তিনি হৃদয়ে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন: ববিতা

‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা।
সংগৃহীত।

দুজনে মাত্র একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। এক ছবিতে অভিনয় করেই তাঁরা হয়ে আছেন ইতিহাস হয়ে। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’ ছবিটি দেশে–বিদেশে সম্মান বয়ে আনে। সেই সিনেমার ‘অনঙ্গ বউ’ আজ ‘স্বামীহারা’ হয়েছেন। কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে ৪২ দিনের চিকিৎসা শেষে আজ রোববার মারা যান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাই মন খারাপ ববিতার। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই তাঁর মনটা খারাপ ছিল। এখন প্রয়াণের খবরটি কিছুইতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না এই চিত্রনায়িকা। বিশ্বাস করতে পারছেন না, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নেই! ববিতা বললেন, ‘সৌমিত্র ছিলেন হৃদয়ে, আছেন ও থাকবেন।’

‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা।
সংগৃহীত।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সিনেমার অভিভাবকদের একজন। তিনি বটবৃক্ষ ছিলেন। যিনি বাংলা সিনেমায় আধিপত্য বিস্তার করে গেছেন। তাঁর এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে যেন শেষ হলো বাংলা চলচ্চিত্রের বর্ণিল এক অধ্যায়। বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত ববিতা। ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র অভিনয় করেন গঙ্গাচরণ চক্রবর্তীর চরিত্রে। আর তাঁর স্ত্রী অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয় করেন ববিতা। সত্যজিৎ রায়ের এই সিনেমায় অভিনয় করে দেশে ও বিদেশে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ববিতার।
১৯৭৩ সাল ববিতার অভিনয়জীবনের সেরা বছর। ওই বছরই ববিতা অভিনীত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা মুক্তি পায়। ‘অশনি সংকেত’ ছবির শুটিংয়ের স্মৃতি মনে করে ববিতা বলেন, ‘“অশনি সংকেত” ছবির পরও সৌমিত্রের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেশ আন্তরিক ছিল। যখনই বাংলাদেশে কোনো কাজে আসতেন, কথা হতো। দেখাও হতো। খুব অসাধারণ সময়ও কাটত।’

‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ববিতা।
সংগৃহীত।

সৌমিত্রের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই বেশ চিন্তিত ছিলেন ববিতা। তিনি বলেন, ‘তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করে গেছি। কিন্তু বিধাতার নিয়মে তিনি চলে গেলেন। কত কী যে মনে পড়ছে আজ। সেই “অশনি সংকেত” সিনেমার শুটিংয়ের সময়ের কথা। সব মন পড়ে।’
ববিতা আরও বলেন, ‘ছবিটির শুটিং শুরু হয় বীরভূমে। তখন আমার বয়স তাঁর তুলনায় কম ছিল। মানিক দা (সত্যজিৎ রায়) ও  সৌমিত্র দা আমাকে কত সাহায্য করেছেন, তা বলে বোঝানো যাবে না। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে শুটিংস্পটে গিয়েছিলাম। ছবিটিতে ববিতার প্রথম দৃশ্য ছিল সৌমিত্রের সঙ্গেই। গোল ফ্রেমের চশমা, ধুতি পরে গঙ্গাচরণের (ছবির চরিত্র) গেটআপে তাঁকে অপূর্ব লাগছিল। তখন কত বড় তারকা তিনি। তাঁর ছবি দেখেছি। আমি খুব ভয়ে ছিলাম, একে দেশের বাইরে, তাঁর ওপর সৌমিত্র দার মতো বড় মাপের শিল্পী, আদৌ অভিনয় হবে কি হবে না, তা নিয়ে ভীষণ টেনশন হচ্ছিল। তবে মানিক দা, সৌমিত্র দা ও সবার আন্তরিক সহযোগিতায় উতরে গেছি।’