এখনো প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই নাঈম শাবনাজকে বলেন, ভালো আছ?
‘শুভ বিবাহবার্ষিকী।’
‘ধন্যবাদ।’
‘দেখতে দেখতে ২৭ বছর কেটে গেল...’
‘না ভাই, দেখতে দেখতে কাটেনি। সময়গুলো সহজ ছিল না। অনেক আপস অ্যান্ড ডাউন ছিল।’
এরপরই শাবনাজের মুখে সেই চিরচেনা হাসি। বহুবার সিনেমার পর্দায় শোনা। নাঈম–শাবনাজের সংসার আজ ২৮ বছরে পড়ল। সবকিছু ছাপিয়ে সুখে আছেন, সেটাই প্রমাণ করে তাঁর হাসি। শাবনাজ বলেন, ‘বাইরে থেকে আমাদের জীবন যতটা সহজ, নিস্তরঙ্গ মনে হয়, বাস্তবে তেমনটি নয়।’
কী কারণে সময়গুলো কঠিন ছিল? শাবনাজ বলেন, ‘আমরা দুজন দুই রকমভাবে বেড়ে উঠেছি। আমাদের দুই পরিবারের খাবারের ধরনও ছিল দুই রকম। আমরা প্রচণ্ড মাছ খেতে পছন্দ করতাম। তারা গোশত খেতে পছন্দ করত। আমাদের মানসিকতা অ্যাডজাস্ট করতে হয়েছে। দুইটা প্লেট পাশাপাশি রাখলে শব্দ হবেই। আমাদের মধ্যে সেভাবে ঝগড়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে মিল হয়ে গেছে। ২৭ বছরের সংসারে কোনো কিছুই হয়নি, আমরা সব সময়ই হাসিখুশি ছিলাম, এটা বললে অবাস্তব বলা হবে। একটা সাধারণ পরিবারের মতোই সুখ–দুঃখ মিলিয়েই দিনগুলো পার করেছি। অনেক সময় অর্থনৈতিক অবস্থাও এক রকম ছিল না। ছবি ছেড়ে দেওয়ার পরে কিছুটা খারাপ সময় পার করেছি। তবে কখনো আমরা আশাহত হইনি। সংসার নিয়ে আমাদের টিকে থাকার চেষ্টা সব সময় ছিল। ভালো আছি, এটাই আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।’
সংসারটাকে কেউ কখনো একার মনে করেননি। যা কিছু করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানে দুজনেরই মতামত ছিল। তাঁদের মধ্যে কখনোই কোনো ডমিনেটিং ভাব ছিল না। শাবনাজ বলেন, ‘আমাদের দুজনেরই স্যাক্রিফাইস ছিল। আমরা দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করি। যে কারণে আমরা এখনো অনেক ভালো আছি। সত্য বলতে কি, আমি অনেকটাই উদাসীন। কোনো একটা কাজ করলে, সেটা নিয়েই পড়ে থাকি। অন্যদিকটা মাথায় থাকে না। সেই দিকটা নাঈম সামলায়। সে আমাকে প্রপারলি বুঝতে পারে। আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো। আমার প্রচুর রাগ–অভিমান। সে–ই (নাঈম) আমার রাগ ভাঙায়, সরি বলে। অনেক সময় আমারও দোষ থাকত। তখন আমাদের মেয়েরা বলত, আম্মু, তুমি বাবাকে সরি বলো। আমি কেন যেন বলতে পারতাম না।’ প্রথম আলোতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নাঈম ভাই সব সময় সরি বলেন? ‘হ্যাঁ, (হাসি), এখন আমিও সরি বলা শিখেছি। ভুল হলেই সরি বলি। এমনও হয়, নাঈমই আমাকে সরি বলার সুযোগ দেয় না।’
প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ দিয়েই জনপ্রিয় এক জুটি হয়ে ওঠেন শাবনাজ-নাঈম। অন্যদিকে নায়ক-নায়িকার ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার জায়গাটাও পোক্ত হতে থাকে। ‘বিষের বাঁশি’ ছবি করার সময়ে এসে প্রেমে জড়ান দুজন। ১৯৯৪ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন। রোমান্টিক হিরোখ্যাত নাঈম বাস্তবে কতটা ভালোবাসেন শাবনাজকে? ‘নাঈম আমাকে অতিরিক্ত কেয়ার করে। এখনো প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নাঈম প্রথম আমাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি ভালো আছ, তোমার শারীর কেমন? কখনো মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে নাঈম চুপি চুপি শব্দ না করে দরজা খোলে। তার চেষ্টা থাকে, আমার যেন ঘুম না ভাঙে। ওই সময় সে পড়াশোনা করে, হাঁটাহাঁটি করে, কখনো মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে। কখনো বাইরে আমাদের ছেড়ে কিছু খায় না। আমাদের সবার জন্য নিয়ে আসে। তার সব কর্মকাণ্ডে বুঝতে পারি, আমার প্রতি তার প্রচণ্ড কেয়ার। অনেকেই জানতে চান, আমাদের সংসার টিকে আছে কীভাবে? তার কারণ, আমার সবকিছুর ওপর একে অন্যের ভালো বন্ধু হতে পেরেছি। যা–ই হোক, আমরা দুজন শেয়ার করি।’
বিশেষ দিনটা নাঈম–শাবনাজের ভোলার কোনো উপায় থাকে না। অনেক আগে থেকেই দুই রাজকন্যা, বড় মেয়ে নামিরা ও ছোট মেয়ে মাহাদিয়া বারবার মা–বাবাকে মনে করিয়ে দেন। আর বিশেষ এই দিনে নাঈম এখনো শাবনাজের জন্য ফুল আর পছন্দের সুগন্ধি উপহার দিতে ভোলেন না। প্রতিবারের মতো দিনটি ঘিরে কিছু পরিকল্পনা করলেও এবার তেমন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন, জানতে চাইলে শাবনাজ বলেন, ‘নাঈমের ঠান্ডা লেগেছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে ফোনে কথা বলতে নিষেধ করছি।’