গোল্ডেন গ্লোবের লক্ষ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিতেছবি:সংগৃহীত

৭৮তম গোল্ডেন গ্লোব বাংলাদেশের কাছে আলাদা তাৎপর্য নিয়ে হাজির। আমেরিকার সিনেমা ও টেলিভিশনের মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারের আসরে ‘সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা’ বিভাগে মনোনয়নের জন্য বিবেচনাধীন রুবাইয়াত হোসেন নির্মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০টি সিনেমাকে সেরা পাঁচের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিটি আছে সেই তালিকায়। এই তালিকা থেকে অল্প কয়েকটি সিনেমা গোল্ডেন গ্লোবের ভোটিং মেম্বারদের জন্য প্রদর্শিত হবে। সেই তালিকার জন্য বিবেচিত হয়েছে ছবিটি।

পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন।
ছবি: প্রথম আলো

ছবির পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন জানান, গোল্ডেন গ্লোবের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এইচএফপিএ)। এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে ফিল্ম ইনডিপেনডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়ার পর তারা সিনেমাটি দেখে ছবির রিভিউ করে। এইচএফপিএ ছবির পরিবেশককে মেইল করে জানিয়েছে, তারা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর ব্যাপারে আগ্রহী। আগামী ৪ নভেম্বর ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন সেই সদস্যরা, যাঁদের ভোটে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

মেড ইন বাংলাদেশ ছবির দৃশ্য
ছবি:সংগৃহীত

জানুয়ারির শেষে কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে জানা যাবে কোন ছবিগুলো পেল চূড়ান্ত মনোনয়ন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এই গোল্ডেন গ্লোবের আসর বসবে।
আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটির ডিস্ট্রিবিউটরকে বিষয়টি নিয়ে মেইল করা হয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মেইলের উত্তর আসে। যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটির পরিবেশক এশিয়ান ডায়াসপোরা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মনোনয়নের জন্য বিবেচিত ছবিগুলো থেকে নির্বাচিত ছবিগুলোর প্রদর্শনীর পর শুরু হবে চূড়ান্ত মনোনয়নের প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে আছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিটি।

প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০টি সিনেমাকে সেরা পাঁচের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিটি আছে সেই তালিকায়।
ছবি:সংগৃহীত

আগের বছর সারা বিশ্ব থেকে ৯৩টি সিনেমাকে মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়। সেখান থেকে অফিশিয়াল মনোনয়ন পায় পাঁচটি সিনেমা। দক্ষিণ কোরিয়ার ছবি ‘প্যারাসাইট’ জেতে জয়ীর পুরস্কার, যে সিনেমা পরে শোরগোল ফেলে দিয়েছে অস্কারের মঞ্চেও। যেসব সিনেমার অন্তত ৫০ শতাংশ সংলাপ ইংরেজি বাদে অন্য ভাষার, কেবল সেগুলোই এই বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসের দ্য বেভারলি হিলটন হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে জমকালো এই আয়োজন।

বাংলাদেশের মানুষকে ছবিটি দেখানোর ব্যাপারে কী ভাবছেন? মাস দুয়েক আগে এই প্রশ্নের উত্তরে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমি ছবিটা প্রথমে হলে মুক্তি দিতে চাই। সে জন্য সেন্সর সার্টিফিকেটের আবেদনের কাগজপত্র তৈরি করছিলাম। শুরু হলো করোনাকাল।

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবির দৃশ্য।
ছবি: সংগৃহীত

সব আপাতত থেমে আছে। আমি চাই, এই মানুষগুলোকে বড় পর্দায় দেখানো হোক। দর্শক মাথা উঁচু করে তাদের দেখুক। এটা একধরনের স্বীকৃতি। তারপর ছবিটা হয়তো কোনো এক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেওয়া যাবে।’প্রথম ছবি ‘মেহেরজান’ এবং দ্বিতীয় ছবি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’-এর পর এটি রুবাইয়াত হোসেনের তৃতীয় ছবি। ছবিটির মূল প্রযোজক ফ্রঁসোয়া দ্য’আক্তেমেয়ার (ফ্রান্স) ও আশিক মোস্তফা (বাংলাদেশ) এবং যৌথ প্রযোজক পিটার হায়েল্ডাল (ডেনমার্ক) ও পেদ্রো বোর্হেস (পর্তুগাল)। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়।বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাকশিল্পের ভূমিকা আছে।

তার আলোকে দৃঢ়চেতা নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিতে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী, দীপান্বিতা মার্টিন, মুস্তাফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।ছবিটি প্রযোজনা করেছে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও বাংলাদেশ। ছবিটি পেয়েছে ফ্রান্স সরকারের সিএনসি ফান্ড, নরওয়ে সরকারের দেওয়া সোরফন্ড প্লাস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইউরিমাজ ফান্ড আর ডেনমার্কের ডেনিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ফান্ড।

নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিতে।
ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ওপেন ডোরস’-এ অংশ নিয়ে চিত্রনাট্যের জন্য জিতে নিয়েছে আর্টে ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার। ছবিটির পরিবেশনা ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি ফ্রান্সের পিরামিড ফিল্মস। ছবিটি বাংলাদেশের খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দ্য এপ্রেস-মিডির ব্যানারে নির্মিত হয়েছে।‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ডেনমার্কের সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। জাপানের সিনেমা হলে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ছবিটি। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, চীন ও পোল্যান্ডের টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছে ছবিটি।