ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পেল যেসব ছবি

চলচ্চিত্র উৎসবের সব ক্যাটাগরির পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শেষে আবার আলোচনায় আসে ‘পেবেলস’ সিনেমাটি। এটি ২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতেছে। সমাগত ব্যক্তিদের মধ্যে সাড়া ফেলে এই সিনেমা। কী আছে এই সিনেমায়?
মাদকাসক্ত এক বাউন্ডুলে বাবার গল্প। তার নাম গণপতি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করায় তার সংসার থেকে স্ত্রী রাগ করে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। গণপতি ছেলেকে বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে ধরে এনে যাত্রা করে শ্বশুরবাড়ির দিকে। গিয়ে দেখে তার স্ত্রী সেখানে নেই। আবার বাপ-ছেলের রহস্যময় কয়েক ঘণ্টার যাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হয় গল্প। এর মধ্য দিয়েই সিনেমাটিতে উঠে আসে তামিল নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা, নারী নির্যাতন, মাদক সেবন, অর্থনৈতিক ও পানিসংকট। সরাসরি কোনো কিছু না বলেও নবীন অভিনেতা দিয়ে পরিচালক পি এস বিনোথরাজ দেখিয়ে দেন এগিয়ে চলা ভারতের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানবিক গল্প। এটি পরিচালকের প্রথম ছবি। তামিলনাড়ু প্রদেশের স্বল্প বাজেটের সিনেমাটি গত বছর ভারত থেকে অস্কারের প্রতিনিধিত্ব করে।

তামিলনাড়ু প্রদেশের স্বল্প বাজেটের সিনেমাটি গত বছর ভারত থেকে অস্কারের প্রতিনিধিত্ব করে

নেপালের শিশুদের শৈশবের ঘটনা নিয়ে ‘বাটারফ্লাই অন দ্য উইন্ডোপ্যান’। শিশুতোষ এই সিনেমাটির জন্য সুজিত বিদারী জিতেছেন সেরা নির্মাতার পুরস্কার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটাই সুজিতের সেরা অর্জন। জীবনের যা কিছু অর্জন ছিল, তার সবকিছু হারিয়ে আশাহীন সানি। জীবনের এই ক্লান্তি থেকে বাঁচতে গোপন পরিকল্পনা নিয়ে দুবাই থেকে নিজ গ্রাম কেরালায় এসে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। নাম ভূমিকায় সানি চরিত্রে অভিনয় করে জয়সুরিয়া জিতেছেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। কানাডা ও ইরানের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘বটোক্স’। সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য বেইজিংসহ একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন সুসান পারভার। এবার তাঁর হাতে উঠল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।

জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও ভারতের সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর জন্য ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী ও সুগাতা সিনহা জিতেছেন সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার। ২০২২ সালে এশিয়ান কম্পিটিশনে সেরা সিনেমায় হয়েছে ‘ক্যাফে বাই দ্য হাইওয়ে’। স্পিরিচুয়াল শাখায় চীনের “ইয়েনজেন’স জার্নি” সিনেমাটি সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতে নেয়। ইরানের সীমানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে পরিবার চালায় একদল মানুষ। তাদের কাছে মৃত্যু যেন হাতের মুঠোয়। এমন গল্পের ‘হলি ব্রেড’ জিতে নিয়েছে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার। তুরস্কের ‘আনটোল্ড স্টোরি অব ফাতেমা কায়াচি’ জিতেছে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের পুরস্কার। ওমেন ফিল্ম সেকশনে সেরা সিনেমা হয়েছে ‘লেডি অব দ্য সিটি’। বাংলাদেশ প্যানারোমায় ফিপরেস্কি শাখায় জুরি পুরস্কার জিতেছে শবনম ফেরদৌসির ‘আজব কারখানা’। অডিয়েন্স পুরস্কার জিতেছে যৌথভাবে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’।

অডিয়েন্স পুরস্কার জিতেছে যৌথভাবে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’।

নয়দিন চলা উৎসবে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বিশেষ বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, উৎসবের চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের কালজয়ী চলচ্চিত্রগুলো আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে, স্বাধীনতাসংগ্রামে ও স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে অনেক বিষয়, যা সমাজ ও সমাজপতিরা ভাবে না, সেগুলোও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে উঠে আসে, সমাজকে পথ দেখায়।’

অডিয়েন্স পুরস্কার জিতেছে যৌথভাবে নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতী কথা’।
ছবি: সংগৃহীত

‘নান্দনিক চলচ্চিত্র মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগান নিয়ে ১৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল উৎসব। উৎসবে প্রদর্শিত হয় ৭০টি দেশের মোট ২২৫টি সিনেমা।