ফারুকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি, কেবিনে স্থানান্তর

অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
ছবি: প্রথম আলো

গত মঙ্গলবার দুপুরেই প্রথম আলোকে ফারুকের স্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ দীর্ঘদিনের অচেতন অবস্থা কাটিয়ে কথা বলছেন। চোখ মেলে তাকাচ্ছেন। চিকিৎসকেরা তাঁর অবস্থার এমন উন্নতি দেখে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে কেবিনে স্থানান্তর করেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফারুকের স্ত্রী ও সন্তান দুজনেই তা নিশ্চিত করেছেন।

ফারুকের ছেলে শরৎ বলেন, ‘পরশু রাতেই বাবাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, বাবা শারীরিক ডেভেলপমেন্ট ধীরগতিতে হবে। যে অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছিল বাবার শারীরিক কন্ডিশন, আমরা তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমত ও চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাবা এখন উন্নতির দিকে। আলহামদুলিল্লাহ।’

এক মাসের বেশি সময় ধরে কথা বলতে পারেননি নায়ক ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে অচেতন ছিলেন তিনি। এ সময় প্রতিটি দিন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন তাঁর স্ত্রী ফারহানা পাঠান। সৃষ্টিকর্তার কাছে স্বামীর সুস্থতার জন্য প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করেছেন। ২৭ এপ্রিল বিকেলে যখন স্বামী চোখ মেলে তাকান, কথা বলেন। তখন আবেগে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ফারুকের স্ত্রী ফারহানা, হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
প্রথম আলো

ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। চিকিৎসকদেরও আন্তরিকতার কোনো শেষ নেই। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের নেই। তাঁরা ফারুককে সারিয়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুরু থেকেই তাঁরা শুধু বলে আসছেন ধৈর্য ধরতে। এত দিন পর ধৈর্যের ফল পেলাম।’
চোখ মেলে তাকানোর পর ফারুকের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মঙ্গলবার ফারহানা পাঠান বলেন, ‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি আমাকে চিনেছ? উত্তরে ফারুক বলল, কেন চিনব না। এটা আবার কেমন কথা।’ ফারুকের কাছ থেকে এমন কথা শুনে আনন্দে মনটা ভরে গেছে ফারহানার। সেদিন তিনি আরও বলেন, ‘কত দিন পর তাঁর কণ্ঠস্বর শুনলাম। আমি ফারুকের কথা বলা শুনে হাউমাউ করে কেঁদেছি। প্রতিদিন আল্লাহকে কেঁদে কেঁদে ডেকেছি। অপেক্ষায় থেকেছি, কবে ফারুকের সঙ্গে কথা বলতে পারব। অবশেষে গতকাল দিনটি উপহার হিসেবে এসেছে। দেশ-বিদেশের মানুষের কাছ থেকে ফারুকের দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চাইছি।’

স্ত্রী ফারহানা পাঠান এবং দুই সন্তান তুলসী ও শরৎকে নিয়ে আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
ফাইল ছবি : ফারুকের পরিবারের সৌজন্যে

নায়ক ফারুক এখন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আট বছর ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ। ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান বলেন, ‘এ বছরের মার্চের শেষের দিকে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তাতে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন সেই আশঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে। প্রতিদিনই তাঁর ধীরে ধীরে নড়াচড়া বাড়ছে। কথাও বলছে। রক্তচাপ ও মস্তিষ্কে যে সমস্যা ছিল, তা চিকিৎসকেরা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। আরও স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ফারুককে আইসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়েছে।’

আকবর হোসেন পাঠান ফারুক
সংগৃহীত

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম দিকে সিঙ্গাপুরে যান অভিনেতা ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। পরীক্ষায় তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি। সিঙ্গাপুরে নিজের পরিচিত চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন পর তাঁর মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষে চিকিৎসার পর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরেন ফারুক। এরপর থেকে তিনি সুস্থই ছিলেন। চিকিৎসকেরা আগেই বলে দিয়েছিলেন, বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা থাকায় ফারুকের শরীর খারাপ হতে পারে। সে জন্য তিন মাস পরপর রুটিন চেকআপ করাতে হবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সেই নিয়মিত পরীক্ষা করাতে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অবশেষে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্ত্রী ফারহানা পাঠানকে নিয়ে সেখানে যান তিনি।
প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রেখেছেন অভিনেতা ফারুক। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।