খুশিতে ভাসছে আপন ও রাইসা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছে নাইমুর রহমান আপন, অন্যজন আফরীন আক্তার রাইসাকোলাজ: আমিনুল ইসলাম

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছে দুজন শিশুশিল্পী। তাদের একজন নাইমুর রহমান আপন, অন্যজন আফরীন আক্তার রাইসা। কালো মেঘের ভেলা ছবির জন্য আপন ও যদি একদিন ছবির জন্য রাইসার পুরস্কারপ্রাপ্তি এক অনন্য ঘটনা। খবরটি জানার পর থেকে খুশিতে ভাসছে আপন ও রাইসা।

কালো মেঘের ভেলা ছবির একটি দৃশ্যে দুখুর বন্ধু এসে জানায়, তার মাকে পেটাচ্ছে তার সৎবাবা। দুখু দৌড়ে যাবে। দৃশ্যটি শুনে দুখু চরিত্রের শিশু অভিনেতা আপন নিজেই যেন পরিচালক বনে গেল। ছবির পরিচালক মৃত্তিকা গুণকে ডেকে পরিচালকের ভঙ্গিতে দুই হাত দিয়ে ক্যামেরার ফ্রেম বানিয়ে ধরে বলেছিল, ‘আপু শোনেন, এই দৃশ্যে আমি থাকব ট্রেনের ওপর। খেলছি। এমন সময় ও এসে চিৎকার করে জানাল, আমার মাকে বাবা মারছে। শুনেই আমি ট্রেনের ওপর থেকে এক লাফে নামব। দৌড়ে যাব। ওয়ান টেক শট।’

আগেও শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে নাইমুর রহমান আপন
ফাইল ছবি: বাসস

পরিচালক ভ্রু কুঁচকে তাকালে নাছোড়বান্দা আপন বলেছিল, ‘কিছুই হবে না। দরকার হলে নিচে কিছু কাঁথা–কম্বল ফেলে দিন। এডিটে বাদ দিয়ে দেবেন।’ অতি উৎসাহী এই খুদে অভিনেতার হাত–পা ভাঙার ঝুঁকি নেননি পরিচালক। তিনি বলেছিলেন, ‘থাক বাবা। অত স্টান্টগিরির দরকার নেই।’ এই হচ্ছে আপন।

ছবির একটা বড় অংশের শুটিং হয়েছে গ্রামে। রাত দুইটা–তিনটা পর্যন্ত চলেছে শুটিং। এমনও হয়েছে যে সবাই ক্লান্ত কিন্তু আপন শুটিং করবেই। তার উৎসাহেই দিনের শুটিং দিনেই শেষ হয়েছে।

‘যদি একদিন’ সিনেমার জন্য সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পাবেন আফরীন আক্তার।
ছবি: ফেসবুক থেকে

মৃত্তিকার সঙ্গে আলাপে উঠে আসে আপনের আরও নানা গল্প। কালো মেঘের ভেলা সিনেমার দুখু চরিত্রে অভিনয় করে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছে আপন। এ ছবির আরেক অভিনয়শিল্পী রুনা খান বলেন, ‘এই সিনেমায় সবচেয়ে ভালো অভিনয় করেছে আপন। ওর সহজ, স্বাভাবিক, স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় দেখে উল্টো আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি। ওকে কিছুই বলা লাগেনি। ও নিজে নিজেই বুঝে গেছে। কীভাবে, কে জানে!’

টিভি দেখে নিজেই জেনেছে জাতীয় পুরস্কারের সুখবর। মা-বাবার একমাত্র ছেলে পরপর দুই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছে, তাতে বাড়ির সবাই মহাখুশি। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন থিয়েটারে যাওয়া হয় না আপনের।
ছোট্ট রাইসা স্বপ্ন দেখত, অভিনয় দিয়ে একদিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। সেই ইচ্ছার কথা বন্ধুদের বললে অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানাত।

আবার অনেকেই মজা করে বলত, ‘তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ পরক্ষণেই অন্য বন্ধু বলত, ‘না না, তোকে দিয়েই হবে।’ বন্ধুদের এসব কথায় মনোবল বাড়ত তার।

অভিনয়শিল্পী রুনা খান বলেন, ‘এই সিনেমায় সবচেয়ে ভালো অভিনয় করেছে আপন
ছবি: ফেসবুক থেকে

নিজের সেরাটা দিয়েই অভিনয় করত রাইসা। রাইসার সেই স্বপ্ন এবার সত্যি হয়ে ধরা দিল। আফরীন আক্তার রাইসা পাচ্ছে ২০১৯ সালের শিশুশিল্পী হিসেবে সেরা অভিনয়ের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া রাইসা। বারবার মাকে বলছিল, ‘সত্যি?’ জানা গেল, এই পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দ উদ্যাপন করতে শিগগিরিই পরিবার, স্বজন ও বন্ধুদের জন্য একটি বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হবে। অভিনয় করতে কেমন লাগে, জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। পেশাদার অভিনেত্রীর মতো সে বলে, ‘শুরুতে ভয়–ভয় লাগত। বুক ধুকপুক করত। তবে আস্তে আস্তে এখন ক্যামেরার সঙ্গে বেশ একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। এখন আমার কাছে ডায়ালগ বলা কোনো ব্যাপারই নয়। আর আমি বিষয়টা খুবই এনজয় করি।’ বড় হয়ে বড় অভিনেত্রেী হতে চায় রাইসা।

জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া রাইসা