মান্নার নামে পান্নার প্রতারণা, বাক্‌রুদ্ধ শেলী মান্না

ঢালিউডের প্রয়াত অভিনেতা মান্নাছবি:সংগৃহীত

ঢালিউডের প্রয়াত অভিনেতা মান্নার নামে প্রতারণা করছেন পান্না চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। ১৭ ফেব্রুয়ারি মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা মান্নার ভক্তদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা চাইছেন তিনি। সবাইকে বলছেন, শেলি মান্না ও অভিনেতা অমিত হাসানের নির্দেশে মান্না ফাউন্ডেশন গড়ে তুলছেন তিনি। মান্নার ভক্তদের নিয়ে তিনি যাবেন প্রিয় অভিনেতার কবর জিয়ারত করতে। সেখানে আয়োজন করবেন কাঙালিভোজ।

ঘটনাটি শুনে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না
ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাটি শুনে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না। শুরুতে ফেসবুকে ঘটনাটি জানতে পারেন তিনি। একজন মৃত মানুষের নামে কেউ এমন প্রতারণা করে ব্যবসা করতে পারে, এটা তিনি মানতে পারেননি। ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য পান্না চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তিকে ফোন করিয়েছিলেন মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না। তিনি জানান, পান্না একেকবার একেক কথা বলেছেন। একবার তিনি বলছেন, শেলী মান্না এবং অমিত হাসানের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই ফাউন্ডেশনের পেছনে তাঁরা আছেন। তাঁদের নিয়েই কবর জিয়ারত করবেন। তখন শেলী পরিচয় দিলে ওই ব্যক্তি কথা ঘোরাতে থাকেন। শেলী বলেন, ‘আমি শুনেছি সেই লোক মান্না ফাউন্ডেশনের নামে সদস্য সংগ্রহ করছিলেন। এ ছাড়া আগামী ১৭ তারিখ মৃত্যুবার্ষিকীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন। কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার খবরও পেয়েছি। আমাদের না জানিয়ে মান্নার নামে এটা একধরনের প্রতারণা। আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা এখনই বন্ধ না করলে প্রতারণা চলতেই থাকবে।’  

টাঙ্গাইলের একটি কলেজে পড়াশোনা করেন মোহম্মদ কামরুল। তিনি মান্নার ভক্ত। প্রিয় তারকা মারা যাওয়ার পর কালীহাতি থেকে ২৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মান্নার কবর জিয়ারত করতে যান তিনি। এবারও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সম্প্রতি ফেসবুকে পান্না চৌধুরীর পোস্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন। সেই পোস্টে লেখা ছিল, ‘১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মান্না ভাইয়ের ১৩তম প্রয়াণ দিবস। মান্না ভাইয়ের মৃত্যুর পর ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল গঠন করা হয় মান্না ফাউন্ডেশন। মান্নার প্রয়াণ দিবসে নায়কের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে ১৭ ফেব্রুয়ারি যাঁরা মান্না ভাইয়ের কবর জিয়ারত ও বাদ জোহর মান্না ভাইয়ের কবর–সংলগ্ন এলেঙ্গা বাগানবাড়ি মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং দোয়ায় অংশ নেবেন, তাঁরা নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে সাহায্য করুন।’ কামরুল নিজের ফোন নম্বর দেন। পরে পান্না তাঁকে মেসেঞ্জারে জানান, তিনি টাঙ্গাইলে রান্নাবান্নার আয়োজন করবেন। এ জন্য ৫০০ টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়েছে। মোহাম্মদ কামরুল বলেন, ‘তাঁর কথায় আমার সন্দেহ হয়। আমরা কাজীপুরের কয়েকজন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই নিজেরাই মান্না ভাইয়ের কবরে গিয়ে ফুল দিয়ে আসব।’

মান্নার ভক্ত পরিচয় দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি অস্বীকার করেন পান্না চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মান্নার আরেক ভক্ত ঢাকা থেকে জানান, তিনি পান্নার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘পান্না বিভিন্ন সময় নিজেকে মান্নার ছোট ভাই পরিচয় দিতেন। সেভাবেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। এফডিসিতে তাঁর অনেক ক্ষমতা। তাঁর সঙ্গে চাঁদা নিয়ে কথা হয়েছিল। পরে আর পাত্তা দিইনি।’

বেশ কয়েকবার ফোন করার পর পান্না চৌধুরীকে পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে মান্নার ভক্ত পরিচয় দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ভুল স্বীকার করে জানান, তিনি চেয়েছিলেন শেলী মান্নার সঙ্গে দেখা করবেন। এ জন্য আগেভাগে মান্নার ভক্তদের বলেছিলেন শেলী মান্নার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তিনি শেলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। শুধু অমিত হাসানের সঙ্গে কথা হয়েছিল। এ ছাড়া মান্না ফাউন্ডেশনের সদস্য সংগ্রহের কথা তিনি ভুলবশত বলেছিলেন। তবে চাঁদা চাওয়ার ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেন। বরং তিনি নিজের অর্থায়নেই মিলাদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা নিয়ে একটা ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। একজন ভক্ত হয়ে সবাই মিলে কবর জিয়ারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখন মানসম্মান নিয়েই বিপদে আছি। শুধু শুধু আমাকে শুনতে হচ্ছে, ধান্দাবাজ, প্রতারক, ভণ্ড। আমি সেই রকম ছেলে না।’

ফেসবুকে পান্না চৌধুরীর পোস্ট
ছবি: সংগৃহীত