করোনায় বিধ্বস্ত, তবু ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

চলতি বছর ছিল দেশীয় ছবির ভরাডুবিকাল

চলচ্চিত্রের জন্য এ বছর তেমন ভালো ছিল না। বাংলাদেশে সিনেমার নির্মাণ, মুক্তি ও ব্যবসায়িক সাফল্য ক্রমেই কমে আসছিল। এ বছর পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল আরও প্রতিকূল। তার ওপর মহামারির কারণে সাত মাস প্রেক্ষাগৃহ ছিল বন্ধ। এর মধ্যেও মুক্তি পেয়েছে ১৬টি সিনেমা।

এ বছর নতুন ছবির নাম নিবন্ধন কম হয়েছে। মুক্তি পেয়েছে কম, ব্যবসাও হয়েছে কম। তবে শুটিং অসমাপ্ত ও মুক্তির জন্য প্রস্তুত ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছর ছিল দেশীয় ছবির ভরাডুবিকাল। যে কটি ছবি মুক্তি পেয়েছে, তার প্রায় কোনোটিই তেমন আলোচিত বা ততটা দর্শকপ্রিয় হয়নি। এ কারণে সবাই মূলত দায়ী করছেন মহামারিকে। পাশাপাশি তাঁদের আশা, করোনাকাল কেটে গেলে দেশীয় চলচ্চিত্র কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

মহামারির আগে মুক্তি পায় জয় নগরের জমিদার, গণ্ডি, বীর, হৃদয়জুড়ে, শাহেনশাহ, হলুদবনি, চল যাই, আমার মা ছবিগুলো। মার্চে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে পরে অক্টোবরে খোলার পর পর্যায়ক্রমে মুক্তি পায় সাহসী হিরো আলম, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, বিশ্বসুন্দরী, রূপসা নদীর বাঁকে, একজন মহান নেতা, গোর, আমি তোমার রাজা তুমি আমার রানি ছবিগুলো।

গত বছর মুক্তি পেয়েছিল ৩৮টি ছবি, এ বছর ১৬টি। বছরের শুরুতে, অর্থাৎ মহামারির আগে মুক্তি পায় জয় নগরের জমিদার, গণ্ডি, বীর, হৃদয়জুড়ে, শাহেনশাহ, হলুদবনি, চল যাই, আমার মা ছবিগুলো। সাধারণ আলোচনায় ছিল গণ্ডি, বীর, শাহেনশাহ ছবিগুলো। মোটামুটি ব্যবসা করেছে শাকিব-বুবলী অভিনীত বীর ছবিটি। মার্চে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে পরে অক্টোবরে খোলার পর পর্যায়ক্রমে মুক্তি পায় সাহসী হিরো আলম, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, বিশ্বসুন্দরী, রূপসা নদীর বাঁকে, একজন মহান নেতা, গোর, আমি তোমার রাজা তুমি আমার রানি ছবিগুলো। এ ছবিগুলোর মধ্যে ইমতিয়াজ বর্ষণ ও শার্লিন ফারজানা অভিনীত ঊনপঞ্চাশ বাতাস ও সিয়াম-পরীমনি অভিনীত বিশ্বসুন্দরী ছবিটি কিছুটা উষ্ণতা ছড়িয়েছে।

এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন বড় প্রযোজক বড় বাজেট নিয়ে ছবি নির্মাণে উত্সাহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ কাজও শুরু করেছেন। তাঁরা নিয়মিত ছবি নির্মাণ শুরু করলেই দেশীয় চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে।
কাজী হায়াৎ

এ বছর নতুন ছবির নাম নিবন্ধন করা হয়েছে বেশ কম। ২০১৯ সালে পরিচালক সমিতিতে নতুন ১২৫টি ছবির নাম নিবন্ধন করা হয়। ২০২০ সালে নিবন্ধন করা হয় ১১০টি ছবির নাম। এ বছর চলচ্চিত্রের হালহকিকত নিয়ে জ্যেষ্ঠ পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র জীবন বা অর্থনীতির বাইরের কিছু নয়। বিশ্ব চলচ্চিত্রও অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা বেশি খারাপ।’ তবে সামনে দেশীয় চলচ্চিত্রে সুফল আসবে বলে আশাবাদী এই পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন বড় প্রযোজক বড় বাজেট নিয়ে ছবি নির্মাণে উত্সাহ দেখিয়েছেন। কেউ কেউ কাজও শুরু করেছেন। তাঁরা নিয়মিত ছবি নির্মাণ শুরু করলেই দেশীয় চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে।’ চলচ্চিত্র সমালোচক মতিন রহমান বলেন, ‘যে ছবিগুলো মুক্তির তালিকায় আছে, প্রযোজকেরা সেগুলো আগামী বছরও মুক্তি দেবেন কি না, সন্দেহ আছে। কারণ, দর্শক তত দিনে হলমুখী হবেন কি না, বলা মুশকিল। এ কারণে আগামী বছর চলচ্চিত্র নিয়ে যেমন আশা আছে, তেমনি আছে উত্কণ্ঠাও।’ প্রযোজক-পরিবেশক নেতা কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, ‘চলচ্চিত্র নিয়ে আমি হতাশ। এখনো আশায় আছি, স্বপ্ন দেখছি।’