আবার বিয়ে করে সংসার করতে চান মুনমুন

রাগ-ক্ষোভ, বিষাদময় মন নিয়ে ২০০৩ সালে বিয়ে করেই সিনেমাজগৎ থেকে দূরে সরে পড়েন মুনমুন। ছবি: সংগৃহীত

বিচ্ছেদের পরে ভালো আছেন বলে জানালেন চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী মুনমুন। এখন সন্তানদের নিয়েই তাঁর সুখের সংসার। গত বছরের জুলাই মাসে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সেই অতীতকে ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চান তিনি। মনের মতো গোছানো কোনো ভালো ছেলে পেলে এ বছর বা আগামী বছরের যেকোনো সময় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারেন তিনি।
গত বছর লকডাউন শুরু হলে মুনমুনের স্টেজ শো বন্ধ হয়ে যায়। দুই সন্তান নিয়ে অর্থসংকটে পড়েন তিনি। এ অভিনেত্রীর অভিযোগ, সংসারের এমন অবস্থা দেখে তাঁর স্বামী মোশাররফ হোসেন কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। সংসার খরচ এবং সন্তানকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের মান–অভিমানে তাঁদের সংসার ভাঙে। এরপর থেকে তিনি সন্তানদের নিয়ে আলাদা জীবন যাপন করছেন।

মুনমুন
সংগৃহীত

এ অভিনেত্রী জানান, এখন দুই সন্তান নিয়ে অনেক বেশি সুখে আছেন। সংসারে আর কোনো অশান্তি নেই। নিজেই কষ্টে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাবছেন নতুন করে সংসার করা নিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পরিকল্পনা আছে। জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। জীবন চলবে জীবনের মতো।’

এ অভিনেত্রী মনে করেন, তাঁর জীবনে যা ঘটেছে, সে রকম ঘটনা অনেক শিল্পীর জীবনেই ঘটে। তাঁর মতে, শিল্পীদের জীবনটা একটু এলোমেলোই হয়। এরপরও সব শিল্পীর মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন জীবনটাকে সাজিয়ে রাখার। বিয়েটা ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

এহতেশাম পরিচালিত ‘মৌমাছি’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় মুনমুনের। ছবি: সংগৃহীত
ছবি: ফেসবুক থেকে

মুনমুন জানান, দাম্পত্যজীবনে প্রথম সন্তান নেওয়া থেকেই সাবেক স্বামীর সঙ্গে কলহ শুরু হয়। মুনমুনের দাবি, তাঁর স্বামী চাননি সন্তান নিতে। সেই সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। মুনমুন বলেন, ‘আমার আগের সংসার থেকে সরে এসে এখন সুখী আছি।’ মুনমুন জানান, তাঁর আয়েই সংসার চলত। তিনি নিয়মিত স্টেজ শো করতেন। সেটা দিয়েই তাঁর পরিবারের খরচ চালাতেন। এখন জমানো টাকা দিয়েই কোনোমতে সন্তানদের নিয়ে চলছেন।
বিবাহবিচ্ছেদের পরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুনমুন। পরে তিনি সন্তানদের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত বদলান। কারণ, সন্তানদের মানুষ করার জন্য তাঁর অর্থের প্রয়োজন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি ‘আগুন আর কতটুকু পোড়ে’ ছবিতে অভিনয় করেন। এটিই ছিল শেষ অভিনয়। তাঁর হাতে তিনটি ছবির কাজ আছে।

ছবিগুলো অসমাপ্ত। জানালেন, সরকার যদি আবার মঞ্চে শো করার অনুমতি দেয়, তাহলে তিনি নিয়মিত সার্কাসে শো করবেন। সেই আয় দিয়ে হয়তো খেয়েপরে আরও ভালো থাকতে পারবেন। তিনি জানালেন, স্টেজ শো বন্ধ থাকায় অনেক কমেডিয়ান, নৃত্যশিল্পী, জাদুকর বেকার হয়ে পেশা পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।  

‘আগুন আর কতটুকু পোড়ে’ ছবির দৃশ্য
সংগৃহীত

এর আগে ২০০৩ সালে সিলেটের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে চলে যান মুনমুন। ২০০৬ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। দেশে ফিরে আবার বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন তিনি। যাত্রায় অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় হয় মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। ২০০৯ সালে তিনি বিয়ে করেন মোশাররফকে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাঁদের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে। সালমান ও যশ নামে তাঁদের দুই ছেলে আছে। তাদের বয়স যথাক্রমে ৮ ও ১০ বছর। দুজনই মায়ের সঙ্গে থাকে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ করতেন মুনমুন
সংগৃহীত

কাজে ফেরা প্রসঙ্গে জানালেন, এখন থেকে শৈল্পিক মানের ছবিতে তিনি বেশি অভিনয় করতে চান।

চট্টগ্রামের রাউজানের মেয়ে মুনমুন। বাবা সৈয়দ বজল আহমেদের চাকরিসূত্রে তাঁর জন্ম ইরাকে। ৭ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই থেকেছেন। এরপর তাঁর বাবা এসে নাটোরের সুগার মিলে চাকরিতে যোগ দেন। ওখানেই প্রথম স্কুলে ভর্তি হন মুনমুন। বছরখানেক পর চলে আসেন ঢাকার পল্টনে। ভর্তি হন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে।

চট্টগ্রামের রাউজানের মেয়ে মুনমুন
ছবি: ফেসবুক থেকে

শাবনাজ, শাবনূরদের দেখে সিনেমার নায়িকার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মুনমুন। একটা সময় তিনিও নায়িকা হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে ‘ও’ লেভেল শেষ করার পর পরিচিত এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় এহতেশামের সঙ্গে। এহতেশাম পরিচালিত ‘মৌমাছি’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে মুনমুনের। ‘টারজান কন্যা’ ছবি দিয়ে আলোচনায় আসেন। আর ‘রানী কেন ডাকাত’ ছবি তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এহতেশাম পরিচালিত ‘মৌমাছি’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে মুনমুনের
ছবি: ফেসবুক থেকে

তবে ভাগ্যটা যেন তাঁর সুপ্রসন্ন হয়নি। ছবিতে অভিনয় করেছেন ঠিকই, ব্যবসায়িক সফলতাও পেয়েছে তাঁর অভিনীত ছবিগুলো, কিন্তু দর্শকের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি নেতিবাচক। তাই তো রাগ-ক্ষোভ নিয়ে ২০০৩ সালে বিয়ে করেই সিনেমাজগৎ থেকে দূরে সরে পড়েন মুনমুন।