পরীমনির জামিন না চাওয়ার নেপথ্যে কী, জানালেন আইনজীবী

পরীমনি এজলাস থেকে বের হওয়ার পথে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছেন, ‘কেন আমার জামিন আবেদন করলেন না। আমি তো পাগল হয়ে যাব।
ছবি : সংগৃহীত

মাদক মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনিকে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শনিবার আদালতে হাজির করা হয়েছিল। শনিবার বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে তাঁকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের হাজতে আনা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা ফের রিমান্ড না চেয়ে পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছেন। অন্যদিকে আজ পরীমনির জামিন চেয়ে আবেদন করেননি তাঁর আইনজীবী। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরীমনি।

কী কারণে জামিন চাওয়া হয়নি আজ? এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তাঁর আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাতের সঙ্গে। প্রথম আলোকে পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বললেন, ‘আমরা এই কোর্টে আর জামিন আবেদন করতে চাচ্ছি না। এখানে একাধিকবার জামিন চেয়েও পাইনি বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত, পরীমনির জামিনের আবেদন এবার আমরা উচ্চ আদালতে করব। আমাদের আশাবাদ, উচ্চ আদালত পরীমনির জামিনের বিষয়টি আমলে নেবেন।’

প্রিজন ভ্যানে করে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত জানালেন, ‘মোট চারবার জামিনের আবেদন করা হয়। প্রতিবারই নামঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত। উচ্চ আদালতে পরীমনির জামিন আবেদনের বিষয়ে কাল রোববার বিস্তারিত জানাতে পারব।’
পরীমনি এজলাস থেকে বের হওয়ার পথে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছেন, ‘কেন আমার জামিন আবেদন করলেন না। আমি তো পাগল হয়ে যাব। আপনারা জামিন চান, আপনারা আমার সঙ্গে কী কথা বলবেন? আপনারা বুঝতেছেন, আমার কী কষ্ট হচ্ছে?’ পরীমনির এমন কথার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, ‘তিনি খুব অসহায় সময় পার করছেন। দেশের একজন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকাকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারটি কঠিন ব্যাপার। শারীরিকভাবেও তিনি খুব অসুস্থ অনুভব করছেন। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত আছেন। অনেক বিষয় বিবেচনায় আমরাও আশাবাদী ছিলাম, এই কোর্ট থেকে পরীমনির জামিন করাতে পারব। কিন্তু চারবার জামিন চেয়েও পাইলাম না দেখে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি।’

আদালতে যাওয়ার পথে পরীমনি।
ছবি : তানভীর আহাম্মেদ

মাদক মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমনিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) আজ শনিবার এ আদেশ দেন। একটি প্রিজন ভ্যানে করে বেলা ৩টা ১৪ মিনিটে তাঁকে আদালতের হাজতখানা থেকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আজ শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়।
বেলা ২টা ৫০ মিনিটে পরীমনিকে হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাসকক্ষে তোলা হয়। পরীমনির আইনজীবীরা আদালতের কাছে আবেদন করেন, আইনি পরামর্শের জন্য তাঁরা পরীমনির সঙ্গে কথা বলতে চান। এটি তাঁর আইনি অধিকার। আজ তাঁরা জামিন চেয়ে আবেদন করবেন না। অবশ্য পরীমনির সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু। তিনি আদালতকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলমান। আসামি জামিনও পাননি। এমন অবস্থায় পরীমনির সঙ্গে আইনজীবীদের কথা বলার অনুমতি না দেওয়ার আবেদন করছি।’ পরে আদালত পরীমনির সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে করা আবেদন নাকচ করেন।

আদালত প্রাঙ্গণে পরীমনি
ছবি : সংগৃহীত

এদিন বনানী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা পরীমনিকে তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করেন। এরপর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তদন্ত কর্মকর্তা কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বলেন, ‘আসামি পরীমনি মামলার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য-উপাত্ত তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কারাগারে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
৪ আগস্ট রাতে চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমনি ও তাঁর সহযোগীকে আটক করে র‍্যাব। তাঁর বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয় বলে জানানো হয়। আটকের পর তাঁদের নেওয়া হয় র‍্যাব সদর দপ্তরে। পরে র‍্যাব-১ বাদী হয়ে মাদক আইনে পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা করে।