প্রীতিলতার সঙ্গে কারাগারে একদুপুর

‘ভালোবাসা প্রীতিলতা ’সিনেমার শুটিংয়ে তিশা।ছবি: হাসান রাজা।

এই কারাগারে এখন নেই কোনো কয়েদি। প্রধান ফটকে তাই কোনো ভিড়ও নেই। তবে দুজন নিরাপত্তারক্ষী আছেন। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে লেখাটি—আলীপুর কারাগার! কিছু দূর এগোতেই দেখা যায় অভিনেতা মনোজ প্রামাণিককে। মুখে মাস্ক পরে তাঁকে কয়েদির সাজে সাজাচ্ছেন রূপসজ্জাকর মোহাম্মদ আলী বাবুল। নিশ্চিত হই, ঠিক শুটিং স্পটে পৌঁছেছি।

ভালোবাসা প্রীতিলতা সিনেমার শুটিংয়ে নুসরাত ইমরোজ তিশা।
ছবি: হাসান রাজা।

গত রোববার দুপুরে সবাই প্রস্তুত ছিলেন ভালোবাসা প্রীতিলতা ঘিরে। ডাক পড়ে অভিনেতার। ফাইলে বাঁধা একগাদা সাদা কাগজ হাতে একজন দৌড়ে এসে বলেন, ‘মনোজ ভাই, একটু পর তিশা আপার সঙ্গে কারাগারে দেখা করার সিকোয়েন্স।’ উঠে পড়েন মনোজ। কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, তিন দিন ধরে এখানেই শুটিং করছেন পরিচালক প্রদীপ ঘোষ।

‘ভালোবাসা প্রীতিলতা ’সিনেমার শুটিংয়ে তিশা ও মনোজ।
ছবি: হাসান রাজা।

২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের সিনেমা ভালোবাসা প্রীতিলতা ছবিটি নির্মিত হচ্ছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী নিয়ে। ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বানানো হয়েছে আলীপুর কারাগার।
দূর থেকে শোনা যায় অভিনেত্রী তিশার কণ্ঠ। সাদা সুতি শাড়ি ও লম্বা হাতার সবুজ ব্লাউজ পরেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সিনেমায় প্রীতিলতার চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। পরিচয়পর্ব শেষে ছবি নিয়ে কথা হয় পরিচালকের সঙ্গে। সেদিন আলীপুর কারাগারে প্রীতিলতার সঙ্গে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের দেখা হওয়ার দিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এই পরিচালক এর আগে বানিয়েছিলেন শাটল ট্রেন নামের একটি ছবি। এটি হতে যাচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় ছবি। তিনি বলেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে ছবিটি বানাচ্ছি। ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে ছবি করা আমাদের দেশে খুবই কষ্টকর। প্রীতিলতাকে নিয়ে আজও কোনো সিনেমা হয়নি। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আমাদের নারীশক্তির অনুপ্রেরণা। তিনিই প্রথম শিখিয়েছিলেন, নারীরা পারে জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা আনতে।’

‘ভালোবাসা প্রীতিলতা ’সিনেমার শুটিংয়ে মেকআপে ব্যস্ত মনোজ প্রামাণিক।
ছবি: হাসান রাজা।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের চরিত্রে অভিনয় করছেন মনোজ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক সত্য জানার চেষ্টা করেছি। তাঁর দর্শন, পড়াশোনার ব্যাকগ্রাউন্ড, ওই সময়ের বিপ্লব বা সংগ্রাম—সবকিছু জানা-বোঝার চেষ্টা করেছি। তিনি দেখতে কেমন, সেদিকে যাইনি। আমরা স্পিরিটটা ধরার চেষ্টা করেছি।’
দুপুরে খাবারের সময় হয়ে যায়। ডাক পড়ে সবার। খেয়ে সবাইকে পরের দৃশ্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ফেরার পথে পরিচালক জানালেন, আগেও তিনি আরমানিটোলা স্কুলে কয়েক দিন শুটিং করেছেন। স্কুলটিকে পর্দায় দেখাবেন বেথুন কলেজের হোস্টেল হিসেবে। এরপরে শুটিং করবেন চট্টগ্রামে।

‘ভালোবাসা প্রীতিলতা ’সিনেমার শুটিংয়ে তিশা।
ছবি: হাসান রাজা।

প্রীতিলতা-রামকৃষ্ণের আলাপের দৃশ্যধারণ শেষ হয়। শুরু হয় আরেকটি দৃশ্যের জন্য লাইট-ক্যামেরার প্রস্তুতি। বিরতি ফাঁকে কথা হয় তিশার সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘স্বপ্নের মতো একটি চরিত্রের মধ্যে তিনি। এমন চরিত্রে অভিনয় যেকোনো শিল্পীর জন্য বড় প্রাপ্তি। চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এই চরিত্রে কাজ শুরুর আগে আমি বিরতি নিয়েছিলাম। যত রেফারেন্স পেয়েছি, সবই নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করেছি। মানসিকভাবে চরিত্রটির মধ্যে বসবাস করতে হয়, যা এখনো করে যাচ্ছি।’
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ভালোবাসা প্রীতিলতা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। তিশা জানালেন, ‘উপন্যাসটি পড়েছি। প্রীতিলতা চরিত্রের জন্য যখন প্রস্তাব পেলাম, তখন লেখিকার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমার ভীষণ পছন্দের মানুষ। তাঁর সঙ্গে অনেক বছরের সম্পর্ক। ছবির জন্য একাধিকবার বসেছি। তাঁর চোখ দিয়েও প্রীতিলতাকে দেখার চেষ্টা করেছি। পরিচালক পর্দায় প্রীতিলতাকে যেভাবে তুলে ধরতে চান, তা বুঝতে চেয়েছি। প্রীতিলতার ডায়েরি থেকেও অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি। এ কাজগুলো কঠিন ছিল, তবে অসাধ্য নয়।’

‘ভালোবাসা প্রীতিলতা ’সিনেমার শুটিংয়ে তিশা ও মনোজকে দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক প্রদীপ ঘোষ।
ছবি: হাসান রাজা।