রেকর্ডসংখ্যক হলে শাকিবের ‘তাণ্ডব’, শুভ, বাঁধন, রাজ, পূজারা কয়টি করে হল পাচ্ছেন
ইতিমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ঈদের সিনেমার পোস্টার। সিনেমাগুলো নিয়েই এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। কোন সিনেমা কত হলে, কে কোন হলে সিনেমা মুক্তি দেবেন সেই পরিকল্পনার রূপরেখা চূড়ান্ত হচ্ছে। ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছয়টি সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ঈদের বেশির ভাগ ঈদ সিনেমাই ঢাকাকেন্দ্রিক।
ছয়টি সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাইরে সিনেমা মুক্তি দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। কোনোটি পাইরেসির ভয়ে ঢাকার মধ্যেই থাকতে চাইছে। কেউ আগে থেকেই পরিকল্পনা করছে ঢাকা মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ফলাফল দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তারপরও দেশজুড়ে ঈদের সিনেমা নিয়ে মেতে উঠছেন ঢালিউডের দর্শকেরা। বরাবরের মতো এবারও শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমা সর্বাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। কত হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘তাণ্ডব’? অন্য সিনেমাগুলোই–বা কয়টি হল পেল?
‘তাণ্ডব’ সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাইলে দেশের সব প্রেক্ষাগৃহে থাকতে পারি। বলা যেতে পারে সব হলেই থাকছি। কিন্তু কতটা হল সেটা এখনো ঠিক হয়নি। তবে “তাণ্ডব” নিয়ে হলমালিকদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। সবাই চাইছেন আমাদের সিনেমা। এখন পর্যন্ত আমাদের সিনেমা ১৩২টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’ সিনেমায় শাকিবের সঙ্গে জুটি হয়েছেন সাবিলা নূর।
হলের সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ‘ইনসাফ’ সিনেমা। সিনেমায় শরীফুল রাজ, মোশাররফ করিম ও ফারিণকে দেখা যাবে। তাঁদের চরিত্রের পোস্টার প্রশংসিত হয়েছে। গান টিজারেও সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি। সিনেমাটি কতটা হলে মুক্তি পাচ্ছে জানতে চাইলে পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মাল্টিপ্লেক্সের সব শাখায় আছি, ব্লকবাস্টারে মুক্তি পাবে। আর সিনেমাটি নিয়ে দেশে নানা প্রান্তের হলমালিকদের আগ্রহ রয়েছে বুঝতে পারছি। তবে আপাতত ঢাকার বাইরে ১০টির মতো হলে মুক্তির পরিকল্পনা করছি।’
সব মিলিয়ে ২০টির মতো হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘ইনসাফ।’ তবে সংখ্যা কমবেশি হতে পারে জানিয়ে রাখলেন পরিচালক।
একটি রহস্যজনক খুন ঘিরেই ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমা। ঈদের একমাত্র নারী–প্রধান সিনেমা এটি। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। ক্রাইম ও থ্রিলারধর্মী এ সিনেমাটি পরিচালনা করছে সানী সানোয়ার। তিনি জানান, আগে থেকেই তাঁদের পরিকল্পনা ঢাকার মধ্যে থাকা। প্রথম সপ্তাহের পরে তাঁরা সিনেমাটি ঢাকার বাইরে মুক্তি দিতে চান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি দর্শক দেখলেই বুঝতে পারবে অন্য রকম একটি গল্প। সব শ্রেণির দর্শকের জন্য গল্পটি হলেও মাল্টিপ্লেক্সই আমাদের প্রথম টার্গেট। পরে আমরা পরিস্থিতি বুঝে ঢাকার বাইরে মুক্তি দেব।’ এটি ১০টির মতো হলে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ঈদে মুক্তি পাচ্ছে আরিফিন শুভর সিনেমা ‘নীলচক্র’। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে জানা যায়, ঢাকার বাইরে খুলনা, সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জসহ একাধিক জায়গা থেকে সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহী দেখিয়েছেন হলমালিকেরা। কিন্তু সিনেমাটি আপাতত ঢাকার মধ্যেই মুক্তি দিচ্ছেন। এর কারণ, পাইরেসির ভয় রয়েছে। সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটর জাহিদ হাসান অভি বলেন, ‘মাল্টিপ্লেক্সের সব শাখায় আমাদের সিনেমা মুক্তি পাবে। পাশাপাশি লায়ন সিনেমাসে মুক্তি পাবে। আমরা পরে ধীরে ঢাকার বাইরে রিলিজ করতে চাই।’ সব মিলিয়ে ১০টির মতো হলে মুক্তি সম্ভাবনার রয়েছে। সিনেমায় শুভর সঙ্গে জুটি হয়েছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মিঠু খান।
ঈদে আদর আজাদ ও পূজা চেরি অভিনীত সিনেমা ‘টগর’ মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমাটির গান দিয়ে প্রচারণায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও হলসংখ্যায় এগোতে পারেনি। সিনেমার প্রযোজনাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেলেও সব মিলিয়ে সিনেমার হলসংখ্যা ১০ থেকে ১১টি হতে পারে। এটি পরিচালনা করেছেন আলোক হাসান।
চরকি প্রযোজিত সিনেমা ‘উৎসব’ রয়েছে মুক্তির তালিকায়। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে আলোচনায় রয়েছে পরিবারকেন্দ্রিক গল্পের এ সিনেমাটি। সিনেমার ট্যাগলাইনেও ব্যবহার করা হয়েছে, ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’। সিনেমাটি দিয়ে যেন সাতকলা পূর্ণ হলো। কারণ, বেশ কয়েক বছর পরিবারকেন্দ্রিক গল্প ঈদে তেমন দেখা যায় না। সেখানে আশার আলো দেখাচ্ছে ‘উৎসব’ সিনেমাটি। তা ছাড়া সিনেমাটিতে একসঙ্গে দেখা যাবে জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, অপি করিম, ইন্তেখাব দিনার, চঞ্চল চৌধুরীদের। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তানিম নূর। সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, সিনেমাটি ঢাকার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার ও লায়ন সিনেমাসে মুক্তি পাবে। সাতটি সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। কতটি শো চলবে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সবগুলো সিনেমাই একসঙ্গে দেখা যাবে সিনেপ্লেক্সে। বরাবরের মতোই তারা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিনেমাগুলো মুক্তি দিতে চায়। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এর আগেও ঈদে ছয়টি সিনেমা চালিয়েছি। শুরুতে আমরা সবগুলো সিনেমাই চালাব। পরে শো–এর সংখ্যা কোনটির বাড়বে কমবে সেটা দর্শকের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত হবে। দেখা যাবে কিছু সিনেমার শো বাড়বে, কিছু কমবে। অতীতের মতোই আমরা সিনেমাগুলো চালাব।’