অনিয়ম মানতে না পেরে পদত্যাগ করেছি

সোহেল রানা।
প্রথম আলো
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। ১১ বছর ধরে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। রাজনীতি নিয়ে অন্য রকম স্বপ্ন দেখা মানুষটির হঠাৎ পদত্যাগের কারণ কী, জানতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পদত্যাগের কারণ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বললেন ঢালিউডের এই অভিনেতা।
প্রশ্ন:

কী এমন হলো যে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করলেন?

পদত্যাগের কারণ বলতে হলে তো অনেক লম্বা আলোচনা করতে হবে। অসংখ্য কারণ। অল্প কথায় বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন:

অল্প কথায় আমাদের পাঠকের জন্য যতটুকু বলা যায়, ততটুকুই বলুন।

সোহেল রানা
সংগৃহীত

অল্প কথায় বলতে গেলে শুরুতেই বলব, তৃণমূল কর্মী যাঁরা, তাঁদের মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রতিটি পার্টিতে কিছু কর্মী থাকেন, যাঁরা নিজের পকেটের টাকাপয়সা, শরীরের রক্ত থেকে শুরু করে সবকিছু দিয়ে দলের জন্য কাজ করেন। তাঁরা সব সময় দলকেই জীবন মনে করেন। সেই সব ত্যাগী নেতা-কর্মীকে সম্মান জানানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সুযোগ না দিয়ে কিছু অপ্রয়োজনীয় লোককে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। আমার কাছে এই বিষয়গুলো ভালো লাগেনি। অনেকবার আমি প্রতিবাদও করেছি। এসব অনিয়ম মানতে না পেরে পদত্যাগ করেছি।

প্রশ্ন:

তবে কি বলবেন দলটির এখনকার সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তরা উপযুক্ত নন?

এখন যাঁরা আছেন, তাঁরা উপযুক্ত নন, সেটা বলব না। কিন্তু আমি বলতে চেয়েছি, যাঁরা আছেন, তাঁদের চেয়ে আরও উপযুক্ত অনেকেই আছেন। মেসি ফুটবল খেলতে পারেন, আমিও পারি। তার মানে মেসিকে বাদ দিয়ে আমাকে দলে নিলে তো হবে না।

প্রশ্ন:

তার মানে, আপনি নিজেকে জাতীয় পার্টির মেসি মনে করেন?

আমি তো বিষয়টা সেভাবে বলিনি। এখানে মেসি রূপক অর্থে এসেছে। আমি বলতে চেয়েছি, যেসব নেতা-কর্মী অনেক দিন পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করেছেন, অভিজ্ঞতা আছে, নিবেদিত প্রাণ, দলে তাঁকে মূল্যায়ন করার সময় এলে তো মূল্যায়নটুকু করা উচিত। অন্য যাঁদের মূল্যায়ন করা হয়েছে তাঁরা ফিট নয়, তা বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি, তাঁদের চেয়েও ফিট, এগিয়ে থাকা নেতা-কর্মী আছেন, যাঁদের অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়েছে।

প্রশ্ন:

পদত্যাগ করার আগে কারও সঙ্গে আলাপ করেননি?

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন জীবিত ছিলেন, সবাই জানত আমি তাঁর লোক। তাঁর একটা অন্য রকম পরিচয় ছিল। এ দেশের সব মানুষই তাঁকে চিনতেন। আজ আমার পরিচয়, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার, কিন্তু জাতীয় পার্টি এখন কী? জাতীয় পার্টি কি প্রো-আওয়ামী লীগ? ১৪ দলের সদস্য? বিরোধী দল? নাকি জাতীয় পার্টি সাপোজিশন পার্টি? জাতীয় পার্টি যে কী, তা আমি নিজেই বুঝি না (হাসতে হাসতে)।

প্রশ্ন:

শোনা যাচ্ছে, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেখানে মনোনয়ন না পাওয়াটা কি পদত্যাগের অন্যতম কারণ?

এটা মিথ্যা কথা, সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। প্রার্থী আমি কখনোই হতে চাইনি। এই ধরনের ইচ্ছার কথাও আমি কাউকে বলিনি। জীবনে যদি চাইতেই হতো, ৪০ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্ক যেখানে ছিল, সেখানেই তো চাইতাম, তাই না? আরেকটা কথা, মাসুদ পারভেজ কোনো দিন কিছু চেয়ে নেয় না।

১৯৯০ সালের ১৬ আগস্ট সোহেল রানা চিকিৎসক জিনাত বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সংগৃহীত
প্রশ্ন:

তাহলে এ রকম কথা প্রচার হলো কেন?

আমি যে মনোনয়ন চেয়েছি, তার প্রমাণ কী? আমি তো এখনো জানি না, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে কি হয়নি। তারপরও কেন ছড়ানো হলো এসব, জানি না।

প্রশ্ন:

অন্য কোনো দলে যোগ দেবেন, নাকি রাজনীতিই করবেন না?

ভবিষ্যতের কথা বলাটা মুশকিল। এটা পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তার হাতে। সৃষ্টিকর্তা যদি আমাকে কাল পৃথিবী থেকে নিয়ে যান, আমি কীভাবে কী বলব। তাই ভবিষ্যতের বিষয় ভবিষ্যতের ওপরই ছেড়ে দিয়েছি।

প্রশ্ন:

তারপরও তো মানুষের সুপ্ত ইচ্ছা থাকে।

না না, আমার মনে এখনো তেমন কোনো কিছু নেই। যদিও আমাকে তিন-চার জায়গা থেকে বলা হয়েছে, কিন্তু আমি সবাইকে বলেছি, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এখনো করছি না। কারণ, এখনো তো মানুষ করোনা নিয়ে চিন্তা করেই অস্থির। রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করব কখন? আমার আদর্শ, সম্মানবোধ, ব্যক্তিত্ব, নীতি, দেশের প্রতি ভালোবাসা আর সবার ওপরে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা—এ নিয়েই আছি, এটা নিয়েই থাকতে চাই। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আগেও ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এর বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না।

বনভোজনের মঞ্চে বক্তৃতা দেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সোহেল রানা। ছবি: ফেসবুক থেকে