তিনি আমার অভিভাবকের চেয়ে বেশি

শাবানা ও আজিজুর রহমান
কোলাজ : সংগৃহীত

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৮২ বছর বয়সে মারা গেছেন ছুটির ঘণ্টাখ্যাত নির্মাতা আজিজুর রহমান। কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সোমবার স্থানীয় সময় সকালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০ মার্চ রবিবার দুপুরে বরেণ্য এই পরিচালকের মরদেহ ঢাকায় আসবে। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন তাঁর পরিচালিত ছুটির ঘণ্টাসহ ১৬টি ছবির অভিনেত্রী শাবানা।

শাবানা
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম অভিনয় করি এহতেশাম সাহেবের ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে। তিনি সম্পর্কে ছিলেন আমার বাবার ফুফাতো ভাই। প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সময় ক্লাস ফাইভে পড়ি। তিনি আমার বাবাকে বলেছিলেন, ‘তোর মেয়েটাকে আমি একটি ছবিতে নিতে চাই।’ বাবা তখন এভাবে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে কীভাবে অভিনয় করবে? সে এত লাজুক, কারও সামনেই আসতে চায় না।’ এহতেশাম সাহেব নাছোড়বান্দা। তিনি বলেন, ‘তোর মেয়েটার মতো একটা মেয়েকে আমি খুঁজছি।’ এরপর বাবা রাজি হন। ওই ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন রহমান-রওশানারা। এই চলচ্চিত্রে সহযোগী ছিলেন আজিজুর রহমান। ৯ বছর বয়সে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। আমার পরিবারের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁকে আমি চাচা বলে ডাকতাম। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তাঁর পরিচালিত ১৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। চাচা পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র ঘরে ঘরে যুদ্ধতেও আমি অভিনয় করি।

সেকালের শাবানা ও একালের শাবানা
ছবি: ফেসবুক

আমাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। সিনেমার লাইনে যখন থেকে এসেছি, তখন থেকে তিনি আমার অভিভাবক। আমার মা-বাবা, ভাইবোন সবার সঙ্গে তাঁর সুন্দর সম্পর্ক ছিল। হঠাৎ তাঁর মারা যাওয়ার খবর শুনে খুব খারাপ লাগল। তিনি আমার আপনজন, প্রিয়জন, অভিভাবকের চেয়ে বেশি।
চাচার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মারা যাওয়ার সাত-আট দিন আগে। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘তুই কেমন আছিস, শাবানা?’ বললাম, ‘চাচা, ভালো আছি।’ ‘তুমি কেমন আছ,’ জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘আমি খেতে পারি না। অক্সিজেন কমে যাচ্ছে।’ তখন বললাম, ‘চাচা, তুমি হাসপাতালে চলে যাও।’ বললেন, ‘তা-ই চিন্তা করছি। কিন্তু হাসপাতালে তো কাউকে ঢুকতে দেয় না। একা একা ভালো লাগে না।’ এরপর গত কয়েক দিন আর খবর নিতে পারিনি। এর মধ্যে আজ (নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সোমবার সকাল) সাদিক (ওয়াহিদ সাদিক, শাবানার স্বামী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক) জানাল, ‘নিউজ শুনেছ?’ বললাম, ‘কী?’ বলল, ‘আজিজ চাচা কিন্তু আর নেই?’ ‘কী বলো!’ কী যে খারাপ লাগল। তিনি তো অভিভাবকের চেয়ে বেশি ছিলেন। আজিজ চাচাকে আমার বাবা বলতেন, ‘তুই একটু দেখিস আমার মেয়েটাকে।’

শাবানা ও ওয়াহিদ সাদিক
ছবি : প্রথম আলো

আমাদের সম্পর্কটা এতটাই ভালো ছিল যে আমরা একসঙ্গে হজও করেছি। ৯০ সালে চাচা, আমি, সাদিক, চাচি—একসঙ্গে হজও করেছি। একসঙ্গে দুবার ওমরাহও করেছি। তাঁকে হারিয়ে আমি একজন অভিভাবক, প্রিয়জন, আপনজন হারালাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কী যে হারাল, তা বলে শেষ করা যাবে না।