মন জয় করে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সিনেমাগুলো

গত দশকে দর্শকপ্রিয় সিনেমার তালিকায় ছিল মনপুরা, মাটির ময়না, হাজার বছর ধরে ও দারুচিনি দ্বীপ

অনেক সিনেমার কথা দর্শক ভুলতে পারেন না। নির্মাণগুণে সেগুলো দাগ ফেলে যায় দর্শকহৃদয়ে। বছর ঘুরলে দর্শকের হৃদয়ের আঁচ পুরস্কার ও সম্মাননা হয়ে পৌঁছে যেত নির্মাতা ও শিল্পী–কলাকুশলীদের ঘরে। এক দশক পেছনে ফিরে তাকালেই মনে পড়ে যাবে সে রকম বেশ কিছু সিনেমার কথা।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায় এক তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালকের ছবি মনপুরা। নাটকের শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী, ফারহানা মিলি, ফজলুর রহমান বাবু ও মামুনুর রশীদরা সেই ছবির মূল অভিনেতা। আর নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের প্রথম ছবি সেটি। সেই ছবির গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘সোনাই হায় হায় রে’, ‘নিথুয়া পাথারে’, ‘কেহ লইল আতর লোবান’, ‘যাও পাখি বলো তারে’ গানগুলো এখনো মানুষকে সেই ছবি উপভোগের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। অথচ নাটকের জন্য চিত্রনাট্য লিখেছিলেন পরিচালক। পরে সেটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন।

২০০৭ সালে মুক্তি পায় তৌকীর আহমেদ পরিচালিত দারুচিনি দ্বীপ ছবিটি। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল এই সিনেমা। একঝাঁক তারকা অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে। ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ গানটি পেয়েছিল দারুণ জনপ্রিয়তা। একদল তরুণ–তরুণী মিলে সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে যাওয়ার গল্প নিয়ে সিনেমা। গল্পের কারণে সিনেমাটি ভীষণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দিয়েছিল তরুণ দর্শকদের।

২০০৫ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস হাজার বছর ধরে অবলম্বনে এই নামের সিনেমা। একে তো এই উপন্যাসের কাহিনি অনেকের জানা, তার ওপর এটি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল স্কুলের সহপাঠ। ফলে এই কাহিনি নিয়ে ছবি নির্মাণ একদিকে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ ও অন্যদিকে চ্যালেঞ্জের। প্রয়াত কথাশিল্পী জহির রায়হানের স্ত্রী অভিনেত্রী সুচন্দা সেই ঝুঁকি নিয়ে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। সরকারি অনুদানে নির্মিত এ সিনেমা দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল দর্শকের কাছে। ছবিতে টুনির চরিত্রে অভিনয় করেন নবাগত শশী ও মন্তু চরিত্রে রিয়াজ। ছবিতে ব্যবহৃত ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছো শাপলার ফুল’, ‘আশা ছিল মনে মনে’ গানগুলো আজও জনপ্রিয়।

২০০২ সালে মুক্তি পায় মাটির ময়না ছবিটি। দেশের সিনেমার ইতিহাসে এটি অন্য রকম এক মাইলফলক রচনা করেছিল। দেশের মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলা রক্ষণশীলতাকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে সেখানে। নবীন নির্মাতা, চলচ্চিত্রের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশের সিনেমার গবেষকদের চোখে এটি এখনো একটি আদর্শ মানের সিনেমা। অকালপ্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রে আত্মনিবেদন এ রকম এক ছবি নির্মাণের পেছনে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই দশকের আলোচিত ও মনের রাখার মতো ছবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ঘানি (২০০৬), ব্যাচেলর (২০০৪), জয়যাত্রা (২০০৩), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), লালসালু (২০০১), প্রেমের তাজমহল (২০০১) প্রভৃতি। মানুষের হৃদয় জয় করার পর এ ছবিগুলো জিতেছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কোন সিনেমা সত্যিই দর্শকের হৃদয় জয় করেছে, দশক না পুরালে তা বোঝা যায় না। তবে এ–ও দেখা গেছে, কিছু কিছু ছবি দর্শক দেখার ঘণ্টাখানেক পরই ভুলে যান। ছবিটি দেখে শেষ করতে পারেন না, পারলেও সময় ব্যয় করার জন্য অনুশোচনায় ভোগেন। আবার কিছু কিছু সিনেমার স্মৃতি কখনোই ভুলেন না দর্শকেরা।