খনা নিয়ে কৃষক জ্যোতির যাত্রা শুরু

খনা নিয়ে কৃষক জ্যোতির যাত্রা শুরুকোলাজ

জ্যোতিকা জ্যোতির ইচ্ছা ছিল, যখন ‘বুড়ো’ হয়ে যাবেন, তখন গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করবেন। সবকিছু নিজে উৎপাদন করবেন। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে যখন লকডাউন শুরু হলো, হঠাৎ করেই যেন আকাশ ফুঁড়ে নেমে এল অখণ্ড অবসর। সেই অবসরকে কাজে লাগাতেই গ্রামে চলে গেলেন জ্যোতি। বুড়ো হওয়ার অপেক্ষা বাদ দিয়ে ধরলেন কোদাল। শুরু করলেন চাষাবাদ।

বাগান পরিষ্কার করে মুরগির খামার বানাচ্ছেন জ্যোতিকা জ্যোতি
সংগৃহীত

অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির চাষি হয়ে ওঠার গল্পের বাকি অংশ শোনা যাক তাঁর মুখেই, ‘আমি ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার হাতিয়ার গ্রামের মেয়ে। আমাদের গ্রামে অনেক জমি পড়ে ছিল। একটা জঙ্গল ছিল। লকডাউনের শুরুতে আমি প্রথমে গ্রামে গিয়ে ওই জঙ্গল পরিষ্কার করি। ওখানে এখন ঔষধি আর ফলের গাছ আছে। ইউটিউবে দেখেছিলাম, নির্দিষ্ট করে জঙ্গল বানিয়ে সেখানে মুরগি ছেড়ে দেওয়া। মুরগিরা সারা জঙ্গলে ডিম পেড়েছে আর খামারিরা সেগুলো সংগ্রহ করছেন। এটা দেখে আমিও বেড়া দিয়ে একটা বড় অংশ ঘিরে দিই। মাঝে সবজি চাষ করি। আর তাঁর ভেতরেই মুরগি চাষ করি। মুরগিদের জন্য ঘর তোলা হয়েছে। ওগুলো রাতে ওখানে থাকে। তার ভেতরেই ডিম পাড়ে।’

গাছ লাগাচ্ছেন জ্যোতিকা জ্যোতি
সংগৃহীত


এখানেই ক্ষান্ত হননি জ্যোতি। নদীর একটা অংশ লিজ নিয়েছেন। সেখানকার কচুরিপানা পরিষ্কার করে চলছে দেশি মাছ চাষ। আর নানান পদের ফল, কলা তো আছেই।

খনার অফিসে আলপনা আঁকছেন জ্যোতিকা জ্যোতি
সংগৃহীত

জ্যোতি বলেন, ‘আমার একটা ভাই সিঙ্গাপুরে ছিল। ওকে ডেকে এনে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। গ্রামে চাকরি খুঁজছিল অনেক তরুণ। লকডাউনে চাকরি পাবে কই? ওদের খামারের কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। এক বছরে আমি তিন বছরের কাজ এগিয়ে নিয়েছি। এখন আমার এই প্রজেক্টে ১৫ জন স্থায়ীভাবে কাজ করে। তা ছাড়া, মাছ ধরার জন্য, ফল পাড়ার জন্য বা কৃষিকাজের জন্য প্রায়ই জেলে বা জন (শ্রমিক) লাগাতে হয়।’

অন্যদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন জ্যোতিকা জ্যোতি
সংগৃহীত

এভাবেই কোনো পরিকল্পনা ছাড়া একরকম হুট করেই গড়ে উঠেছে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির খামার খনা অর্গানিক। গতকাল পহেলা বৈশাখে জ্যোতি তাঁর এই কৃষি খামারের লোগো উন্মোচন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল এই প্রতিষ্ঠান। জ্যোতি বলেন, ‘আমি তো গ্রামের মেয়ে। আমার দাদি, মায়ের মুখে মুখে শুনেছি খনার বচন। আমাদের মায়েরা এখনো আকাশ দেখে বলে দেয়, ঝড় হবে কি হবে না। আজ বৃষ্টি নামবে কি নামবে না। কত আগে খনা কৃষির বৈপ্লবিক সব সূত্র বচন আকারে দিয়ে গেছেন। আর আমার মনে হয়, এখন আমাদের যে অবস্থা, কৃষিই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত। সব মিলিয়ে করে ফেললাম।’

এই জায়গাটুকুর কচুরিপানা পরিষ্কার করে চলছে জ্যোতিকা জ্যোতির দেশী মাছচাষ
সংগৃহীত

খনা অর্গানিকের জন্য ঢাকার নিকেতনে তাঁর বাসার পাশেই একটা অফিস বানানোর কাজ চলছে। নিজ হাতে যেমন মাটি খুঁড়ে কৃষিকাজ করেছেন, এখানেও নিজেই করছেন অফিস সারানোর কাজ। নিজ হাতে রংতুলিতে দেয়ালে আঁকছেন আলপনা। সঙ্গে আরও কয়েকজন আছেন। এভাবে লকডাউনে নিজের আস্ত একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন জ্যোতি। নিজের জমানো যা ছিল, তার প্রায় সবটাই এখানে ঢেলেছেন। বললেন, যতটা না অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন শ্রম।

মাছ ধরা হচ্ছে
সংগৃহীত

এই গেল ‘কৃষক জ্যোতিকা জ্যোতি’র কথা। তবে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির মন খারাপ। দীর্ঘদিন ক্যামেরার সামনে সংলাপ আওড়ান না। শিগগিরই অনিমেষ আইচের একটি ওয়েব সিরিজের কাজ শুরু করবেন। আর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেও বড় স্বপ্ন দেখছেন এই অভিনেত্রী।

চাষী জ্যোতিকা জ্যোতি
সংগৃহীত

জ্যোতিকা জ্যোতি অভিনীত ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ ৮টি, ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ৬টি ও ‘জীবনঢুলি’ ২টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়া জ্যোতি অভিনীত ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ফিল্মফেয়ারে ৮টি মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে জ্যোতির হাতে কোনো সিনেমা নেই। বুঝেশুনে ভালো ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে চান তিনি।

জ্যোতিকা জ্যোতি
ফেসবুক