নারীর যৌন নির্যাতন নিয়ে সিনেমা বানাবেন নারীরাই

একজন ক্রীতদাস যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন সেই সন্তানের ওপর তার কোনো অধিকার থাকে না। দাসপ্রথার নৃশংস রূপ নিয়ে গল্পটি লিখেছেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নারী। আরেক নারী লিখেছেন তিন প্রজন্মের তিন নারীর কথা, যারা নিজেদের যৌন নির্যাতনের গল্প ভাগাভাগি করেন নিজেদের ভেতরে। একজন রূপান্তরিত নারী লিখেছেন তাঁর জীবনের দুঃখগাথা। জীবন আর সিনেমার চিত্রনাট্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেখানে। জমা পড়েছিল এ রকম ১০০ চিত্রনাট্য, বাছাই করা হয় ১৬টি। এ ১৬ জন চিত্রনাট্যকারকে নিয়ে আয়োজিত হবে একটি কর্মশালা, যার আয়োজক চলচ্চিত্র পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন।

নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন রোধে এ নিয়ে জমাট বাঁধা নীরবতা ভাঙা দরকার বলে মনে করেন রুবাইয়াত। আমাদের সমাজে যাঁর সঙ্গে যৌন নির্যাতন বা হয়রানির ঘটনা ঘটে, নানা কারণে তিনি সেসব চেপে যান। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা কারণে তা প্রকাশ করেন না। ফলে এ রকম জঘন্য অপরাধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামনেই আসে না। দিব্যি পার পেয়ে যান অপরাধী। তাই এ রকম ঘটনা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ঘটেই চলে। তারই প্রতিফলন গত শুক্রবারে প্রথম আলোর প্রথম পাতার প্রধান প্রতিবেদন—‘সব নির্যাতন ছাড়িয়ে ধর্ষণই বেশি’। এ রকম পরিস্থিতিতে নারীদের নিজেদের যৌন নির্যাতনের কথা কোনো না কোনোভাবে বলা জরুরি, প্রতিবাদের কোনো বিকল্প নেই।

রুবাইয়াত হোসেন
প্রথম আলো

সেই নীরবতা ভাঙার জন্য রুবাইয়াত হোসেন ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’ শিরোনামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগের অধীনে প্রাথমিকভাবে ১৬ জনকে নিয়ে অনলাইনে একটি কর্মশালা চলবে। দেশ–বিদেশের চিত্রনাট্যকার আর সিনেমাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা করাবেন সেটি, যাতে তাঁরা গল্পটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দিতে পারেন। এ উদ্যোগের আওতায় তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে, যা নির্মাণ করবেন এসব চিত্রনাট্যের ১৫–৩০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারীরা।

রুবাইয়াত হোসেনকে অনেকেই বলেছিলেন, এই উদ্যোগ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু যে পরিমাণ চিত্রনাট্য জমা পড়েছে, তাতে আনন্দিত এই নির্মাতা। বললেন, ‘আমি ভাবিনি, সবাই আমাদের উদ্যোগটাকে এভাবে গ্রহণ করবেন। আমরা এই এক শ জনকেই চিঠি লিখে অভিনন্দন জানিয়ে “হার স্টোরিজ: অ্যাডভেঞ্চার অব সুপারগার্লস” বইটা পাঠাব। তাঁরা ইতিমধ্যে যৌন নির্যাতন নিয়ে নীরবতা ভেঙেছেন। আমরা চাই, নারীরা তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতন নিয়ে কথা বলুক। প্রতিবাদ করুক, তা নিয়ে সিনেমা বানাক। সবার সিনেমা প্রযোজনা করা সম্ভব হবে না। তবে ১৬ জনকে নিয়ে পরিচালিত ওয়ার্কশপটা তাঁদের প্রজেক্টকে সামনে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। এই ১৬ জনের ভেতর থেকে ৩ জনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজনা করা হবে।’

কিশোরী ও নারী নির্মাতাদের জন্য অনুদানের প্রজেক্ট ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স
সংগৃহীত

এই আয়োজনের উদ্যোক্তা রুবাইয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর এই সচেতনতা তখনই তৈরি হবে, যখন নারীরা তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা নিয়ে কথা বলবেন। এত দিন আমরা নারীদের গল্প দেখেছি পুরুষের চোখে, পুরুষের নির্মাণে। এটা নিজেদের গল্প, নিজেদের বলার প্ল্যাটফর্ম। আর যে বয়সের নারীদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছিল, সেই বয়সের নারীদের সঙ্গে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি ঘটে। তাঁরা এসব ঘটনার নিকটবর্তী প্রত্যক্ষদর্শী। আওয়াজ তোলার এটাই সুযোগ।’

‘মেহেরজান’, ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ছবিগুলো নির্মাণ করে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছেন পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন।