করোনায় উৎসবেও ‘সফল’ ঢাকা

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত ছবিগুলোর তালিকায় আছে এই ছবিগুলোও। কোলাজ

বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে এবার ছিল নানা রকম শঙ্কা। আদৌ কি বসবে সেসব আসর! উৎসবের যে আসরগুলো বসেছে, সেগুলোর বেশির ভাগের পরিসর ছিল সীমিত। বাংলাদেশ সেই দিক থেকে পিছিয়ে পড়েনি। করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশি অতিথিরা এ বছর আসতে পারেননি। এ ছাড়া বলা চলে ‘সফল’ভাবে শেষ করা গেছে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।

উৎসবে ১০টি শাখায় বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের দুই শতাধিক সিনেমা দেখানো হয়েছে রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন মিলনায়তনে। ছিল অনলাইনেও ছবি দেখার ব্যবস্থা। গতকাল রোববার ছিল উৎসবের শেষ দিন। কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ঊনপঞ্চাশ বাতাস ছবিটি দেখতে এসেছিলেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দর্শক। লকডাউনে দীর্ঘদিন দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ ছিল। যখন সিনেমা হল খোলা হয়, তখন এই ছবিই হলে দর্শক টেনে নিয়েছিল।

সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কারের ট্রফি তুলে দিচ্ছেন ম হামিদ। ছবি : সংগৃহীত

বিকেলে অতিথিদের উপস্থিতিতে সমাপনী অনুষ্ঠানে উৎসবের সেরা ছবিগুলোকে দেওয়া হয়েছে পুরস্কার। এদিন বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বিশ্ববাজারে এ দেশের চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা করবে। চলচ্চিত্রকে সময় ও সভ্যতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, নিশ্চয়ই করোনা নিয়েও অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হবে। আর সেগুলো এই সময়কে, ইতিহাসকে ধরে রাখবে।

আসরে সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে দেশ–বিদেশের একগুচ্ছ সিনেমা। শিশুতোষ ছবি শাখায় বেস্ট জুভেনাইল অডিয়েন্স বাদল রহমান অ্যাওর্য়াড জিতেছে রাশিয়ার তাগানক টিম, বাংলাদেশ প্যানারোমায় বেস্ট অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে গণ্ডি এবং আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার জিতেছে ঊনপঞ্চাশ বাতাস। নারী নির্মাতা শাখায় সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য হয়েছে ইরানের তিরিশকো, বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে সুইডেনের ওয়ে হোম, সেরা তথ্যচিত্র রাশিয়া–সিরিয়ার যৌথ প্রযোজনার ছবি ফরবিডেন চিলড্রেন। এ শাখায় সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন নরওয়ে–ইতালি যৌথ প্রযোজনার ছবি দ্য লিটল ব্ল্যাক ড্রেস–এর পরিচালক মার্গারিদা পাইভা। স্পিরিচুয়াল ফিল্ম শাখায় সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি সাইপ্রাসের সিটিজেন, সেরা তথ্যচিত্র ইরান–নরওয়ে প্রযোজিত ছবি সানলেস শ্যাডোজ। এশিয়ান কম্পিটিশন শাখায় ইরানের কেয়ারলেস ক্রাইম ছবির জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার পেয়েছেন নাসিম আহমাদপুর ও শারাম মকরিফর, মঙ্গোলিয়ার দ্য ওম্যান ছবির জন্য সেরা চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার পেয়েছেন গলবদরাখ বাতমাঙ্খ, কাজাখস্তানের মারিয়াম ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মেরুয়ার্ত সাবাসিনোভা, তুরস্কের ছবি নাইন পয়েন্ট সেভেন্টিফাইভ–এর জন্য নেজাত ইসলার পেয়েছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার, আজারবাইজান–রাশিয়া প্রযোজিত ছবি ফারিদার জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন সেনিয়াল লাগুতিনা আর সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে কিরগিজস্তানের দ্য রোড টু ইডেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ছিল নৃত্য

করোনাকাল ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নানামুখী অবক্ষয়ের দিনে কতটা সফল এবারের উৎসব? ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘সংকটময় সময়ে আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের সাহস ও মানসিক শক্তি যে আমাদের আছে, সেটা এবার প্রমাণিত হয়েছে। এবারের উৎসব যেভাবে হয়েছে, আমি মনে করি, সেটা ভালোই হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, সামনে আমরা আরও ভালো করতে পারব।’