নির্বাচনী আমেজে সরগরম নাটকপাড়া

নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারণায় ভোটপ্রার্থী আর ভোটারদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল মগবাজারের মিডিয়া গলি
ছবি: শফিক আল মামুন

রাত তখন সাড়ে ১১টা। বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড়ের দিকে এগোচ্ছি। মোড়ের ঠিক আগেই হাতের বাম পাশে কিছু মানুষের জটলা। হইচই শোনা গেল, চলছে আড্ডা। কৌতূহল নিয়ে কাছে যেতেই দেখা গেল, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই সমাগম। আগামীকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি ছোট পর্দার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন। নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারণায় ভোটপ্রার্থী আর ভোটারদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল মগবাজারের মিডিয়া গলি।

ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে নাটকপাড়ায় জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, কারা হতে পারেন আগামী দুই বছরের জন্য নির্বাচিত। মিডিয়া গলিতে নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীসহ কলাকুশলীরা নিয়মিত আড্ডা দেন। জানা যায়, মিডিয়া অঙ্গনের মানুষেরা নিয়মিত কয়েক বছর ধরে স্থানটিতে আড্ডা দেন। এই কারণে জায়গাটি এখন স্থানীয় ও নাট্য অঙ্গনের মানুষের কাছে মিডিয়া গলি নামে পরিচিত। এই গলিতে গিয়ে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন লাভলু, মোস্তফা কামাল রাজ, আজাদ আবুল কালাম, চয়নিকা চৌধুরী, তুহিন হোসেনসহ একাধিক প্রার্থী শেষ দিনের প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে নাটকপাড়ায় জোরেশোরে আলোচনা চলছে
ছবি: শফিক আল মামুন

কথা হলো সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজের সঙ্গে। তিনি জানান, কদিন ধরে তিনি নিয়মিত শুটিং করলেও নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণা থেকে গতকাল তিনি বলেন, ‘আজ শেষ দিনের মতো প্রচারণা। এখানে নাটকের অনেকেই নিয়মিত আড্ডা দেয়। এ জন্যই আসা। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। ভোট চাইছি। এবার ভোট দিলে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হব। ভোট না দিলে ফেল করার হ্যাটট্রিক করব।’ এই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) পরিচালক সমিতিতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।

ডিরেক্টরস গিল্ডের এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন এস এম মহসীন
ছবি: সংগৃহীত

ডিরেক্টরস গিল্ডের এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন এস এম মহসীন। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন নরেশ ভূঁইয়া ও মাসুম রেজা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, তাঁদের এই নির্বাচনে সব সময়ই উৎসবের আমেজ থাকে। তিনি বেশ কবার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে কোনো বিতর্ক ছিল না। তাঁর ওপর সবার আস্থা আছে। এবারের নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে তিনি খুশি। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট আছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে সারা দিন ভালোভাবে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। আমাদের সহযোগিতার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তার পরও দেখা যাক কাল কী হয়। আমাদের আশা নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না।’ নির্বাচন কমিশনার চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছি। আমার আশা করি আগামীকালের নির্বাচন শতভাগ স্বচ্ছ হবে। আমরা ভোটকেন্দ্র ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সতর্ক আছি। এখন এফডিসিতেই আছি। কাল ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেব।’

নির্বাচনে আপিল বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত
সংগৃহীত

ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচনে আপিল বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন অভিনয়শিল্পী হাসান ইমাম, আবুল হায়াত ও মামুনুর রশীদ। অভিনেতা আবুল হায়াত জানান, প্রতিবারই তাঁকে দায়িত্বে রাখা হয়। তিনি নিজের দায়িত্বটা পালন করেন। এবার করোনার কারণে নির্বাচন স্থানে জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন। দুপুরে এক ফাঁকে গিয়ে দেখা করে আসবেন সবার সঙ্গে। তিনি এখন বিশেষ ব্যবস্থায় একটি মাত্র ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। কাজ ছাড়া একদমই বাসার বাইরে বের হন না। আপিল বিভাগের আরেক সদস্য মামুনুর রশিদ অসুস্থ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ সব শেষে। আমাদের প্রত্যাশা ভালোভাবে নির্বাচন হোক। আমরা ভোট সম্পূর্ণ হলে গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করব।’ সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক গত ডিসেম্বরে ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। দেশের করোনা পরিস্থিতির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই সংগঠনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সেই সময় সংগঠনের সাধারণ সভা করার জন্যও অনুমতি পাচ্ছিলেন না ডিরেক্টরস গিল্ডের নেতারা।
এদিকে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই চাঙা হচ্ছে ‘নির্বাচন প্যানেল’। জানা যায়, দুটি অঘোষিত প্যানেলই বেশ শক্তিশালী হয়েছে।

নির্বাচনে আপিল বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন অভিনয়শিল্পী হাসান ইমাম। ছবি: সংগৃহীত