‘গোর’, ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও একদল তরুণ
বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় আয়োজন অস্কারে জমা পড়েছিল গোর ছবিটি। সে–ও ইংরেজি ভাষার ছবি হিসেবে। সেখান থেকে সুসংবাদ আনতে না পারলেও নিজের দেশে গোর–এর হলো জয়জয়কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০–এ ১১টি শাখায় পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান পাওয়া ছবি গোর। অন্যদিকে একই বছর মুক্তি পাওয়া বিশ্বসুন্দরী পেয়েছে আটটি পুরস্কার। যৌথভাবে এ দুটি চলচ্চিত্রকে দেওয়া হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ‘চলচ্চিত্রশিল্পের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য বিবেচনায় শিল্পী ও কলাকুশলীদের সৃজনশীলতা ও অভিনয়শৈলীর স্বীকৃতিস্বরূপ তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে। সেখানে ২৭ শাখায় পুরস্কৃত হচ্ছেন ২৮ জন শিল্পী। এ তালিকায় অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশাপাশি রয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ শিল্পী।’
এই ছবির চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পী, গীতিকার, চিত্রগ্রাহকসহ সবাই—যাঁরা এই জাতীয় পুরস্কার অর্জনকে সম্ভব করেছেন, তাঁদের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে অভিনন্দন। আমি তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
এ বছরের পুরস্কারের তালিকায় রয়েছেন একদল তরুণ শিল্পী। বিশ্বসুন্দরী ছবির জন্য প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সিয়াম আহমেদ, গোর–এর জন্য প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী দীপান্বিতা মার্টিন। প্রথমবার শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ইমরান মাহমুদুল, নারীকণ্ঠ হিসেবে যৌথভাবে প্রথমবার পেলেন কনা ও কোনাল। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছেন আরও বেশ কজন প্রথমবার পুরস্কার পাওয়া শিল্পী। প্রথমবারের অনুভূতি জানিয়ে সিয়াম বলেন, ‘আমার পরিবারের জন্য গর্বের দিন আজ। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সিনেমায় কাজ শুরু করেছিলাম। ছোট ছোট অর্জন ছিল, স্বীকৃতি তেমন ছিল না। এবার জাতীয় পর্যায়ের স্বীকৃতি আমার জীবনের বড় একটি পাওয়া। এবার সবাইকে বলার মতো কিছু একটা পেলাম।’
দীপান্বিতা বলেন, ‘আমার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছেন আমার কাছের মানুষেরা। শহীদুজ্জামান সেলিম ভাইসহ অনেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যাঁদের অভিনয় দেখে বড় হয়েছি, তাঁদের খুশি হতে দেখাটাও আমার জন্য বিস্ময়ের। এটা আমার প্রত্যাশার বাইরের প্রাপ্তি।’ ইমরান বলেন, ‘এই খুশির দিনে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে বাবাকে। তিনি চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ প্রথম রানার্সআপ থেকে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি দেখে গেছেন। আজ জাতীয় স্বীকৃতি পেলাম, বাবা দেখে যেতে পারলে বেশি খুশি হতেন।’
শিল্পের বিচার কখনোই পুরস্কার দিয়ে হয় না। একটি শিল্পের সঙ্গে আরেকটি শিল্পের প্রতিযোগিতা কখনোই হতে পারে না। অস্কার থেকে শুরু করে সব জায়গায় প্রচলিত হয়েছে, কাজের ক্ষেত্রে স্বীকৃতির দরকার আছে, শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতির দরকার আছে। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের হচ্ছে, এখন ছবিটা আরও অনেকেই দেখবেন।
কনা বলেন, ‘এ অনুভুতি একেবারে অন্যরকম। আমার চেয়ে আমার বাবা–মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছেন। কারণ, তাঁদের সমর্থন ছাড়া আমার একার পক্ষে এ অর্জন সম্ভব ছিল না।’ কোনাল এ স্বীকৃতি উৎসর্গ করতে চান তাঁর প্রয়াত বাবাকে। মায়ের হাতে পুরস্কারের স্মারকটি তুলে দিতে পারবেন ভেবে গর্ব অনুভব করছেন তিনি। কোনাল বলেন, ‘শ্রোতাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তাঁদের কারণেই আমি আজ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলাম।’
২০২০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য জমা পড়েছিল মোট ১৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ছয়টি প্রামাণ্যচিত্র।