টাঙ্গাইল গিয়ে আপ্লুত নিশো বললেন, ‘এই দিনে বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ছে’

নিশোর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ‘সুড়ঙ্গ’ ছবির নায়িকা তমা মির্জাফেসবুক থেকে

প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। ‘সুড়ঙ্গ’ নামের এই সিনেমা দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহায়। প্রেক্ষাগৃহে বসে এই সিনেমা দেখার জন্যই এই অস্থায়ী সিনেমা হলের উদ্যোগ নিয়েছেন ভক্তরা। এলাকাবাসী ঈদের দিন থেকে অস্থায়ী হল তৈরি করে টিকিটের বিনিময়ে ‘সুড়ঙ্গ’ দেখাচ্ছেন!

আফরান নিশোর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায়। এ উপজেলায় কোনো সিনেমা হল নেই। এই এলাকার বাসিন্দারা যাতে তাঁর সিনেমা হলে বসে দেখতে পারেন, এ জন্য তাঁর ভক্তরা পৌরসভার ‘স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তন’ ভাড়া করে অস্থায়ী সিনেমা হল প্রস্তুত করেছেন। এখানে ঈদের দিন থেকে চলছে সিনেমাটি।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় আফরান নিশোর বাবার জন্মস্থান। নিশোর জন্ম ঢাকায় হলেও ছোটবেলা থেকেই এখানে আসা-যাওয়া করতেন তিনি। এখানে তাঁর ভক্তরা এমন একটি আয়োজন করতে যাচ্ছেন, আগে থেকে তিনি তা জানতেন না। ঈদের আগে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথম খবরটি পেয়েছেন নিশো। সে সময় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে কয়েকজন আমাকে এই খবর দেয়। এটা জানার পর আমি তো অবাক! আমার নিজ এলাকার মানুষ আমার কাজকে ভালোবাসেন, আমাকে ভালোবাসেন। এটি প্রিয় তারকার প্রতি ভক্তদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আয়োজকদের আমন্ত্রণে ভূঞাপুরে যান নিশো। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ‘সুড়ঙ্গ’ ছবির পরিচালক রায়হান রাফী ও নায়িকা তমা মির্জা। ভূঞাপুর স্কুলমাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিশোকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার নিশো–ভক্তকে দেখা যায়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আয়োজকদের আমন্ত্রণে ভূঞাপুরে যান নিশো
ফেসবুক থেকে

অনুষ্ঠানে সবার উদ্দেশে কথা বলেন নিশো, রাফী ও তমা। শুধু সিনেমা নিয়ে নয়, কথা বলার একপর্যায়ে নিশো স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন তাঁর প্রয়াত বাবাকে নিয়ে। সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন
নিশো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ের জগতে কাজ করছি। নাটক করেছি। কিন্তু এই প্রথমবার আমি সিনেমায় অভিনয় করলাম। সারা দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছেন। এখানে আমার বাড়ি। আমার বাবার ভিটা এখানে। এ অঞ্চলের মানুষের কথা যদি বলি, আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

অস্থায়ী হল বানিয়ে সিনেমা দেখানোর আয়োজন করায় এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিশো বলেন, ‘এ রকম ঘটনা আমি কখনো শুনিই নাই যে এলাকাবাসী মিলে অস্থায়ী একটা হল বানিয়ে সিনেমা চালাচ্ছে! এটা বোধহয় ভূঞাপুরের মানুষের দ্বারাই সম্ভব। সবাই মিলে যে অস্থায়ী সিনেমা হল বানিয়ে আমার সিনেমা দেখছেন, এটা আমাকে দায়িত্ববোধের জায়গায় আরও দৃঢ় করে। একই সঙ্গে আপনাদের এমন ভালোবাসা আমাকে প্রশ্নবৃদ্ধ করে, ভাবায় যে আমার এলাকাবাসী তো আমার জন্য অনেক কিছু করে বা করছে; আমি কি আমার এলাকার মানুষের জন্য সে রকম কিছু করতে পারছি! নাকি দূরে দূরেই বসে আছি!’

নিশোর ভক্তরা পৌরসভার ‘স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তন’ ভাড়া করে অস্থায়ী সিনেমা হল প্রস্তুত করেছেন
ফেসবুক থেকে

নিশো বলেন, ‘এখানে অনেকেই দাবি করেছেন যে আমি যেন মাঝেমধ্যে ভূঞাপুর আসি। প্রতি মাসে না হোক, দুই মাসে না হোক, অন্তত ঈদে যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করতে আসি। এখন থেকে সেটা হবে।’
প্রয়াত বাবার কবর জিয়ারতে প্রায়ই একা আসেন জানিয়ে নিশো বলেন, ‘আমার বাবার কবর এখানে। আমি কিন্তু মাঝমধ্যে এলাকায় আসি। গভীর রাতে একা গাড়ি চালিয়ে বাবার কবরের পাশে আসি। কবর জিয়ারত করে একাই চলে যাই। আমি চাই না অনেকে জানুক। এটা আমার আর আমার বাবার অনুভূতি।’

বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই নিশোকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার প্রথম সিনেমা “সুড়ঙ্গ”–এর কারণে এলাকায় সবার সামনে আসছি। এই দিনেও বাবাকে খুব বেশি মনে পড়ছে। আজ আমি বড় পর্দায় কাজ করছি। আমার বাবা থাকলে কত যে খুশি হতো! আমার বাবাকে আমি দুই সময়ে ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছিলাম, এক. আমি যখন নিজে বাবা হয়েছি। দুই. যখন আমার বাবা চলে গেছেন! আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের বলি, মা–বাবার প্রতি যে দায়িত্ব, সেটা ঠিকভাবে পালন করবেন। তাঁদের সব সময় বুকের ভেতরে রেখে দেবেন। তাঁদের কখনো হারতে দেবেন না। তাঁদের কখনো কষ্ট দেবেন না।’

কথা বলছেন তমা মির্জা
ফেসবুক থেকে

নিশোর জন্মস্থান ভূঞাপুরে একসময় দুটি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন একটিও অবশিষ্ট নেই। তাই এলাকাবাসী এ সময় সিনেমা হলের জন্য নিশোর কাছে অনুরোধ করলে সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিনেমার মানুষ হয়েই গেছি, অদূর ভবিষ্যতে আমার এলাকা ভূঞাপুরে সিনেমা হল বানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে বর্তায়। সিনেমা হল আমরা বানিয়ে ছাড়ব।’
এ সময় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনের উদ্দেশে নিশো বলেন, ‘আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি কারও উপকারে না লাগলেও যেন কখনোই অপকারে না আসি। আমার বাবার ভিটা এবং আপনাদের মানসম্মান যেন বজায় রাখতে পারি।’
রায়হান রাফী পরিচালিত ‘সুড়ঙ্গ’তে আফরান নিশোর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা। রায়হান রাফীর সঙ্গে সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন নাজিম উদ্ দৌলা। চরকি ও আলফা আইয়ের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।