ওলো সই, ওলো সই, তোদের এত কী বলিবার আছে ভেবে অবাক হই

আমরা যে নায়িকা সেটা ভুলেই যাই
ছবি: ফেসবুক

‘আমরা যে নায়িকা সেটা ভুলেই যাই। ঠিক স্কুল লাইফের বন্ধুদের মতো একসঙ্গে আড্ডা দিই। এই আড্ডার সময়ে তারা দুজনই আমাকে নিয়ে খুব ভয়ে থাকে। কারণ তাদের কিছু জোকস শুনে আমার প্রচণ্ড হাসি পায়। তখন তাদের মারতে থাকি। তারা উঠে দৌড়ে পালায়। ইতিমধ্যেই বহুত কিল–ঘুষি খেয়েছে তারা,’ হাসতে হাসতে বললেন চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। পাঠকের মনে নিশ্চয় প্রশ্ন, এই ‘তারা’টা কারা। তাঁরা আর কেউ নন, ঢালিউডের দুই অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি ও নুসরাত ফারিয়া।

বিদ্যা সিনহা মিম
ছবি: ফেসবুক

মিম বলেন, ‘আমরা প্রায় এক যুগ ধরে একে অন্যকে চিনি। তবে এত দিন খুব বেশি কাছে আসার বা সেভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। শুধু হাই, হ্যালো সম্পর্ক ছিল। আগে পরস্পরকে তুমি বলে সম্বোধন করতাম। এখন এতটাই কাছের বন্ধু যে সবাইকে নাম ধরে ডাকি।’ এই সম্পর্কের শুরুটা কীভাবে? ‘আমরা তিন মাস আগে একসঙ্গে ভোলায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটি শো ছিল। হেলিকপ্টারে পাশাপাশি বসেছিলাম। এক ঘণ্টার আড্ডায় বুঝতে পারি, পছন্দের অনেক বিষয়েই আমাদের মিল। আমাদের সখ্য বাড়ে। পরে আরও কিছু প্রোগ্রাম করি আমরা। তারপর থেকেই আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।’

‘আমরা যে যার জায়গায় সবাই আন্তরিক। কিন্তু দূরে থাকলে এটা বোঝা যায় না। মনে হয় শত্রু শত্রু ভাব, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণ কাজ করে। কিন্তু এটা ঠিক না। ফারিয়া যে এত ভালো মানুষ ওর সঙ্গে না মিশলে বুঝতাম না। দেখে মুডি মনে হলেও ভেতরের মানুষটা খুব নরম। আর মিমকে মনে হয় বলিউডের নায়িকা। মিশুক মিমকে ব্যবহার করা হলো না,’ আফসোস করে বলেন মাহিয়া মাহি।

মাহিয়া মাহি
ছবি: ফেসবুক

মন খুলে সহকর্মীদের প্রশংসা করলেন মাহিয়া মাহি। ‘মিম কোনো দিক দিয়েই বলিউডের চেয়ে কম না। তার অভিনয় খুবই সুন্দর। আবার নুসরাত ফারিয়াকে দেখে মনে হয়, আমাদের দেশে সুইট, স্মার্ট একটা মেয়ে আছে যার কথা, আচার–আচরণ থেকে শুরু করে নিজেকে প্রেজেন্ট করার ভঙ্গি—সবই দারুণ। ফারিয়ার আশিকী গানের নাচ দেখে মনে হয়েছে, ১৪ বছর সাধনা করলেও এমন নাচ আমি পারব না।’

চলচ্চিত্রে কাজ করেন বলে অনেকেই তাঁদের মনে করেন প্রতিদ্বন্দ্বী। সে জন্য কিছুটা দূরত্ব সব সময় থাকে। সেভাবে কাছে আসার সুযোগ হয় না। এবার কাছ থেকে মেশার পরে মাহি বুঝেছেন তাঁরা সবাই খুব আন্তরিক। মাহি বলেন, ‘মিমকে দেখে মনে হতো মুডি। বেশি ভাব নেয়। ফারিয়াকে ভেবেছিলাম একটু অন্য রকম। কিন্তু আসলেই আমরা কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আচরণ চাই না। সবারই ভেতরের মনটা খুবই নরম। তবে ফারিয়া ওকালতি করে তো। ও শুধু জেরা করে। প্রশ্ন করে। হ্যাঁ না বলে সব কথা বের করে নেয়। আর মিম ভদ্র মেয়ে। একটাই সমস্যা শুধু—মারে। মাঝে মাঝে মনে হয়, মিমকে সেভাবে ইন্ডাস্ট্রি মূল্যায়ন করেনি।’

নুসরাত ফারিয়া
ছবি: ফেসবুক

তিনজনের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া বয়সে ছোট। তবে ছোট বলে আলাদা কোনো সুবিধা পান না। কারণ তাঁকে কেউ ছোট মনেই করে না। বন্ধু হলে যা হয় আরকি। এই তিন নায়িকা সম্প্রতি ফেরদৌসকে চমকে দিতে তাঁর বাসায় হাজির হন। সবাই সেদিন গান গেয়েছিলেন।

সেদিনও মার খাওয়ার ভয়ে মিমের কাছ থেকে দূরে ছিলেন ফারিয়া। আর আইনজীবীদের মতো প্রশ্ন করা এখন তাঁর অভ্যাস হয়ে গেছে, স্বীকার করলেন ফারিয়া। তিনি মনে করেন, তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কাজের বাইরে তাঁদের সহকর্মীদের আলাদা জীবন আছে। সেখানে অনেকের মধ্যেই দূরত্ব থাকে। অনেক সময় ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘একই অঙ্গনে আমরা কাজ করি। আমাদের ক্যামেরার পেছনে বন্ধুত্ব থাকাটা খুবই দরকার। আমরাও তো মানুষ। তার ওপর মেয়ে। আমাদের মধ্যে ভুলেও সিনেমা নিয়ে কথা হয় না। ব্যক্তিগত জীবনে একে অন্যের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এই সম্পর্ক তৈরির পেছনের মানুষ ফেরদৌস আহমেদ ভাই। তাঁকে ধন্যবাদ। কীভাবে নিজেদের মধ্যে এক থাকতে হয়, ভাইয়ের কাছে শিখলাম।’

তিন মাস আগে একসঙ্গে ভোলায় যাওয়ার সময় তাদের সখ্যতা বাড়ে। সেদিন তারকারা এক ফ্রেমে
ছবি: ফেসবুক

মাহি, মিম, ফারিয়া তিন জনই জানালেন, ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের পর থেকেই এই অভিনেতা তাদের বলতেন, নিজেদের মধ্য যোগাযোগ বাড়াতে। সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকলে নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যক্তিগত জীবনেও তারা ভালো বন্ধুর মতো পাশে থাকেন। তবে ব্যস্ততার কারণেই এই সম্পর্ক এতদিন গড়ে ওঠে নাই। এখন তারা তিনজন নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন।

মিম ও মাহিকে এককথায় কী বলবেন? হেসে ফারিয়া বলেন, ‘মিম খালি মারে, এই জন্য ওর পাশে বসলে ভয়ে থাকি। তবে সে ইমোশনাল মেয়ে। আর মাহি খুবই কিউট। কিন্তু বোকা। কথার মাঝে হুট করে বলবে, কী হইছে আবার বলো। তার জন্য প্রথম থেকে শুরু করতে হয়।’ প্রথমবারের মতো আগামী ঈদের একটি টেলিভিশন অনুন্ঠানে তাদের একসঙ্গে দেখা যাবে।

মিম ও মাহি পাশাপাশি বসে বুঝতে পারেন তাদের মধ্যে অনেক মিল
ছবি: ফেসবুক