্য ছবি সুড়ঙ্গতে আছেন আফরান নিশো। প্রথম সিনেমা হলেও টেলিভিশন ও ওটিটির কল্যাণে তিনিও কম জনপ্রিয় নন। এ ছাড়া আট বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন মাহফুজ আহমেদ (প্রহেলিকা), এই সময়ের বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলীর দুটি সিনেমা (প্রহেলিকা ও ক্যাসিনো) মুক্তি পেয়েছে। অপু বিশ্বাসকে দেখা গেছে লাল শাড়িতে। ঈদ উৎসবে এত এত তারকার ছবি মুক্তি পাচ্ছে, দর্শকেরা কী আর ঘরে বসে থাকতে পারেন!
প্রথম ঝলকেই চমক
বড় তারকাদের ছবি আগেও ঈদে মুক্তি পেয়েছে, তবে এ রকম জমজমাট প্রেক্ষাগৃহ অনেক দিনই দেখা যায়নি। ঈদের ছবিগুলো আলোচনায় আসার অন্যতম বড় কারণ—বেশির ভাগ ছবিই প্রথম দর্শনে বাজিমাত করেছে। প্রিয়তমায় শাকিব খানের প্রথম পোস্টার প্রকাশের পর থেকেই তাঁর লুক নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। এরপর অশীতিপর বৃদ্ধের লুক তো রীতিমতো ভাইরালই হয়।
অন্যদিকে সুড়ঙ্গ প্রথম টিজার মুক্তি দেওয়ার পর থেকেই আলোচনায় চলে আসে। পরে ফোরস্টেস্ট বা পূর্বাভাস মুক্তির পর জুটতে থাকে প্রশংসা। ঈদে আরেকটি আলোচিত ছবি প্রহেলিকা, এতে মাহফুজ আহমেদের লুক নিয়েও আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে মুক্তির অনেক আগে থেকে ছবিগুলো নিয়ে দর্শকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়।
গানে গানে জমজমাট
প্রহেলিকার ‘মেঘের নৌকা’ গানটি মুক্তি পেয়েছিল মাস চারেক আগে। ছবিটি গত রোজার ঈদেই প্রেক্ষাগৃহে আসার কথা ছিল, সে জন্যই হয়তো এত আগে প্রকাশ করা হয় গানটি। ইমরান ও কোনালের গাওয়া রোমান্টিক গানটি পছন্দ করেছেন দর্শক-শ্রোতারা। কেবল এ গানই নয়, ঈদে মুক্তি পাওয়া প্রায় সব সিনেমার গানই প্রশংসিত হয়েছে। ঈদের ছবির গানগুলোর জনপ্রিয়তার পর ‘বাংলা সিনেমার গান আগের মতো নেই’, এ কথা বলার লোকের সংখ্যা হয়তো কমে আসবে। একই ছবির ‘হৃদয় দিয়ে’ গানটিও প্রশংসিত হয়। আসিফ ইকবালের কথায় ক্ল্যাসিক্যাল ঢঙের গানটি গেয়েছেন কিশোর ও স্বরলিপি। লাল শাড়ি ছবির গান ‘রঙে রঙে ঢঙে ঢঙে’ মুক্তি পায় দুই মাস আগে। উৎসবের আবহে তৈরি গানটিও দর্শক-শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।সুড়ঙ্গ চমকে দেয় আইটেম গান দিয়ে। গত ১২ জুন মুক্তি পায় কনার কণ্ঠে ‘কলিজা আর জান’। রাসেল মাহমুদের কথায় গানটিতে সুর ও সংগীতায়োজন করেন আরাফাত মহসিন।
গানটিতে নুসরাত ফারিয়ার আবেদনময়ী উপস্থিতি আর নিশোর বেসামাল নাচ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়। ছবির আরেকটি গান ‘গা ছুঁয়ে বলো’ও প্রশংসিত হয়। এটি গেয়েছেন তানজীব সারোয়ার।তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রিয়তমার গান। ছবির প্রথম গান ‘কোরবানি কোরবানি’ মুক্তি পায় ঈদের চার দিন আগে।
ঈদের সিনেমার গানগুলোর মধ্যে কেবল এটিকেই বলা যায় ঈদের কথা মাথায় রেখে তৈরি। প্রিয়তমার আরেকটি গান ‘ও প্রিয়তমা’ তো ১১ দিন ধরে ইউটিউবের মিউজিক বিভাগে ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে রয়েছে। দুই চ্যানেল থেকে প্রকাশিত গানটির ভিউ পাঁচ কোটির বেশি। আসিফ ইকবালের কথায়, আকাশের সুরে গানটি গেয়েছেন বালাম ও কোনাল। গানগুলো দেখে ঈদের ছবিগুলো দেখতে দর্শকদের আগ্রহ আরও বেড়েছে বললেও ভুল বলা হবে না।
নির্মাতা ও নির্মাণ
আগে ছবি মুক্তির আগে তারকারাই আলোচনায় থাকতেন। কিন্তু এখন নির্মাতাদের নিয়েও কথা হচ্ছে। রায়হান রাফী, হিমেল আশরাফ, চয়নিকা চৌধুরীদের নিয়ে কথা বলেছেন সাধারণ দর্শকও। সিনেমা মুক্তির আগে পরিচালকেরা প্রচুর সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন, নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন—এতে নির্মাতাদের দর্শন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা হয়েছে। এবারের ঈদের আলোচনায় থাকা তিন ছবির নির্মাণই ছিল কমবেশি ‘স্মার্ট’। নতুনভাবে পরিচালকদের গল্প বলার ভঙ্গি পছন্দ করেছেন দর্শক। ঈদের তিন সিনেমার গল্পও প্রশংসিত হয়েছে।
পুরোনো ধাঁচের গল্প থেকে বেরিয়ে নতুন ধারার গল্প বলতে চেয়েছেন পরিচালকেরা। ছবি মুক্তির পর মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে বিষয়টি। ফলে অন্যরাও দেখতে ভিড় জমিয়েছেন।আগে ঢাকাই ছবির নানা নির্মাণত্রুটি নিয়ে হাসাহাসি হতো। কিন্তু এবারের ঈদের বাংলা সিনেমার কারিগরি দিক নিয়ে প্রশংসা করেছেন সাধারণ দর্শক। প্রিয়তমায় শাকিব খানের বৃদ্ধ বয়সের লুক প্রশংসা পেয়েছে, সুড়ঙ্গ-এর সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ সংগীতসহ নানা বিষয়ের তারিফ করেছেন দর্শক। আগে সাধারণ দর্শক এসব বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতেন না। কিন্তু নিয়মিত বিদেশি কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত দর্শক এখন সম্পাদনা, আবহ সংগীত, শব্দ গ্রহণ নিয়েও কথা বলেন।
প্রচার
ঈদের ছবি মুক্তির আগে নির্মাতাদের যেন ঘুমহারাম অবস্থা। প্রিয়তমা সেভাবে ছবির প্রচার চালায়নি। কিন্তু সুড়ঙ্গ ও প্রহেলিকা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে। পরের দিকে লাল শাড়িও প্রচারে নেমেছে। আফরান নিশো খুব একটা সাক্ষাৎকার দেন না। কিন্তু প্রথম ছবি মুক্তির আগে ও পরে তিনি যত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, পুরো ক্যারিয়ারেও এত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি না, সন্দেহ। আট বছর ধরে অভিনয়ে ছিলেন না মাহফুজ আহমেদ। তিনিও প্রহেলিকা মুক্তি উপলক্ষে অনেক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তারকার সাক্ষাৎকার ধরে তাঁর ছবিটি নিয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনি অনেক কথার সূত্র ধরে বিতর্কও হয়েছে। তবে সন্দেহ নেই, এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঈদের ছবি নিয়ে আলোচনা তৈরি করেছে।