আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জয়ার অনন্য জয়

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম

অগ্রহায়ণের শেষ সপ্তাহের সকালে দেশের চলচ্চিত্রজগৎ একটি সুখবর পেল। স্পেন থেকে ভেসে আসা সেই খবরে জানা গেল, মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০–এ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নারী অভিনয়শিল্পী বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। বিনোদন অঙ্গনের বাসিন্দারা জয়ার এমন প্রাপ্তিতে ভীষণ আনন্দিত। ফেসবুকে তাঁরা এই অর্জনের খবর পোস্ট করে জয়াকে সারা দিন শুভকামনা জানিয়েছেন।
ভারতীয় পরিচালক অতনু ঘোষের রবিবার ছবিতে অভিনয়ের জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন বাংলাদেশের জয়া আহসান।

গত সোমবার ঘোষিত হয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম। একই ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন ছবিটির পরিচালক অতনু ঘোষ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ভীষণ আনন্দিত জয়াও।

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তার অনুরণন পাওয়া গেল। তবে দেশের নাম উজ্জ্বল করা এই অভিনয়শিল্পী খুব বিনয়ী কণ্ঠে বললেন, ‘এ কৃতিত্ব তো আমার একার নয়, ছবিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার। ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমার অভিনয়জীবনের অন্যতম কঠিন চরিত্র রবিবার–এ করেছি। আর মুক্তির পর ছবিটি চলচ্চিত্র অনুরাগীরা ভালোবেসেছেন। এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও ভালো লাগছে। উৎসবের এই বিভাগে বিশ্বের এত বড় বড় শিল্পী মনোনয়ন পেয়েছেন, সেখান থেকে যে আমার ওপরই আলো এসে পড়বে, এতটা ভাবতেও পারিনি!’

জয়া আহসান জানালেন, তিনি সব সময়ই বিচিত্র চরিত্রের সন্ধান করেন। কিন্তু রবিবার ছবির চরিত্রটি ছিল জটিল ও চ্যালেঞ্জিং। অসম্ভব তুখোড়, আধুনিক ও চৌকস দুটি মানুষের হার না মানা যুদ্ধ ছড়িয়ে আছে পুরো ছবিতে। জয়া বললেন, ‘ছবিটা ছিল অসম্ভব ব্যতিক্রমী। ছবিজুড়ে চরিত্রটির ছিল উত্থান–পতনময় মনস্তাত্ত্বিক ভ্রমণ। ছবির গল্পটা হাতে পেয়েই মনে হয়েছিল, আন্তর্জাতিক মানের দুর্দান্ত কিছু একটা হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তা–ই হলো। কৃতজ্ঞতা অতনুদার প্রতি, তিনি পরপর দুবার আমাকে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।’

কলকাতায় রবিবার ছবির প্রচারের ফাঁকে জয়া আহসান ও প্রসেনজিৎ
সংগৃহীত

বোঝাই গেল, রবিবার–এর পাশাপাশি জয়া একই পরিচালকের বিনিসুতোয় নামের আরেকটি ছবির কথা বলছেন। ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। জয়া জানিয়ে রাখলেন, ‘সে ছবিটি দেখেও সবাই বলবেন, একটা ছবি কতটা আলোছায়ার মধ্যে যাতায়াত করতে পারে। চরিত্রও কত ব্যতিক্রমী হতে পারে।’
দেশে জয়া আহসান অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। ভারতেও তাঁর অর্জন কোনো অংশে কম নয়। আন্তর্জাতিক আঙিনায় সম্মানিত হওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে জয়া বললেন, ‘দেশের বাইরে যখনই কোথাও যাই, মাথায় সব সময় লাল–সবুজ পতাকাটাই থাকে। কাজের মধ্য দিয়ে আমরা দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করি। এ রকম সময়ে দেশের কথাই মনে পড়ে সবচেয়ে বেশি।’মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতায় রবিবার ছবিটি নির্বাচিত হওয়ার খবর পরিচালক অতনু ঘোষই প্রথম জয়া আহসানকে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন মনোনয়নপ্রাপ্ত অভিনেত্রী হিসেবে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে দিতে।

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম

জয়া তা পাঠিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অন্য কাজে। ভাবতেই পারেননি, উৎসবে বিদেশি ভাষায় চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার তিনিই জিতে নেবেন।

জয়া বললেন, ‘ভেবেছিলাম, ওই মনোনয়ন পর্যন্তই। এত বড় চলচ্চিত্র উৎসব, বিশ্বের প্রথম সারির চলচ্চিত্রকারদের ছবির বড় বড় অভিনয়শিল্পী সেখানে। পুরস্কার পাওয়ার কথা মোটেই ভাবিনি। এখন তো ট্রফি হাতে পাওয়ার অপেক্ষা।’

জয়া আহসান ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
সংগৃহীত

মাদ্রিদসহ আরও যেসব পুরস্কার পাচ্ছেন জয়া, সেসব তাঁকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বলে জানালেন তিনি। বললেন, ‘একেকটা পালক হয়তো যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসছে অনেক। নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙতে না পারলে তো শিল্পী হিসেবে এগোতেই পারব না। আমার আনন্দ একটাই—আমি যা করেছি, নিজে করেছি এবং নিজের কাজ দিয়ে করেছি। কষ্টে আর পরিশ্রমে বাংলাদেশে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেছি। সাহস করে ভারতে গিয়েছি। সেখানে তো আমার কাছের কেউ ছিল না। আমার হাতে ভালো চিত্রনাট্য তুলে দেবে, আমাকে ভালো ছবি দেবে—এমন কাউকে পাইনি।

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম

আমার শক্তি ছিল সৎভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়া। আমি শুরুতে সেটাই করেছি, এখনো তা–ই করে যাচ্ছি। এরপর যদি কিছু এসে থাকে, আমার কাজের পিছু পিছু এসেছে।’

জয়া আহসানের এই অর্জনের খবর শুনেছেন চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী বিশ্ব চলচ্চিত্রের বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের অভিনীত ছবিও পুরস্কৃত হয়েছে।

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম

কিন্তু কোনো অভিনয়শিল্পী আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতা করে সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার পাননি। জয়া আমাদের জন্য জয়ের সুসংবাদ এনেছেন। এটা আমাদের পরম প্রাপ্তি। তবে এই অর্জন বাংলাদেশের সিনেমা দিয়ে এলে আনন্দ দ্বিগুণ হতো।’
বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে নারী অভিনয়শিল্পী বিভাগে জয়া আহসানের সঙ্গে ১৮ জন অভিনয়শিল্পীর নাম ছিল। রবিবার ছবিতে জয়া আহসানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি এর আগে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসোসিয়েশন ২০২০-এ সেরা সংগীত এবং ফিল্ম ক্রিটিকস গিল্ড অব ইন্ডিয়ার ক্রিটিকস চয়েস ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-এ সেরা পরিচালক ও গল্পকারের পুরস্কার জিতেছিল।

জয়া আহসান
ইনস্টাগ্রাম