সৃজনশীল ভাবনা বিপরীত হওয়ার কারণে পরিচালক-প্রযোজক কিংবা পরিচালক-অভিনয়শিল্পী দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো। কখনো কখনো এই দ্বন্দ্ব এতই চরমে পৌঁছায় যে অভিনয়শিল্পী কিংবা পরিচালক মাঝপথে ছবি ছেড়ে দেন। কিংবা ছবিটিকে নিজের বলে পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন। সম্প্রতি ঢালিউডে এমন ঘটনা বেড়েছে। সিনেমা ঘিরে এই অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর শোনা যাচ্ছে হরহামেশাই।
সম্প্রতি নবাব এলএবি ছবি ঘিরে এই অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর পাওয়া গেল। ছবির পরিচালক অনন্য মামুনের বিরুদ্ধে নায়িকা মাহিয়া মাহির অভিযোগ, শুটিং সেটে পরিচালকের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল পাননি।
তিনি বলেন, ‘ছবিতে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, আমার চরিত্রটি যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, ততটা রাখা হয়নি। এমনকি কয়েকটি গান প্রথমে যুক্তরাজ্যে করার কথা থাকলেও পরে দুবাই ও মালদ্বীপে করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই গানের শুটিং করা হয়েছে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। তিন দিন এই গানের শুটিং করার কথা থাকলেও এক দিনেই শেষ করা হয়! ছবির পোস্টার ও ট্রেলারেও আমার উপস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, এই ছবি আমার নয়।’
ছবিটি মুক্তি পায় একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। ছবির মুক্তি নিয়েও পরিচালকের সঙ্গে প্রযোজকের সমন্বয়হীনতা প্রকাশিত হয়ে যায়। দুই পর্বে ছবি মুক্তির সিদ্ধান্তে নাখোশও হন ভক্তরা। দুই পর্বে ছবি মুক্তির ব্যাপারে গণমাধ্যমে পরিচালক জানান, এটি ব্যবসায়িক কৌশল। অন্যদিকে প্রযোজক জানান, ছবির দৈর্ঘ্য বড় হওয়াতে নির্ধারিত সময়ে সম্পাদনার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি, তাই দুই পর্বে মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছবির নায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘এটা দর্শকের সঙ্গে অনেক বড় ধরনের প্রতারণা। দেশ-বিদেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা এমন প্রতারণার শিকার আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’
অবশ্য অনন্য মামুন বলেছেন, ‘আমরা কোনো প্রতারণা করিনি। এমন তো নয় যে ৯৯ টাকায় পুরো সিনেমা দেখাচ্ছি না। যাঁরা ৯৯ টাকায় টিকিট কেটেছেন, তাঁরা এক টিকিটেই প্রথম পার্ট দেখেছেন, পরের পার্টও দেখতে পাবেন।’
স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা ছবিটি ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রযোজক-নায়িকা দ্বন্দ্ব। ছবির নায়িকা নিশাত নাওয়ার সালওয়ার অভিযোগ, ছবির একটি গানে তাঁর অংশগ্রহণের কথা থাকলেও সেখানে স্বয়ং প্রযোজক মৌসুমী মিথিলা অংশগ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ছবির প্রযোজক ও নায়িকা মৌসুমী মিথিলা বলেন, ‘সালওয়াকে দিয়ে ওই গানে কাজ করানো হয়নি মানে এই নয় যে তাঁর গান বাদ দেওয়া হয়েছে। এডিটিং প্যানেলে বসে ছবিটি দেখে যদি মনে করি সালওয়ার অংশগ্রহণে একটি গানের দরকার আছে, তাহলে প্রয়োজনে তাঁকে দিয়ে আরেকটি গান করানো হবে।’
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বিশ্বসুন্দরী সিনেমা নিয়ে নায়ক সিয়াম আহমেদের বক্তব্য, ট্রেলার প্রকাশের আগে তাঁকে দেখানো হয়নি। সিয়াম বলেন, ‘ছবির ট্রেলার প্রকাশের আগে আমার দেখার সুযোগ হয়নি। ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখেছি। ট্রেলারটির কোনো বিশেষত্ব চোখে পড়েনি। মান দেখে হতাশ হয়েছিলাম।’
চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়হীনতা কিংবা সৃজনশীল ভাবনার পার্থক্যের প্রভাব পড়ে খোদ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ওপর। পরিচালক মতিন রহমান বলেন, ‘চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য এসব হওয়া মোটেও উচিত না। সিনেমা হচ্ছে যূথবদ্ধ একটা শিল্প। সবার অংশগ্রহণেই একটা সিনেমা সুন্দর হয়ে ওঠে। এসবের একটি যদি খর্ব হয়, তাহলে ভালো সিনেমা হয়ে ওঠে না।’
মতিন রহমানের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী এবং পরিচালক সারাহ বেগম কবরী। তিনি বলেন, ‘যদিও একটি সিনেমায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পরিচালকের। তবে ছবির সঙ্গে যুক্ত অন্য সবার মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। একটা চলচ্চিত্র প্রযোজকেরও না, পরিচালকেরও না; এটা টিমের সঙ্গে যুক্ত সবার। একটা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামত থাকতেই হবে।’