‘ভাবতেও পারিনি, সানী এমন একটা জিনিস আনতে পারে’

বিকেল তখন ৫টা বেজে ১০ মিনিট। কলবেলের শব্দে ভেতর থেকে একজন এসে দরজা খুলে দিলেন। গুলশান–১-এর লেকপাড়ের সেই বাড়িতে ঢুকে ডান দিকে তাকাতেই দেখা গেল ডাইনিং টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন অভিনেত্রী মৌসুমী। ফটোশুট ছিল বলে সময়মতো খাওয়া হয়নি। জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল সোমবার একাধিক সংবাদপত্রের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়েও সময় দিতে হবে। এসবের ফাঁকে তিনি কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

মৌসুমী।প্রথম আলো।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন

ধন্যবাদ। আপনাকে ও প্রথম আলোর পাঠকদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

প্রশ্ন :

নতুন স্বাভাবিকে জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো আয়োজন থাকছে?

আমরা একটি দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। তাই ভেবেছি, জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন করব না। তারপরও শুভেচ্ছাবিনিময় চলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শুভেচ্ছা জানায়। গণমাধ্যমে আমাকে নিয়ে লেখালেখি হয়। অনেক লেখা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে এগুলো আমার কাছে আশীর্বাদের মতো।

মৌসুমী।
ছবি:মনজুর কাদের।

প্রশ্ন :

জন্মদিনে জীবনের কোনো বিশেষ ঘটনা মনে পড়ছে?

জন্মদিন মানেই উৎসব। আমার জন্মদিনে মা-বাবা সবচেয়ে বেশি আনন্দ করতেন। আমি তাঁদের প্রথম সন্তান। তাই তাঁদের ভেতর অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। মা প্রায়ই বলতেন, ‘১০ মাসের অপেক্ষা, তারপর সন্তানের জন্ম। কত চিন্তা। সুস্থ সন্তান জন্ম নেবে কি না, এ নিয়ে নানা টেনশন। মা হওয়ার পর আমিও মায়ের অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করেছি। বাবা বেঁচে নেই। আমাদের বড় করতে তাঁর পরিশ্রমের কথাই মনে পড়ে।

মৌসুমী।
ছবি:মনজুর কাদের।

প্রশ্ন :

দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?

‘মৌসুমী’ হয়ে মানুষের মনে জায়গা করতে পেরেছি। সবাই আমাকে ভালোবাসেন—এটাই বড় অর্জন। জীবনের হিসাবের খাতায় তাকালে দেখি, আমি যা চেয়েছি, তা-ই পেয়েছি। এর বাইরে বাড়তি অনেক কিছু পেয়েছি।

প্রশ্ন :

কোথাও নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়েছে?

জীবনে সফলতা যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। তবে সেসব বলতে চাই না। আমি মনে করি, এসব বললে সৃষ্টিকর্তা নারাজ হন। কারণ আমি বিশ্বাস করি, যা পাইনি, তা আমার জন্য ছিল না।

শামসুজ্জামানের সূত্রাপুরের বাসায় মৌসুমী–সানি দম্পতি
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এখন আর কেমন গল্পে কাজ করার ইচ্ছে আছে?

আমরা অভিনয়শিল্পী। নতুন নতুন গল্পেই আমাদের আগ্রহ। আমারও নতুন সব গল্প ও চরিত্রে কাজ করার তীব্র ইচ্ছা। কোন ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই, তা এখনই বলতে চাই না।

প্রশ্ন :

আপনি ও ওমর সানী দুজনেই বাংলাদেশি সিনেমার একটা বড় অধ্যায়জুড়ে আছেন। আপনাদের সন্তান ফারদীনকে কিছুদিন নির্মাণ ও প্রযোজনায় দেখা গেল। মেয়ে ফাইজারই–বা কী ভাবনা?

ফারদীন কিছু কাজ করেছে। আমরা দুজনে তাকে সাপোর্ট করেছি। পরে আমরা দুজন তাকে বলেছি, আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমাদের দুজনের যা কিছু, সবই তো ওদের দুই ভাইবোনের। ফারদীন সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তাতে আমরা খুশি। এখন পারিবারিক বিজনেস দেখাশোনা করছে। অভিনয় না করলেও মা–বাবার অভিনয়জীবনের যা কিছু আছে, সবকিছু ফারদীনকেই ধরে রাখতে হবে। যেখানে একজন সেলিব্রেটির জীবনের সবকিছু, সাজিয়ে–গুছিয়ে আনা খুব টাফ হবে—সেখানে আমরা তো দুজন। আর আমার মেয়ে তো বাংলাদেশের নাগরিক না। মেয়েকে ভিসা নিয়েই এই দেশে থাকতে হয়। হয়তো উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাবে। তার ইচ্ছা পাইলট হবে। আমরা কিছু বলছি না, কারণ তার চাওয়াটাই আমাদের কাছে বড়। ফাইজা সিনেমার আশপাশেও নেই, ব্যবসাও পছন্দ করে না।

মৌসুমী ও ওমর সানী।
সংগৃহীত
আলাপ চলতে থাকল। এমন সময় দুটি উপহার বক্স নিয়ে মায়ের পাশে এসে বসল ছেলে ফারদীন ও মেয়ে ফাইজা। তারা দুজনে মায়ের হাতে জন্মদিনের আগাম উপহার তুলে দিলেন। মা মৌসুমীও বেশ উচ্ছ্বসিত।

প্রশ্ন :

সন্তানদের কাছ থেকে উপহার পেতে কেমন লাগে?

এটা কঠিন এক অনুভূতি। সত্যি মাঝেমধ্যে তাদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে কান্না চলে আসে। ওরা এত কিছু ভাবে আমার জন্য, ভাবতেই ...

প্রশ্ন :

আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়া তো কঠিন।

(হাসি) তারপরও আমার সন্তানেরা কীভাবে যেন টের পেয়ে যায়। ওরা সবকিছু দেখে তো...। আমি কিসে বেশি সারপ্রাইজড হই, তা বুঝে ফেলে। কোনটা দিলে আম্মু খুশি হবে, এত দিনে সেসব বুঝে ফেলেছে। যত সারপ্রাইজ হই, সন্তানেরা কাছে এসে জড়িয়ে ধরে আম্মু আই লাভ ইউ বললেই আর কিচ্ছু লাগে না।

মৌসুমী।
সংগৃহীত।

প্রশ্ন :

জন্মদিনে অনেক রকম উপহার পান। ওমর সানীর কাছ থেকে পাওয়া কোনো উপহার কি আপনাকে চমকে দিয়েছে?

একবার ভালোবাসা দিবসে সানী আমার জন্য হার্ট শেপের একটা কুশন বালিশ নিয়ে এসেছিল, লাল রঙের। আমি ভাবতেও পারিনি, সানী এমন একটা জিনিস আনতে পারে। (হাসি) দেখে তো আমি অবাক, জিজ্ঞেস করলাম, কে এনেছে? বলে, আমিই এনেছি। তুমি? সত্যি করে বলো, আমার কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি এনেছ (হাসি)। একে তো হার্ট শেপ, তার ওপর আই লাভ ইউ লেখা। বালিশটায় চাপ দিলে আবার আই লাভ ইউ বলত। ফারদীন তো অনেক খুশি, তার আব্বু এমন একটা উপহার নিয়ে এসেছে। সবাইকে দেখাচ্ছে। আম্মুকে যে আব্বু ভালোবাসে, তা সে জীবনেও দেখেনি। এটা দেখেই সে বিষয়টা টের পেয়েছিল মনে হয়। ঘটনাটা ফারদীনের ক্লাস এইটে পড়ার সময়ের কথা।

মৌসুমী

প্রশ্ন :

আপনাকে ও ওমর সানীকে পর্দায় একসঙ্গে দেখা যাবে কবে?

প্রযোজক ও পরিচালক ভাবলেই আমাকে ও সানীকে একসঙ্গে পর্দায় দেখতে পাবেন। কিছুদিন আগে আমি একটা ছবিতে সই করেছি। সেই ছবিতে সানীরও অভিনয়ের কথা চলছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক মিলে যায়, তাহলে ভক্তদের বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।