শাকিব-বুবলীর যে বক্তব্যের হিসাব মিলছে না

ফেসবুকে শাকিব খানের উদ্দেশে বক্তব্য দেন চিত্রনায়িকা বুবলী
কোলাজ

গতকাল শাকিব খান প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বুবলীর সঙ্গে তাঁর অধ্যায় পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। শাকিব খানের কথায় স্পষ্ট, বুবলীর সঙ্গে তাঁর আর কোনো সম্পর্ক থাকছে না। শাকিব খানের এই বক্তব্য প্রসঙ্গে আজ বুবলী ফেসবুক পোস্টে জানালেন ভিন্ন কথা—তাঁদের এখনো সম্পর্ক রয়েছে। কেবল এটিই নয়, শাকিব ও বুবলীর বেশ কিছু বক্তব্যের হিসাব মেলাতে পারছেন না তাঁর ভক্তরা।

শাকিব খান তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘রংচং মাখিয়ে খবর প্রকাশের তো কিছু নেই। আমাদের সম্পর্ক যে নেই, সে বিষয়টা তো অনেক আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছি। বুবলীকে আমার সঙ্গে আর অনস্ক্রিন-অফস্ক্রিন কোথাও দেখা যাবে না।’ শাকিবের এমন বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বুবলী। কারণ তাঁর দাবি, গত ঈদে শাকিবের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন তিনি।

শাকিব খান
ছবি: ফেসবুক

বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা জাস্ট একটা সুন্দর ঈদ কাটালাম। আমাদের সন্তান শেহজাদসহ। একসঙ্গে গাড়িতে ঘুরেছি, গান শুনেছি, আপনার (শাকিব খান) আপকামিং মুভির গানও শোনালেন, আপনার জোকস শুনে হেসেছি, একসঙ্গে খাবার খেয়েছি, আপনাকে খাইয়েও দিয়েছি, গল্প করেছি। শেহজাদ ছাড়াও কয়েক দিন আগেও আমরা এই ঈদ এবং ঈদের পরে একসঙ্গে থেকেছি, সময় কাটিয়েছি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তারকাদের ভক্তদের প্রশ্ন, ঈদেও শাকিব-বুবলীর এত ভালো সম্পর্ক থাকলে, হঠাৎ কেন শাকিব বললেন, তাঁদের অধ্যায় পুরোপুরি শেষ?
শাকিব ও বুবলী কি আসলেই একসঙ্গে সময় কাটিয়েছেন? শাকিবরের সঙ্গে কোনো ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা যায়নি বুবলীকে। তাঁদের সম্পর্ক যে স্বাভাবিক নেই, সেটা অবশ্য আগেই বোঝা গিয়েছিল। গত বছর অক্টোবরেও ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার রোমান্টিক গানের শুটিংয়ে দুজনেরই মন খারাপ ছিল। ‘সুরমা সুরমা’ শুটিং শেষ করে দুজন দুই দিকে চলে যান। কেউ কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলেননি। প্রেমের গান হলেও পর্দায় তাঁদের মধ্য দূরত্ব ছিল, সেটা সিনেমা দেখে বোঝা যায়, যা শাকিব নিজেও তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে আগে এমনটা ঘটেনি।

বুবলী
ছবি: ফেসবুক

শাকিবের নতুন ছবি ‘প্রিয়তমা’র শুটিং শুরু হলেও সেখান থেকে বাদ পড়েছেন বুবলী। বিষয়টি নিয়ে শাকিব বলছেন, চরিত্রের প্রয়োজনেই বুবলীকে বাদ দিতে হয়েছে। একটু পেছনে ফিরলেই ঘটনা পরিষ্কার হয়। মূলত সন্তানকে সামনে নিয়ে আসার কারণেই তাঁদের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। জানা যায়, শাকিব চাননি বুবলী সন্তানকে এভাবে সামনে নিয়ে আসুক। এ ঘটনা গত বছর পয়লা অক্টোবরের, সন্তানকে প্রকাশ্যে আনা নিয়ে দুই তারকার বক্তব্যও ছিল দুই রকম। শাকিব সেখানে সন্তানকেই স্বীকৃতি দেন, বুবলীকে নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

শাকিব প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও বলেন, ‘শেহজাদের সঙ্গে আমি শুরু থেকেই ছিলাম, আছি এবং আজীবন থাকব।’ স্ত্রী বুবলী প্রসঙ্গে তেমন কোনো কথা বলেননি। তবে বুবলী সেই সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেহজাদ খান বীর, আমার এবং শাকিবের সন্তান, আমাদের ছোট্ট রাজপুত্র।’

বুবলী তাঁর সন্তানকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পর থেকে এই দুই তারকার সম্পর্ক এই ভালো, এই মন্দ। সংসার টিকছে কি না, এই নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এর মধ্যেই গত নভেম্বর মাসে হঠাৎ করে উপহার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনায় আসেন বুবলী। হঠাৎ এক ফেসবুক পোস্টে বুবলী জানালেন, শাকিব খান তাঁকে জন্মদিন উপলক্ষে নাকফুল উপহার দিয়েছেন। ২০ নভেম্বর ছিল বুবলীর জন্মদিন। তখন দুই তারকার ভক্তরা হয়তো ধরে নিয়েছিলেন তাঁদের সম্পর্ক ভালোই যাচ্ছে। গণমাধ্যমে এই উপহার নিয়ে একের পর এক খবর প্রকাশ হচ্ছিল। সেই সময় হঠাৎ করেই শাকিব সিনেমার ক্লাইমেক্সের মতো ঘুরে দাঁড়ালেন। আবার শুরু হলো নতুন গল্প।

সিনেমার দৃশ্যে শাকিব খান ও বুবলী। ছবি: ফেসবুক থেকে
ছবি: ফেসবুক

২৫ নভেম্বর শাকিব একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কোনো ধরনের ডায়মন্ড নাকফুল আমি তাকে উপহার দিইনি। সত্যি কথা বলতে, তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। উপহার দেওয়া কিংবা উইশ করা—কোনোটাই আমার পক্ষ থেকে হয়নি। সন্তানের প্রয়োজনে সে আমাকে বা আমি তাকে লিখলেও, তা শুধু শেহজাদকে কেন্দ্র করে যতটুকু দরকার, ততটুকুই হয়, এর বাইরে আর কোনো কিছুর প্রশ্নই আসে না।’ বুবলীর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ভক্তদের প্রশ্ন, ‘আপনাদের কদিন পরপর কী হয়?’ শাকিবের উদ্দেশে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে বুবলীর কাছেই।

বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টে শাকিবের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘মিস্টার শাকিব খান, আপনার বিশেষ কিছু সাক্ষাৎকার খুব অপরিচিত লাগে, কেমন যেন বাস্তবে দেখা আপনার সঙ্গে মেলে না। আপনি কি সব সময় সজ্ঞানে কথা বলেন নাকি অজ্ঞানেও মাঝেমাঝে কথা বলেন? নাকি আপনার হয়ে আপনার একান্ত মুখপাত্ররাও কথা বলে? কিছুদিন পরপর হঠাৎ হঠাৎ করে আমাকে নিয়ে আপনার এ রকম নিউজ দেখে খুব অবাক হয়ে ভাবি, হচ্ছেটা কী।’

গেল ২৮ মার্চ ছিল শাকিব খানের জন্মদিন। তখনো শাকিবের সঙ্গে বুবলীকে দেখা যায়। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিশেষ দিনটি উপলক্ষে শাকিব খান বুবলীকে কোনো নিমন্ত্রণ করেননি। পরে জন্মদিনের আয়োজনে বুবলীকে দেখা যায়। ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন বুবলী।

ছেলেকে নিয়ে শাকিবের জন্মদিনে এসেছিলেন বুবলী
ছবি: ফেসবুক

এই প্রসঙ্গে শাকিব বলেছেন, ‘শেহজাদ এখনো ছোট। সে মায়ের সঙ্গে থাকে। শেহজাদ যখন বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসে, তখন ন্যানির সঙ্গে মা-ও সঙ্গে আসে। তখন আমাদের হয়তো এক ছবিতে দেখা যায়। সন্তানের জন্য আমাদের দেখাসাক্ষাৎ হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার বড় সন্তান আব্রাহাম এখন একা আসতে পারে। স্কুল বন্ধ থাকলে আমার সঙ্গে কয়েক দিন থাকেও। ওকে নিয়ে ঘুরতে যাই। শেহজাদেরও যখন একা থাকার বয়স হবে, তখন সে-ও ন্যানির সঙ্গে বা ন্যানিকে ছাড়াই একা একা আসবে। বাবার সঙ্গে থাকবে। ঘুরবেও, বেড়াবে। দুই সন্তান বাবার সঙ্গে ঘুরবে, বেড়াবে—এসব তো স্বাভাবিক, নাকি?’

‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে অভিনয় করেছেন বুবলী ও শাকিব খান। এমন ছবি এখন শুধুই স্মৃতি।
ছবি: ফেসবুক

ভক্তদের এখন একটাই প্রশ্ন, শাকিব খান ও বুবলীর কি কোনো সম্পর্ক আছে? সেখানেও এই দুই তারকার বক্তব্য দুই রকম। শাকিব খান সাক্ষাৎকার বলেছেন, ‘বাস্তব জীবনে বুবলীর সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে, সেটাই বলতে চেয়েছি। তার জীবন তার, আমার জীবন আমার। সন্তানের কারণে আমাদের যা করণীয়, সেটাই হবে, দ্যাটস ইট। আবারও বলছি, তার সঙ্গে আমার অধ্যায় পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।’ শাকিব খান এটাও জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে শেহজাদ খান বীরের জন্যও যে সম্পর্ক থাকা দরকার সেটাই রয়েছে। শাকিবের এমন বক্তব্যে ধরে নেওয়া যায়, তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। সেখানে বুবলী এখনো দাবি করছেন, তাঁদের বিচ্ছেদ হয়নি।

বুবলী তাঁর ফেসবুক পোস্টে শাকিবের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘কিছুদিন পরপর আমাকে নিয়ে নিউজে খোঁচান কেন? উদ্দেশ্য কী? আপনি আপনার স্ত্রী (এখনো আপনার সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়নি) এবং আপনার সন্তানের মাকে নিয়ে আপত্তিকর ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে সংবাদ করে ক্ষীণ চিন্তা প্রকাশ করেন? আপনাকে তো কোথাও কখনো অসম্মান করিনি বা অসম্মান করে কথা বলিনি। বিনীত অনুরোধ করব, আবারও কোনো লুকোছাপা করে আর কোনো বাজে কনফিউশন তৈরি করবেন না।’

বীরকে নিয়ে বুবলী

দুই বছর ধরে শাকিব খান ও শবনম বুবলীকে নিয়ে চলতে থাকা গুঞ্জন প্রসঙ্গে কেউই মুখ খোলেননি। গত বছর জানা যায়, বুবলী মা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড জুয়িশ মেডিকেল হাসপাতালে। ২০২০ সালের ২১ মার্চ তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।