নিচে ১ জন, ওপরে সর্বসাকল্যে ১২ জন

ঈদের দ্বিতীয় দিন এমনই খালি ছিল বিজিবি সিনেমা হলের সম্মুখভাগ
ছবি: প্রথম আলো

‘হলের ভেতর শত শত মানুষ। বাইরে টিকিটের লাইনে আরও কয়েক শ মানুষ। তখন বিলাকে টিকিট বিক্রি হতো। সেই ঈদ এহন আর নাই। আমার ২৫ বছর চাকরিজীবনে এমন ঈদ দেহি নাই। পুরা হল খালি। নিচে ১ জন দর্শক। ওপরে ১২ জন। এভাবে সিনেমা হল আর টিকিয়ে রাখা যাবে না।’ কথাগুলো বলেন মনোয়ার হোসেন। ঢাকার আজিমপুরের বিজিবি সিনেমা হলের টিকিট চেকার তিনি।

মনোয়ারের বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। মুখে চিন্তার ছাপ। তাঁর গালে হাত। তিনি বিজিবি সিনেমা হলের প্রবেশদ্বারের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তাঁর পাশেই দেয়ালে পোস্টার। শাকিব খান–বুবলি অভিনীত ‘রংবাজ’। পুরোনো এই ছবিই ঈদে আবার দেখানো হচ্ছে। সামনের ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে আছেন মনোয়ার। ‘হলের আর ব্যবসা নাই, মামা। ব্যবসা ক্যামনে ওইব? ভালো ছবি নাই। তার ওপরে করোনা। কাল থেকে আবার লকডাউন। মানুষ বের হবে ক্যামনে? আমরা একেবারেই শেষ হয়ে গেছি।’

বিজিবি হলের প্রবেশদ্বারের সামনে মন খারাপ করে বসে আছেন টিকেট চেকার মনোয়ার হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

সময় তখন ১২টা ৬ মিনিট। সোয়া ১২টায় শো শুরু হওয়ার কথা। পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একজনকে টিকিট কাউন্টারে সামনে ঘুরতে দেখা গেল। আমি পাশে দাঁড়ানোর কারণে তিনি একটু সরে গেলেন। এদিক–সেদিক তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর একটি টিকিট সংগ্রহ করলেন। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘ভাই, ঘরে কত সময় বসে থাকা যায়? সময় কাটে না। এই জন্য সিনেমা দেখতে আইছি।’ এই দর্শকের নাম আবদুল মজিদ। তিনি আজিমপুর এলাকায় শসা বিক্রি করেন। কাজ না থাকায় সিনেমা দেখতে এসেছেন। জানালেন, কাজ না থাকলে প্রায়ই সিনেমা দেখেন। মান্না তাঁর প্রিয় নায়ক।

রংবাজ সিনেমা পোস্টার
ছবি: প্রথম আলো

হলরুমে প্রবেশের আগেই তিনজন বসে তাস খেলছিলেন। তাঁরা হলের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন, পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। পরে জানতে চাইলাম করোনার সব নিয়ম দর্শক মানছে কি না? শুনেই তাঁরা হাসলেন। একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘ভাই, দর্শকই তো নেই। কী নিয়ম মানবে! এই দেশে হল আর চলবে! বিদায় নেবে। শেষ ঘণ্টা বেজে গেছে। আগে ভালো সিনেমা ছিল না। তা–ও কিছু দর্শক আসত। এখন দর্শক হলমুখীই হয় না। এভাবে চলা আর বন্ধ থাকা একই কথা।’

পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একজনকে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেল
ছবি: প্রথম আলো

ঈদের দিন বিডিআর সিনেমা হলের ৫টি শোতে দর্শক ছিল ১৫০ জন। দ্বিতীয় দিন প্রথম শোতে তেমন দর্শক নেই। হলের ভেতর গিয়ে দেখা যায়, নিচে এক দর্শক এক কোনায় বসে আছেন। আমাকে ডেকে বললেন, ‘ভাই, ওই পাশে সুইচ আছে। ফ্যান ছাইড়া বসেন। এটাও বন্ধ ছিল। নিজেই ছাড়ছি।’ এই দর্শকের নাম রফিক। তিনি একটি দোকানে কাজ করেন। সেটি এখন বন্ধ। ওপরে গিয়ে দেখা যায়, ছন্নছাড়া হয়ে ১২ জন দর্শক বসে আছেন। সিনেমা শুরু হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো না। হল থেকে বের হওয়ার সময় দুজন তরুণ–তরুণী সিনেমা হলে প্রবেশ করছিলেন। বাইরে তখন তপ্ত রোদ। খাঁ খাঁ করছিল সিনেমা হল লাগোয়া মাঠটি।