আমি তাকে ভালোবাসতাম, সেও আমাকে ভালোবাসত

ববিতাপ্রথম আলো
সকাল থেকেই মোবাইল বন্ধ! হোয়াটসঅ্যাপ আর ভাইবারেও পাওয়া যাচ্ছিল না। এসএমএস করার ঘণ্টা তিনেক পর বাংলাদেশ সময় সোয়া একটায় ফোন ব্যাক করলেন ববিতা। জন্মদিনকে উপলক্ষ করে শুরু হলো আলাপ।

প্রশ্ন :

আপনাকে কোনোভাবেই পাচ্ছিলাম না।

আমি তো কানাডায়, ১৬ জুলাই ছেলের কাছে এসেছি। দেড় বছর পর অনেক কষ্টে ভিসা পেয়েছি। ছেলের কাছে আসার জন্য কয়েক মাস ধরে মনটা ব্যাকুল ছিল।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন। এবার তো তাহলে জন্মদিন ছেলের কাছে কাটবে?

ধন্যবাদ। করোনাকালে গত বছর জন্মদিনে ছেলের মনটা খারাপ ছিল। সেও আসতে পারছিল না। মা-ছেলে মিলে এবার সুন্দর সময় কাটবে। ও তো সারপ্রাইজ দেওয়া শিখেছে, এবারও কিছু একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

ববিতা। ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

ছেলের সঙ্গে ঈদ কেমন কাটল?

ঈদের দিনও অফিস নিয়ে ব্যস্ত ছিল ছেলে। বাসায় বসে অনলাইনে অফিস করতে হয়। তবে মা-ছেলে কাছাকাছি ছিলাম বলে ভালো লাগাটা ছিল বেশি। ছেলেটাকে কত দিন সামনাসামনি দেখি না, আদর করি না। মাথায় হাত বোলাই না। নিজের হাতের রান্না খাওয়াই না। সব মিলিয়ে অস্থির ছিলাম। ঈদের সময়টায় মা-ছেলে মিলে সময় ভালো কেটেছে। ঢাকায় ঘরবন্দী সময় কাটাতে হয়েছে। কোথাও বের হতাম না। বাড়িতেই থাকতাম। পাশেই চম্পার বাসা, সেখানেও যেতাম না। সেও আসত না। আত্মীয়স্বজনও বাসায় আসত না।

প্রশ্ন :

কত দিন থাকবেন?

আমার ভিসা তো সাড়ে চার বছরের। বর্ডার খুলে দিলে কানাডা থেকে ইউএসএতে যাব। দুই ভাই ওখানে থাকে তো। ভাইদের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটাতে চাই।

প্রশ্ন :

কানাডায় এখন কেমন কাটছে?

আমরা আছি কিচেনার শহরে। এখানে তো সবকিছু নরমাল। মাস্ক পরে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। আমি প্রতিদিনই হাঁটতে বের হই। অনিকের সঙ্গে দোকানপাটে যাই। মুক্ত আকাশে স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছি।

তিন বোন ববিতা, সুচন্দা ও চম্পা
ছবি : প্রথম আলো

প্রশ্ন :

কানাডায় যাওয়ার আগে ঢাকায় সময় কাটত কীভাবে?

ভ্যাকসিন নেওয়া এবং ব্যাংকের কাজ ছাড়া বাইরে বের হতামই না। একেবারে বন্দী। ছাদে আমার বাগান ছিল। ওখানে ফুল, পাখি নিয়ে সময় কাটাতাম। ল্যাপটপে বসে পুরোনো ছবি দেখতাম।

প্রশ্ন :

জন্মদিনে ঢাকার কোন দিকটা মিস করবেন?

কয়েক বছর ধরে ডিসিআইআইয়ের (ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল) শুভেচ্ছাদূত হওয়ায় আমার কাছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আসত। তাদের রান্না করে খাওয়াতাম। ওরা আমাকে গান শোনাত, নেচে দেখাত। আমার জন্য নানা ধরনের উপহার আনত। এবার ওদের মিস করব। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের আমার অনুজ অনেকে স্বাভাবিক সময়ে বাসায় আসত, তাদেরও ভীষণভাবে মিস করব।

ববিতা। ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

এই বয়সে এসে জন্মদিন নিয়ে কী উপলব্ধি?

তেমন কিছুই না। আমার জন্য সৃষ্টিকর্তা যে বয়সটা নির্ধারণ করেছেন, তা থেকে একটি বছর কমে গেল, এটা মনে হয়। বাস্তবে তো জন্মদিন এলেই জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে ফেলছি, এরপরও আমরা উদ্‌যাপন করি। তবে ধুমধাম করে জন্মদিন কখনোই উদ্‌যাপন করিনি। আমি মনে করি, এত হইচই করার কিছু নেই। মনে হয়, জীবন একটাই, এখনো অনেক কিছু করার আছে। কী করতে পারলাম না—এসব নিয়ে ভাবি।

প্রশ্ন :

জীবনটাকে কীভাবে দেখেন?

সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক মানুষকে কোনো না কোনো যোগ্যতা দিয়েছেন। সময় থাকতে তার সদ্ব্যবহার করা উচিত। জীবনটা সাদামাটা না করে রঙিন করা উচিত। এমন কিছু কর্ম করে যাওয়া উচিত, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ মনে রাখেন। আমিও হয়তো চেষ্টা করেছি এমন কিছু কর্ম রেখে যেতে, যেগুলোর কারণে আমাকে মানুষ মনে রাখেন। জানি না কতটুকু কী করতে পেরেছি।

প্রশ্ন :

চলচ্চিত্রে আপনাদের মতো অগ্রজদের অনুপস্থিতি খুব টের পাওয়া যায়...

আমি তো আমৃত্যু অভিনয়ে থাকতে চাই। কিন্তু সেই ধরনের গল্প তো পাই না। মুগ্ধ করার মতো গল্পের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসেননি। একটা কথা কি, কোনো শিল্পীই এক জীবনে সবকিছু পেয়ে গেছেন, এটা হয় না। সব শিল্পীরই মনের মধ্যে আমৃত্যু অতৃপ্তি থাকবে। আমারও আছে। সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না। তবে কোনো পরিচালক নতুন কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কাছে আসেননি।

‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা।
সংগৃহীত।

প্রশ্ন :

কিন্তু অনেকে তো বলেন, আপনি অভিনয় করতে চান না...

আসলে এমন কথা কখনোই বলিনি।

প্রশ্ন :

মাঝে আপনার ছেলে অনিকের বিয়ের কথা শুনেছিলাম ও তো এখন চাকরি করছে।

বিয়ের ব্যাপারটা ওর ওপরই ছেড়ে দিছি। আমারও ছেলের বউয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করে। তবে কোনো চাপ দিতে চাই না।

ছেলে অনীকের সঙ্গে ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শেষ প্রশ্ন, কারও সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কি?

জাফর ইকবালকে ভীষণ পছন্দ করতাম। খুবই স্মার্ট, গুড লুকিং। আমি তাকে ভালোবাসতাম, সেও আমাকে ভালোবাসত। শুটিংয়ের অবসরে অথবা নানা আড্ডায় আমাকে গান শেখাত। আমরা দুজন গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গানের চর্চা করতাম

ববিতা ও জাফর ইকবাল
ছবি: সংগৃহীত