এমন দিনও গেছে, কষ্ট পেয়ে বাথরুমে গিয়ে কেঁদেছি
মুক্তি প্রতিক্ষীত ৬টি ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে অভিনেতা রাশেদ মামুন অপুকে। সম্প্রতি তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ‘দামাল’ নামের এক ছবিতে। টেলিভিশন নাটক থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয়, ক্যারিয়ার ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি।
প্রশ্ন :
ঢাকায় এসেছিলেন নির্মাতা হতে। অভিনেতা হয়ে গেলেন কীভাবে?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমি থিয়েটার করেছি। ঢাকায় এসে গিয়াস উদ্দীন সেলিমের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর নিজে চারটি নাটক পরিচালনা করি। পরে আমার বন্ধু পরিচালক নোমান রবিনের ‘সিটিবাস’ নাটকে তোতা মিয়া চরিত্রে অভিনয় করি। চরিত্রটি দর্শক পছন্দ করে ফেলেন। আমার তখন থেকেই শুরু।
প্রশ্ন :
এই অঙ্গনে কী করে এলেন?
আমার মা–বাবা দুজনই ব্যাংকার। তবে তাঁরা সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। আমার ঘুম ভাঙত বাবার আবৃত্তি শুনে, মা এবং বোনের গানের রেওয়াজ শুনে। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রিহার্সাল হতো বাড়িতে। পরিবেশই হয়তো আমাকে এখানে টেনে এনেছে।
প্রশ্ন :
বেশ কিছু সিনেমায় আপনি খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনি কি খলনায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতে চান?
অভিনয়কে আমি অভিনয় হিসেবেই দেখি। ‘নবাব এলএলবি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে আমি খলনায়ক। তা ছাড়া ‘বর্ডার’, ‘পরান’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘গাঙচিল’ ছবিতেও খলনায়ক। সম্প্রতি যুক্ত হলাম ‘দামাল’ ছবিতে। সেখানেও নির্মাতা রায়হান রাফী আমাকে খলনায়ক হিসেবে চেয়েছেন। সুযোগ পেলে নিয়মিত খল চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। চরিত্রের ভিন্নতা আমার ভালো লাগে।
প্রশ্ন :
বিরূপ কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
দেখা গেল নির্মাতা বলছেন আমিই প্রধান চরিত্রের অভিনেতা। শুটিংয়ে গিয়ে শুনি নায়িকা আমার বিপরীতে কাজ করতে চাচ্ছেন না। অনেক সময় দেখেছি, কিছু কো-আর্টিস্ট আমাকে ঠিকমতো কাজ করতে দেননি। অনেক সময় আমার ডায়ালগ ও দৃশ্য কেটে ফেলা হতো। অনেক সময় চরিত্র কমিয়ে ছোট করে ফেলা হতো। এ জন্য কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তবে বিনোদন অঙ্গনে সুস্থ চর্চা থাকা দরকার।
প্রশ্ন :
এসব ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন?
অনেক সময় কো–আর্টিস্ট আমাকে গালাগালিও দিয়েছেন। আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেছেন। এমন দিনও গেছে, কষ্ট পেয়ে বাথরুমে গিয়ে কেঁদেছি সিরিয়াসলি অভিনয় করার ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু এই বাধাগুলোই আমাকে অভিনেতা বানিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সারা জীবন অভিনয়ের চেষ্টাই করে যাব।
প্রশ্ন :
শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
তাঁকে নিয়ে একটা কথাই বলব, তিনি অনেক বড় মনের মানুষ। খুবই হেল্পফুল। তারকাসুলভ কোনো আচরণ তাঁর মধ্যে পাইনি। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা খুব ভালো।
প্রশ্ন :
কোন অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা?
দেশের মোটামুটি সবার সঙ্গেই অভিনয় করেছি, কিন্তু জয়া আপার সঙ্গে কাজ করা হয়নি। জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করার খুব ইচ্ছা আমার।
প্রশ্ন :
অভিনয় করতে এসে পরিবারের সহায়তা পেয়েছেন?
লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী করতে চাই? আমি বলেছিলাম, নির্মাতা হতে চাই। বাবা তখনই আমাকে ঢাকায় আসার ব্যবস্থা করে দেন। আমার পেশার প্রতি বাবার শ্রদ্ধা ছিল। অভিনয়ের জন্য আমি বাবাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি, কিন্তু বাবার সম্মান সেদিন রেখেছিলাম।
প্রশ্ন :
কী হয়েছিল? সেই ঘটনাটা বলবেন?
বাবার বড় রকমের একটি হার্ট অ্যাটাক হয়। তিনি হাসপাতালে ছিলেন। বাসার সবাইকে নিষেধ করেছিলেন যেন আমাকে জানানো না হয়। বাবা মনে করতেন, আমার কাজের সমস্যা হবে। তিন দিন পর কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পর সেদিনই তাঁর আবার হার্ট অ্যাটাক হয়। তখন পরিবার থেকে আমাকে সব জানানো হয়। আমি শুটিংয়ে ছিলাম। সবাই তখনই আমাকে বাড়িতে যেতে বলে। আমি একটু দেরি করেছিলাম। জরুরি কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং করে রাজশাহীতে গিয়ে শুনি বাবা এক ঘণ্টা আগে মারা গেছেন।
প্রশ্ন :
এই অঙ্গনে আপনি একসময় ছিলেন একা, এখন শিল্পী সংঘের দায়িত্ব পেয়েছেন। কেমন লাগে?
ঢাকা শহরের কিছুই চিনতাম না। কারও সঙ্গে পরিচয় ছিল না। একা পথ চলতে চলতে আমাকে সব শিখতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে অভিনেতা হিসেবে মানুষ আমাকে চেনেন। দেশের অভিনয়শিল্পীরা আমাকে ভালোবেসে শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান সম্পাদক বানিয়েছেন। শিল্পী সংঘের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।