অভিযোগ প্রযোজকদের
তিন লাখ টাকা দিলেও তারকারা পুরোনো পোশাক নিয়ে সেটে আসেন
চলচ্চিত্র পরিবারের ১৮টি সংগঠন মিলে নতুন কিছু নিয়ম প্রস্তাব করছে। সেখানে বাজেট কমিয়ে ছবি বানাতে উৎসাহিত করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের দুরবস্থা কাটাতে চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে পরিচালক ও প্রযোজক সমিতিতে প্রাথমিকভাবে বাজেট কমানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
চলচ্চিত্র পরিবারের ১৮টি সংগঠন মিলে নতুন কিছু নিয়ম প্রস্তাব করছে। সেখানে বাজেট কমিয়ে ছবি বানাতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, চলচ্চিত্র বাঁচাতে এই প্রস্তাবে থাকবে তারকাদের পারিশ্রমিক কমানো, সময়মতো তাঁদের শুটিংয়ে আসা, তারকাদের সহকারীর বিল, আসা–যাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তারকাদের বহন করা, এফডিসির যন্ত্রাংশের ভাড়া কমানোসহ আরও নানা বিষয়। প্রযোজক সমিতির নেতাদের দাবি, চলচ্চিত্র তৈরিতে যে নিয়ম ছিল, বর্তমানে সেখানে বেশ অনিয়ম চলছে।
চলচ্চিত্রের দুরবস্থা কাটাতে চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে পরিচালক ও প্রযোজক সমিতিতে প্রাথমিকভাবে বাজেট কমানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তারপরই করোনার প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়ে চলচ্চিত্রের সব কাজ। সরকারি অনুদানের ছবি ছাড়া সেভাবে খবর মিলছে না নতুন কোনো ছবির। করোনায় স্থগিত ৩০টিরও বেশি ছবির শুটিং। এখনো প্রক্ষাগৃহ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে নতুন কিছু নিয়ম না করলে চলচ্চিত্র নির্মাণ কঠিন হয়ে যাবে। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘শুটিংয়ে প্রতি সেকেন্ডের হিসাব হয়, অনিয়ম হলে বাজেটের বাইরে প্রযোজকের প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। সঠিক সময়ে শুটিং শুরু হলে ৩০ দিনের কাজ ২০ দিনেই করা সম্ভব। কয়েকজন তারকা তাঁদের সঙ্গে মেকআপম্যান, নিরাপত্তারক্ষীসহ বড় দল নিয়ে আসেন। তাঁদের খরচ দিতে হয়। অনেকের পারিশ্রমিকও বেশি।’
শুটিংয়ে প্রতি সেকেন্ডের হিসাব হয়, অনিয়ম হলে বাজেটের বাইরে প্রযোজকের প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। সঠিক সময়ে শুটিং শুরু হলে ৩০ দিনের কাজ ২০ দিনেই করা সম্ভব। কয়েকজন তারকা তাঁদের সঙ্গে মেকআপম্যান, নিরাপত্তারক্ষীসহ বড় দল নিয়ে আসেন। তাঁদের খরচ দিতে হয়। অনেকের পারিশ্রমিকও বেশি।’মুশফিকুর রহমান, সভাপতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি
অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি তৈরির কথা বললেও প্রযোজকদের কেউ কেউ বলছেন, ঢালিউড ছবির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দর্শকের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছবি দেখার সুযোগ নেই।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, করোনার প্রভাবে ঢালিউডের ছবির বাজার অনেকাংশেই সংকুচিত হবে। নির্মাতা ও প্রযোজকদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, শুটিংয়ে তারকাদের সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শিডিউল থাকলেও তাঁরা সেটে আসেন বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টার পর। বেশির ভাগ তারকা বাসা থেকে সামান্য দূরত্বে শুটিং করতে এলেও তাঁদের যাতয়াতের জন্য ৪ থেকে ১৩ হাজার টাকা গুনতে হয়। ছবির বাজেট না কমলে করোনার মধ্যে নতুন বিনিয়োগ যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি হল খুললে লগ্নিও ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। অনেকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি তৈরির কথা বললেও প্রযোজকদের কেউ কেউ বলছেন, ঢালিউড ছবির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দর্শকের ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছবি দেখার সুযোগ নেই।
প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, সাত বছর প্রযোজক সমিতি সচল না থাকায় অনিয়মগুলো নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবাইকে বাঁচতে হলে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। কী ধরণের অনিয়ম চলছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সময়মতো শুটিং শুরু হওয়ার নজির নেই প্রায় এক যুগ। ৩০ শতাংশ শুটিং হওয়ার পরে অনেক নায়ক–নায়িকা রেমুনারেশন ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে চান। যে ধুমপান করে না তাকেও ধুমপানের ব্যয় দিতে হয়। ছবির পোশাক কেনার জন্য দুই থেকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হলেও তারকারা পুরোনো পোশাক নিয়ে সেটে আসেন। কিছু তারকার গোসলের জন্য বোতলজাত পানি কিনে দিতে হয়। এমন অনেক অনিয়ম আছে।
তবে তারকারাও চলচ্চিত্রের স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহী। সম্প্রতি শাকিব খান তাঁর পারিশ্রমিকের তিন ভাগের দুই ভাগ কমিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। একই কথা শোনা গেছে নায়িকা মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া, আরিফিন শুভদের কণ্ঠে। এর আগেও প্রথম আলোর কাছে পারিশ্রমিক কমানোর কথা জানিয়েছিলেন মিশা সওদাগর, বিদ্যা সিনহা মিম, পূজা চেরি, বাপ্পী চৌধুরী, সায়মনসহ অনেকে। তারকাদের সহযোগিতা থাকলে নতুন এই নিয়ম অনুসরণ করে আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম খরচে ছবি বানানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠনের নেতারা।