কলকাতায় অবহেলিত বাংলাদেশের ছবি

সম্রাট ছবির দৃশ্য
সম্রাট ছবির দৃশ্য

চলচ্চিত্র বিনিময় চুক্তিতে গত সাত বছরে ভারতের কলকাতায় প্রায় ১৬টি বাংলা চলচ্চিত্র রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে রাজাবাবু, ছুঁয়ে দিলে মন, তুমি আমার মনের মানুষ, প্রাণের মানুষ, অনন্ত ভালোবাসা, সম্রাট, আমি তোমার হতে চাই, রাজা ৪২০, মাস্তানি প্রভৃতি। এই ছবিগুলো কলকাতায় মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় বাংলা ছবিগুলো এখানে এনে বিভিন্ন সময় সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

সবশেষ আমি তোমার হতে চাই ছবিটি বাংলাদেশের খান ব্রাদার্স কলকাতার এসকে মুভিজের কাছে রপ্তানি করে টালিউডের পোস্ত এ দেশে আমদানি করে। পোস্ত এখানকার অর্ধশতাধিক হলে মুক্তি পেলেও আমি তোমার হতে চাই কলকাতায় মাত্র সাতটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধনুকা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার তিতাস কথাচিত্র মাস্তানি ছবিটি রপ্তানির বিপরীতে কলকাতা থেকে বলো দুগ্গা মাঈকি ছবিটি এনে দেশের ৭৪টি হলে মুক্তি দিয়েছে। অথচ মাস্তানি ছবিটি কলকাতার কয়টি হলে মুক্তি পেল, তার কোনো তথ্য নেই তিতাস কথাচিত্রের কর্ণধার আবুল কালামের কাছে। ওই প্রযোজক বলেন, ‘আমি মাস্তানি কলকাতায় বিক্রি করে দিয়েছি। কোথায় চলল, না চলল, তার খবর আমার রাখার কথা নয়।’

এখনকার চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশে একধরনের সিনেমা ব্যবসায়ী মাত্র ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বাংলাদেশের ছবি কলকাতায় রপ্তানি করছেন। ওখান থেকে ভালো ছবিগুলো এনে ব্যবসার পাঁয়তারা করছেন। অথচ যে ছবিগুলো ওখানে পাঠানো হচ্ছে, সেগুলোর ভালো ব্যবসার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে বাংলাদেশি ছবির বাজারের বিস্তৃতি।

বিষয়টিকে এখনকার সিনেমা ব্যবসায়ীদের একধরনের প্রতারণা বলে মনে করেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। এই প্রযোজক বলেন, ‘নামমাত্র মূল্যে খুঁজে খুঁজে নিম্নমানের ছবিগুলো ওখানে (ভারত) পাঠানো হচ্ছে। বিনিময়ে ওখানকার ভালো ছবি এনে ব্যবসা করার চিন্তা এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে দেশের বাইরে আমাদের ছবির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুধু ব্যবসায়ী স্বার্থ নয়, আমাদের সিনেমার স্বার্থও দেখতে হবে।’ ছবি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ও প্রযোজক ইফতেখারউদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘যে ছবিগুলো পাঠানো হচ্ছে, সেগুলো মানসম্মত নয় ও পুরোনো। দেশের বাইরে ছবির বাজার তৈরি করতে হলে অবশ্যই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত মানসম্পন্ন ছবি পাঠাতে হবে।’ তাহলে কলকাতার ওই সব প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সব ছবি বাংলাদেশ থেকে কিনছে কেন? প্রযোজক নওশাদ বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি একই মূল্যে তাদের দেশের স্যাটেলাইট স্বত্বও কিনছে কলকাতার প্রতিষ্ঠানগুলো। চ্যানেল থেকেই ছবি আমদানির মূল্য উঠে আসছে।’

অভিমান ছবির পোস্টার
অভিমান ছবির পোস্টার

ছবি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত প্রযোজক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া বললেন একটু ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘এর আগে সম্রাট ছবির বিপরীতে কলকাতা থেকে অভিমান ছবিটি আনা হয়েছিল। সম্রাট ছবিটি কলকাতার পাঁচটি হলে মুক্তির প্রথম দিনই নেমে যায়।’ তবে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ভালো ছবি রপ্তানি করে কলকাতায় বাংলাদেশের ছবির বাজার তৈরি হতে পারে বলে মত দিলেন এই প্রযোজকও। কিবরিয়া  বলেন, ‘সত্তা, রাজনীতি, ঢাকা অ্যাটাক—এই তিনটি ছবি রপ্তানির জন্য চেয়েছি। কিন্তু প্রযোজকেরা দিচ্ছেন না।’

কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশি ছবি একাধিক হলে মুক্তি না পাওয়া প্রসঙ্গে সেখানকার আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অজয় এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার দত্ত বাবু কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের শিল্পীরা এখানো পরিচিত হয়ে ওঠেননি। ফলে ছবিগুলো দর্শক পাচ্ছে না। তাই লোকসানের ভয়ে একাধিক হলে মুক্তিও দেওয়া যাচ্ছে না।’