‘অনুদানের অর্থের বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত’

দেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান এবার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। অনুদান বরাদ্দ পেয়ে অপু বিশ্বাসও এবার প্রযোজক হয়ে আসছেন। মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেমন সরকারি অনুদান পেয়েছেন, তেমনি নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র যাঁরা নির্মাণ করছেন, তাঁরাও পেয়েছেন। সব মিলিয়ে এবার অনুদান পেয়েছে ১৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে ১৯ জনকে ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। গতকাল ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের পরিমাণ ও অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
১৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১০টি অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৬০ লাখ টাকা করে। আর ৪টি চলচ্চিত্র প্রতিটি ৬৫ লাখ টাকা পাচ্ছে। ৭০ লাখ করে পেয়েছে ৪টি চলচ্চিত্র এবং সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ পেয়েছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী ‘১৯৬৯’ চলচ্চিত্রের জন্য।

প্রথম আলোকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছবির গল্পটা একটা নির্দিষ্ট সময়কে কেন্দ্র করে। আগরতলা মামলার ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমায় অনুদানের যে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছি, তাতে ছবিটি হবে না। আরও অনেক অর্থ লাগবে। আশা করছি, বাকি ফান্ডও আমি পেয়ে যাব।’
অমিতাভ জানান, এক বছর ধরে ‘১৯৬৯’ ছবির গল্প নিয়ে গবেষণা চলছে। সামনের অক্টোবর থেকে প্রিপ্রোডাকশনের কাজ শুরু করবেন। মূলধারা ও বিকল্প ধারা—এই দুই ধারার ছবিকে অনুদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের স্ট্র্যাটেজি। কয়েক বছর ধরে তারা এই নীতিতে চলছে। অনুদানের সিনেমার একটা নিয়মই ছিল, নিরীক্ষাধর্মী ছবিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। কিন্তু নিরীক্ষাধর্মী ছবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছিল না বলে গত কয়েক বছরে সরকার মূলধারার সিনেমাকেও অনুদান দিচ্ছে।’

অনুদানের যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে পুরো ছবি বানানো সম্ভব নয়, সে কথা জানান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। তাঁর প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস এবার ‘মায়া’ চলচ্চিত্রের জন্য ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে গতকাল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে শাকিব খান বলেন, ‘যারা ভালো সিনেমা বানায়, বড় বাজেটের সিনেমা বানায়, নিয়মিত সিনেমা বানায়, তাদের নিয়মিত অনুদান দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার ক্ষেত্রে অনুদানের অর্থের বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এত অল্প টাকায় তো এখন সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। তারপরও সরকার যে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, এটা ইতিবাচক। এটা একরকম সিনেমার পাশে দাঁড়ানো।’
মায়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শাকিব বলেন, ‘এই ছবির ক্ষেত্রে বাজেট বেশি; কারণ, আমার এই ছবির গল্পটাই অন্য রকম। অনেক বড় পরিকল্পনার ছবি। টেকনোলজির দিক থেকে সময়োপযোগী ও আয়োজনের দিক থেকে বিশাল। সিনেমা বড় বাজেটের হবে, এটা নিশ্চিত।’
সরকারি অনুদান পাওয়ার খবরটি সন্ধ্যা পর্যন্তও জানতেন না সারা যাকের। ‘অন্তরখোলা’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। অনুদানের খবরটি জানার পর অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে, ‘আমি ভীষণ খুশি। আমাদের গল্পটা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সহজ হবে। এটা বিশাল সহযোগিতা।’ ‘লাল শাড়ি’ চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পেয়ে খুশি অপু বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর গল্প ভেবেছি, অনুদানপ্রাপ্তিতে ছবিটি সুন্দরভাবে বানাতে সহজ হবে।’

‘বনলতা সেন’ চলচ্চিত্রের জন্য ৭০ লাখ টাকা অনুদান বরাদ্দ পেয়েছেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। ঊনপঞ্চাশ বাতাস ছবির নির্মাতা দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে অনুদানপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন আমার কাছে বরাবরই একটি অধরা চরিত্র, যাকে কেবল কল্পনা করা যায়, অবয়ব দেওয়া যায় না। ফলে বনলতাকে খুঁজে পাওয়ার একধরনের আজন্ম অন্বেষণ রয়েছে আমার। সেই অন্বেষণ থেকেই বনলতা সেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা। কাজটি করার জন্য সরকারি অনুদানটা খুব দরকার ছিল, এটা একধরনের আত্মবিশ্বাস জোগায়। চলচ্চিত্র আমার জীবন, কিন্তু জীবিকা নয়। সেই কারণেই আমাকে কোনো ধরনের আপস করে ছবি বানাতে হয় না।’
এ ছাড়া সাধারণ শাখায় অনুদান পাচ্ছে রিফাত মোস্তফার ‘যুদ্ধজীবন’, হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ‘যাপিত জীবন’, শামীম আখতারের ‘অতঃপর রোকেয়া’, মারুফা আক্তার পপির ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’, নাজমুল হক ভূঁইয়ার ‘ডোডো’র গল্প’, সঞ্জিত কুমার সরকারের ‘বকুল কথা’, কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়ার ‘আর্জি’, আলী হায়দার রিজভীর ‘এই তো জীবন’, ছটকু আহমেদের ‘আহা রে জীবন’, সারোয়ার তমিজউদ্দিনের ‘ভাষার জন্য মমতাজ’, শরফ আহমেদ জীবনের ‘বিচারালয়’ ও দৌলত হোসাইনের ‘মুক্তির ছোট গল্প’।