মেয়েদের কাছে জীবনের সেরা উপহার পেলেন ফেরদৌস

সন্ধ্যা থেকেই বুঝতে পারছিলেন, কেমন যেন দূরে দূরে থাকছে দুই মেয়ে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়তে থাকে এ দূরত্ব। মেয়েরা একসময় কায়দা করে তাঁকে ড্রয়িংরুমে পাঠিয়ে দিল। রাত ঠিক ১২টার সময় একটা কেক নিয়ে হাজির হলো তারা, জানাল শুভ জন্মদিন। বাবার জন্মদিন উপলক্ষে নিজ হাতে কেকটা বানিয়েছে তারা। মেয়েদের কাণ্ড দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকাই ছবির এই নায়কের কাছে এই কেকই তাঁর জীবনে পাওয়া সেরা উপহার।

দুই মেয়েসহ ফেরদৌস

শৈশব, কৈশোর এবং অভিনয় শুরুর পরে পরিবার, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অনেক উপহারই পেয়েছেন ফেরদৌস। এর মধ্যে সেরা রাতে মেয়েদের কাছ থেকে পাওয়া এই উপহার। মেয়েদের এই চেষ্টা যেমন তাঁকে আবেগে ভাসিয়েছে, তেমনি বাবা হিসেবেও নিজেকে সার্থক মনে হয়েছে। মেয়েদের কেকটি ছিল অবিশ্বাস্য সুন্দর। বোঝার উপায় নেই বাসায় বানানো। দুই স্তরের এই চকলেট কেক দেখে মুগ্ধ অভিনেতা বলেন, ‘বুঝতে শেখার পর থেকেই প্রতিবার কিছু একটা করার চেষ্টা করে মেয়েরা। গতবার রান্না করেছিল। এবার কেক বানানো শিখেছে। আমার জন্য তারা এতটা পরিশ্রম করেছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। চাইলেই তারা কেক কিনতে পারত। মনে হচ্ছে, আমি সব সময় যেভাবে চেয়েছি, ঠিক সেভাবেই মেয়ে দুটি বেড়ে উঠছে।’

মেয়েদের তৈরি কেক
ছবি: সংগৃহীত

ফেরদৌস জানান, তিনি নিজেও অল্পে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মানুষের প্রতি তাঁর যেমন ভালোবাসা রয়েছে, মেয়েদের মধ্যেও এ গুণ ছড়িয়ে দিতে চান। বাবা হিসেবে প্রতিবার জন্মদিনে দুই মেয়েকে সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় ভাবতাম, আমার মেয়েরা কেমন হবে? ওরা কি আমার মতো হতে পারবে? এ জন্য আমি যা যা করি, আমার আচার–আচরণ, ব্যবহার, আমার গুণগুলোই ওদের শিখিয়েছি। তাদের মধ্য মানবিক বোধ, মানুষের কষ্ট বোঝা, এই বিষয়গুলো আছে। অভিনেতা হিসেবে সফল কি না, জানি না, তবে বাবা হিসেবে মনে হয় সফল।’

করোনার কারণে দুই বছর ধরে একান্তে পরিবারের সঙ্গে বিশেষ এই দিন কাটাচ্ছেন
ছবি: সংগৃহীত

‘বুকের ভিতর আগুন’ দিয়ে বড় পর্দায় ফেরদৌসের অভিনয় শুরু। পরে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’তে অভিনয় করে দুই বাংলায় খ্যাতি অর্জন করেন। এই সিনেমা মুক্তির পরের জন্মদিনে বহু মানুষের উপহারে সয়লাব হয়েছিল তাঁর বাসা। বেশির ভাগই অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে পাওয়া। সেই থেকে এখনো নিয়মিত তাঁকে উপহার পাঠান ভক্তরা। এবার তাঁর বাসায় দিনাজপুর, রাজশাহী থেকে লিচু ও আম এসেছে। প্রিয়জনদের কাছ থেকেও উপহার পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে ভক্তদের ভালোবাসাই আমার কাছে সেরা অর্জন। সারা বছর হয়তো খোঁজ রাখেন না, কিন্তু আজকের দিনটি তাঁরা ভোলেন না। উপহার পাঠিয়ে স্মরণ করেন। ছোট একজন মানুষ হিসেবে সান্ত্বনা, হয়তো অভিনয় দিয়ে জীবনে কিছু করতে পেরেছি।’

মেয়েকে নিয়ে ফেরদৌস
ছবি: সংগৃহীত

জন্মদিনের প্রথম প্রহরে কেক কাটার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সহকর্মী, কাছের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হয়েছে। তাঁদের অনেকের কাছ থেকেই শুনতে হয়েছে, সেই আগের মতোই আছেন ফেরদৌস। বয়স বাড়ছে না। রহস্য কী? শুনেই হাসলেন এই অভিনেতা, ‘ভালো থাকার জন্য সব সময় একটি সুস্থ মন দরকার। জীবনটাকে কীভাবে যাপন করছি, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনোই কাউকে নিয়ে কুটিল কিছু চিন্তা করি না। আমাকে নিয়ে যারা এসব চিন্তা করে, সেগুলো নিয়েও ভাবি না। জটিলতামুক্ত জীবন যাপন করি। আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। পরিবারের সঙ্গে সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি।’

ফেরদৌস
ছবি : সংগৃহীত

করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে একান্তে পরিবারের সঙ্গে বিশেষ এই দিন কাটাচ্ছেন। এবারও বাসায়ই থাকবেন। জানালেন, জন্মদিনে অনেকেই ধুমধাম করে উপহার দিতে চান। কিন্তু এসব বড় আয়োজন তাঁর পছন্দ নয়। দুবার শুটিংয়ে জন্মদিন পালন করেছিলেন। একবার তাঁর সহকর্মী ছিলেন শাকিব খান ও শাবনূর। মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে ক্যামেরার সামনে গিয়ে দেখেন, প্রিয় দুই অভিনেতা ও ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ সিনেমা নির্মাতা হাসিবুল ইসলাম তাঁর জন্য জন্মদিনের আয়োজন করেছেন। সেদিন লজ্জা পেয়ে কেক কেটেছিলেন তিনি। ফেরদৌস বলেন, ‘ঘটা করে জন্মদিন পালন করতে আমার লজ্জা লাগে। শাবনূর, শাকিব খানদের সামনে কেক কাটতে গিয়ে লজ্জা পেয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য ভালোই লাগছিল। কারণ, এটাও তো আমার আরেকটি পরিবার।’

ফেরদৌস বর্তমানে আফজাল হোসেনের ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’, হৃদি হকের ‘১৯৭১: সেই সব দিনগুলি’, নঈম ইমতিয়াজের ‘গাঙচিল’ ও ‘জ্যাম’ এবং নুরে আলমের ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’ সিনেমাগুলো নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র গাঙচিল এর একটি দৃশ্যে আফজাল হোসেন ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস
ছবি: সংগৃহীত