ভেতরে-ভেতরে পুড়ে মরছিলাম আমি

১৫ বছর আগে নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণ সাইমনের
ছবি: সংগৃহীত

১৫ বছর আগে নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর সঙ্গে পরিচয় হয় তরুণ সাইমনের। এই নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগের পর সিনেমায় অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর। পরে অভিনয় নেশা থেকে পেশা হয়ে ওঠে। পরপর গুরুর তিনটি ছবিতে অভিনয়ের পর আট বছর বিরতি। দীর্ঘ এ সময়ে গুরুর ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ না পাওয়ায় ভেতরে-ভেতরে পুড়ছিলেন ‘পোড়ামন’ ছবির এই অভিনেতা।

ছবিতে অভিনয় শুরুর আগে চার বছর ওস্তাদের সঙ্গে ছিলেন সাইমন সাদিক। শুটিং ও অভিনয়ের খুঁটিনাটি শিখতেন। অনেকটা সহকারীর মতোই সাইমন গুরু জাকির হোসেন রাজুর সঙ্গে থাকতেন। এ সময়ে তাঁর সিনেমার প্রতি ভালোবাসা জন্মে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অভিনয় করবেন। প্রথমে এই নির্মাতার ‘জি হুজুর’ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিতে অভিনয় করে সাইমন বেশ প্রশংসা পান। পরে অভিনয় করেন ‘পোড়ামন’ ছবিতে। পরপর ওস্তাদের তিনটা ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। সাইমন বলেন, ‘আমি ফিল্মের কিছুই বুঝতাম না। যতটুকু জেনেছি, সেটা গুরুর জন্য। তিনি আমাকে হাতে–কলমে শিখিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে পরিচিত করেছেন। আমার অর্জনটাই তাঁর কাছে থেকে পাওয়া।’ গুরু শুধু তাঁকে অভিনেতা হিসেবেই নয়, কীভাবে মিডিয়ায় এগিয়ে যেতে হবে, সেসব পরামর্শও দিয়েছেন।

সাইমন সাদিক
ছবি: সংগৃহীত

‘পোড়ামন’ সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ারে একধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন সাইমন সাদিক। ছবিটির প্রশংসা ভক্তদের কাছ থেকে এখনো শোনেন তিনি। সেই ছবির দ্বিতীয় পার্ট নির্মাণের ঘোষণায় খুশি ছিলেন এই অভিনেতা। পরে জানতে পারেন, সেই ছবিতে তাঁকে রাখা হচ্ছে না। তিনি ছুটে যান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অফিসে। সেদিন একজন শিল্পীর জায়গা থেকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এই অভিনেতা জানান, সেদিন তাঁর খুবই আফসোস লেগেছিল। ছবিতে মন থেকে তিনি অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। সেদিন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ক্যারিয়ারে এমন ঘটনাকে খুবই স্বাভাবিক মনে করেন এই অভিনেতা। তিনি মনে করেন, মিডিয়ায় কাজ করতে গেলে কোনো অভিমান পুষে রাখা যাবে না। নিয়তি মেনেই এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারে বিভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এগুলো জীবনের অংশ। জীবন তো সমান্তরালভাবে চলে না। এগুলো প্রয়োজনে হয়। জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য দুঃসময়ে হতাশ হই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্যারিয়ার নিয়ে খুবই খুশি। আমার কারও ওপর কোনো মান–অভিমান নেই। “পোড়ামন২” থেকে আমার ওস্তাদ নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু, সহ–অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি, আমিসহ প্রায় পুরো টিম বাদ পড়েছিল। সেদিন মন খারাপ হলেও ভাগ্যকে মেনে সেই অফিস ছেড়ে চলে এসেছিলাম। পরে “পোড়ামন২” দেখে ভালো লেগেছিল।’

গুরু নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন সাইমন
ছবি: সংগৃহীত

সাইমন সাদিক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি ভেতরে-ভেতরে পুড়ে মরছিলাম। কবে আবার আমার ওস্তাদের সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পাব।’ অবশেষে সেই আর্তনাদের অবসান হলো। জানা গেল, তার ‘আর্তনাদ’ ঘুচিয়েছে ‘আর্তনাদ’। ৮ বছর আগে শেষবারের মতো তিনি গুরুর ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি গুরুর সঙ্গে কাজ করার সময় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকি। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারাটাই অনেক বড় কিছু। তিনি সবকিছু আমাকে বুঝিয়ে দেন। আমি সেভাবেই করি। তাঁর কাছ থেকে আমি সব সময় শিখতে চাই। তিনি প্রতিটি শট কেন নিচ্ছেন, সেটার কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁকে কপি করতে পারলেই সিনেমাটি নিঃসন্দেহে সুন্দর হবে।’

সাইমন ‘জান্নাত’ ছবির জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এটাই তাঁর এক দশকের ক্যারিয়ারে সেরা অর্জন। জানালেন তাঁর ‘আর্তনাদ’ ছবিটির শুটিং মে মাসের দিকে শুরু হবে। তিনি সম্প্রতি তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বদিউল আলমের পরিচালনায় একটি অনুদানের ছবিতে কাজ করছেন তিনি। তাঁর হাতে রয়েছে ‘লাইভ’, ‘দায়মুক্তি’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘গোপন সংকেত’সহ একাধিক সিনেমার কাজ।

সাইমন ‘জান্নাত’ ছবির জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান
ছবি: সংগৃহীত