প্রতি বৃহস্পতিবার ফ্রি সিনেমা দেখায় আর্কাইভ

৩৫ মিলিমিটারের ফিল্ম থেকে ডিজিটালে রূপান্তর করা হচ্ছে পুরোনো দিনের বাংলা সিনেমা
ছবি: আশরাফুল আলম

মুঠোফোন, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের পর্দায় আজকাল সবই দেখা যায়। কিন্তু বড় পর্দায় ৩৫ মিলিমিটার ফিল্মে পুরোনো দিনের সিনেমা দেখার সুযোগ এখন আছে কেবল বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে। প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রেক্ষাগৃহে যে কেউ চাইলে সোনালি দিনের বাংলা সিনেমা ফ্রি দেখে আসতে পারবেন।

এই হলে দেখানো হয় সিনেমা

কেবল সিনেমা দেখে ফিরে গেলে চলবে না। কেননা, সেখানে সিনেমা অনুরাগীদের অপেক্ষায় আছে একটি জাদুঘর। নায়ক রাজ্জাকের ব্যবহৃত চশমা, জামা, নায়িকা সুজাতার শাড়ি, ভ্যানিটি ব্যাগ কিংবা পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, খান আতাউর রহমান, অভিনেত্রী ডলি জহুরের জাতীয় পুরস্কারের স্মারকগুলোও দেখা যাবে ওই জাদুঘরে। রয়েছে পুরোনো দিনের সিনেমার পোস্টার, শুটিংয়ের ক্যামেরা, হলের প্রজেক্টরসহ অনেক কিছু। সোমবার সেই জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে আর্কাইভের কর্মী কাউসার আল আমিন জানালেন, কিছুদিন আগে নায়ক রাজ্জাকের ছেলে সম্রাট বাবার ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিস জাদুঘরে দিয়ে গেছেন।

ফিল্ম আর্কাইভ মূলত সিনেমার যত্নশীল সংরক্ষণাগার। পুরোনো দিনের সিনেমার ফিল্ম বাঁচিয়ে রাখতে ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভের পরামর্শ মেনে –৮ ডিগ্রি, –৪ ডিগ্রি, শূন্য ডিগ্রিসহ নানা তাপমাত্রায় সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়। তাতে হয়তো সেগুলো ৫০ বা ১০০ বছর টিকল। আরও বহুকাল টিকিয়ে রাখতে এগুলোকে ডিজিটাল সংস্করণে রূপান্তরে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্ম থেকে কিছু কিছু সিনেমা আবারও ৩৫ মিলিমিটারের নতুন ফিল্মেও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, সিনেমা দেখার পুরোনো যে আবহ, সেটা যেন হারিয়ে না যায়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফিল্মগুলো কীভাবে পরীক্ষা করা হয়, সেটাও দেখালেন ফিল্ম পরীক্ষক গোলাম মোস্তফা। মুখ ও মুখোশ থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধের ভিজ্যুয়াল, বঙ্গবন্ধুর নানা সময়ের ভিডিও রয়েছে এই সংরক্ষণাগারে।

এভাবে নিয়ম করে ফিল্ম পরীক্ষা করা হয়

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে রয়েছে পুরোনো দিনের সিনেমার বহু চিত্রনাট্য। জহির রায়হানের নিজ হাতে লেখা চিত্রনাট্য ছাড়াও টপ রংবাজ, লৌহ মানব, আয়না বিবির পালা, ভাবীর সংসার–এর মতো সিনেমাগুলোর মূল চিত্রনাট্য ও অনুলিপি যত্ন করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আর্কাইভের লাইব্রেরিতে। কথা হলো বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. নিজামূল কবীরের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র গুরুমুখী বিদ্যা। পূর্বসূরিদের মধ্যে যাঁরা ভালো ভালো কাজ করে গেছেন, সেসব দেখলে তরুণ নির্মাতারা যেমন অনেক কিছু শিখতে পারবেন, তেমনি তাঁরা অনুপ্রাণিত হবেন।’ আর্কাইভের জাদুঘর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কিছু মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা নিজেদের বা পরিবারের ব্যবহৃত স্মৃতিজড়ানো জিনিসপত্র জাদুঘরে জমা দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করছেন। দেশের অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকেরা এই জাদুঘর গড়ে তুলতে অসামান্য অবদান রাখছেন।’

আর্কাইভের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে কম খরচে হল ভাড়ার সুযোগ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া চত্বর, অফিসকক্ষসহ কোথাও শুটিংয়ের জন্য ভাড়াও নেওয়া হয় না। সিনেমার উদ্বোধনী প্রদর্শনী ও শুটিংয়ের জন্য ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। তবে পুরোনো সিনেমা দেখার বিরল এই সুযোগটির কথা মানুষের কাছে সেভাবে পৌঁছায়নি এখনো। মো. নিজামূল কবীর বলেন, ‘ফিল্মগুলো ভালো রাখতে নিয়মিত সেগুলো চালিয়ে দেখা হয়। এই সুযোগে সাধারণের জন্য প্রদর্শনীর সুযোগও রাখা হয়েছে, যাতে একটা চলচ্চিত্রমনস্ক প্রজন্ম গড়ে তুলতে কিছুটা ভূমিকা রাখা যায়।’

ফিল্ম আর্কাইভের জাদুঘর

সংরক্ষণ, গবেষণার পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে দেশ–বিদেশে জনপ্রিয়, আলোচিত সিনেমার সংগ্রহ বাড়ানো ও চলচ্চিত্র জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করায় মনোনিবেশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।