‘উড়োজাহাজে’ চেপে এলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বেশ খানিকটা জমে উঠেছে দ্বিতীয় দিন। করোনায় করোনায় ছন্দ পতনের শহরে খানিকটা হলেও স্বস্তির সুবাতাস এনেছে এই উৎসব। গত ১৬ জানুয়ারি উৎসবের প্রথম দিনের সকালেও ঘুম ভেঙে স্কুলপড়ুয়া শিশুরা এসেছে সিনেমা দেখতে। এসেছে মা আর বাবার হাত ধরে অথবা বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফ্রেঞ্চ সিনেমা স্প্রিং ব্লসম দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসব। বিকেল পাঁচটায় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে চলেছে ‘পিঙ্কি এলি’। পিঙ্কি নামের আট মাসের একটি শিশু হারিয়ে যায়। তাকে পায় এক নিঃসন্তান দম্পতি। হারানো শিশুকে মরিয়া হয়ে খোঁজে তার পরিবার। এদিকে ওই মেথর দম্পতিও বাচ্চাটিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চায় শহর ছেড়ে। এই চোর–পুলিশের খেলায় এগিয়ে যায় গল্প। এগিয়ে যায় ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।

‘উড়োজাহাজ' সিনেমার একটি দৃশ্য
সংগৃহীত

সকাল সাড়ে ১০টা আর বেলা ১টার সব শো ফ্রি। বেলা ৩টা থেকে টিকিট কেটে দেখতে হয় সিনেমা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন পাবলিক লাইব্রেরি অডিটরিয়ামে দেখলাম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের নতুন সিনেমা ‘উড়োজাহাজ’। শারীরিকভাবে উৎসবে উপস্থিত থাকতে পারেননি বটে ভারতের এই গুণী বাঙালি নির্মাতা। তবে ‘উড়োজাহাজ’ চেপে ঠিকই ছিলেন ঢাকার এই উৎসবে। পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনের অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়, করোনা পরিস্থিতিতে হলের একটি করে সিট ফাঁকা রাখা হয়েছে।

‘উড়োজাহাজ’ সিনেমায় চন্দন রায় সান্যাল
সিনেমার দৃশ্য

দর্শকসংখ্যা ২০ জনের বেশি হবে না। প্রজেক্টরের এমন অবস্থা যে পর্দার দিনের বেলাকেও মনে হয় পুরোপুরি আলো না ফোটা ভোর। সাউন্ড কিছুটা শোনা যায়, বাকিটা বুঝে নিতে হয় নিজের আন্দাজে। তবুও দর্শক ডুবে যাবেন সিনেমায়। আর সিনেমা শেষ না হওয়ার আগপর্যন্ত আর বের হওয়ার উপায় নেই। এক শিল্পীমন নিয়ে পর্দায় চন্দন রায় সান্যাল উড়োজাহাজ উড়িয়ে আকাশে ভেসে চলে যেতেন কোথায় যেন। কিন্তু মনের আরেক খণ্ড পড়ে থাকে স্ত্রী পার্নো মিত্রর কাছে। এই দোটানার ভেতরেই সেই শিল্পীসত্তায় আঘাত হানে দেশের সরকার আর প্রশাসন। সমস্ত শিকল কেটে সেই শিল্পী চায় মুক্ত হতে।

আজ চলেছে সপ্তম ‘আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’
সংগৃহীত

ওদিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে গতকাল চলেছে সপ্তম ‘আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনলাইনে যোগ দিয়েছিলেন টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক হান্না ফিশার ও ফ্রান্সের চলচ্চিত্র উৎসব ব্যবস্থাপক মেরাল মেলিকা দুরান। বিশ্বের বড় বড় উৎসব যেখানে বন্ধ আছে, এমন পরিস্থিতিতে এই উৎসবের আয়োজন করায় হান্না প্রশংসা করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা মেহজাদ গালিব সূর্যদীঘল বাড়ি, সূর্যকন্যা ও গোলাপী এখন ট্রেনে এই চলচ্চিত্রসমূহে নারীর ভিন্নধর্মী উপস্থাপন নিয়ে আলোচনা করেন। এই পর্বে আরও ছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক সাদিয়া খালিদ রীতি। অনলাইনে যুক্ত হন দক্ষিণ কোরীয় চলচ্চিত্র সংগঠক সু লি দিলবার।

আজ চলেছে সপ্তম ‘আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’
সংগৃহীত

দিনের দ্বিতীয় পর্বে ইরানি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক ইলাহি নোবাখত ‘সিনেমার মধ্য দিয়ে আমরা সত্য বলি—ইরানি সিনেমায় নারী’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রবদ্ধের ওপর আলোচনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারহা কবির, নির্মাতা চৈতালী সমাদ্দার আর অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। দিনের শেষ প্রবন্ধ পাঠ করেন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার গবেষক দেবযানী হালদার।

ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বরাবরের মতো থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ও উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ। তবে উৎসবে এবারই প্রথম যুক্ত হচ্ছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ও ‘ট্রিবিউট’ নামে আরও দুটি নতুন বিভাগ।

এবারের উৎসবে ৭৩টি দেশের ২২৬টি চলচ্চিত্র অংশগ্রহণ করছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন মঞ্চ (মুক্তমঞ্চ), স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা ও সীমান্ত স্কয়ার শাখায় সিনেমাগুলো দেখা যাবে। উৎসব চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।