রাজ্জাকের সঙ্গে নায়িকাদের প্রথম দেখা, শেষ দেখা

সুচন্দা, কবরী ও ববিতা কথা বললেন তাঁদের নায়ক রাজ্জাককে নিয়েকোলাজ

অভিনেত্রী সুচন্দার মতে, সহশিল্পীদের কাছে রাজ্জাক ছিলেন সহজাত। কবরী জানালেন, তাঁদের মধ্যে মান-অভিমানের শেষ ছিল না। শুধু অভিনয় দিয়েই দেশ–বিদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মন জয় করেছিলেন তিনি। একইভাবে তিনি জয় করেছিলেন সহশিল্পীদের হৃদয়ও। আজ ২৩ জানুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা রাজ্জাকের জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর নায়িকা সুচন্দা, কবরী ও ববিতারা জানালেন রাজ্জাকের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ও শেষ দেখা হওয়ার স্মৃতি।

রাজ্জাকের প্রথম নায়িকা সুচন্দা
সংগৃহীত

তিন সপ্তাহ আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে রাজ্জাকের এক নায়িকা সুচন্দার। নায়কের জন্মদিনের স্মৃতি মনে করে প্রথমেই বললেন, ‘কী আনন্দই না হতো এই দিনে!’

ববিতার সঙ্গে অসংখ্য হিট রোমান্টিক সিনেমা উপহার দিয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাক
সংগৃহীত

ষাটের দশকে সুচন্দা তখন সুভাষ দত্তের কাগজের ফুল ছবিতে অভিনয় করছিলেন। দ্বিতীয় ছবি জহির রায়হানের বেহুলার পোশাকের নকশা দেখতে যান প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জহির রায়হানসহ আরও কয়েকজন। সুচন্দা বলেন, ‘আমিও তখন নতুন। পোশাকের নকশা দেখে বাসায় ফিরব। জহির রায়হান সাহেবও বের হলেন। দেখলাম, গেঞ্জি পরা একটা ছেলে বেঞ্চের ওপর বসা। জহির সাহেবকে দেখে ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। কাছে গিয়ে ছেলেটির পিঠ চাপড়ে তিনি বললেন, “আপনি তো অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। যান, আপনাকে হিরো বানিয়ে দিলাম। বেহুলা ছবির নায়ক লখিন্দর চরিত্রে অভিনয় করবেন। আর ইনিই আপনার নায়িকা।” রাজ্জাক হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন। চোখ ছলছল করে উঠল। পা ছুঁয়ে সালাম করলেন।’

বেহুলা মুক্তি পায়। পরিচালক জহিরের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় নায়িকার। সুচন্দা বলেন, ‘বিয়ের পর দুই পরিবারের বাসায় যাতায়াত ছিল রাজ্জাকের। জীবিত রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয় এফডিসিতে। চাষী নজরুল ইসলামের শেষবিদায়ের দিন। সেদিন অনেক কথা হয়। এরপর অসুস্থতার খবর শুনে ফোনে কথা হয়।’

জুটি হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রাজ্জাক-কবরী।

বাংলাদেশি সিনেমায় রাজ্জাক-কবরী জুটি আলোড়ন সৃষ্টি করে রেখেছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সেই রাজ্জাকের সঙ্গে প্রথম দেখায় নাকি কোনো অনুভূতিই হয়নি কবরীর। দুজন তখন নিজেদের মতো করে সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। সুভাষ দত্ত পরিচালিত কবরীর সুতরাং সিনেমাটি মুক্তি পেল সেবার। যোগাযোগ নামের আরেকটি সিনেমার সূত্র ধরে গাজী মাজহারুল আনোয়ারদের মগবাজারের বাসায় দেখা হয় রাজ্জাক–কবরীর। সেদিনই প্রথম সামনাসামনি কথা হয় তাঁদের। খাওয়াদাওয়া আর আড্ডাও চলে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রাজ্জাক ও কবরীকে নিয়ে সিনেমাটি আর তৈরি হয়নি।

রাজ্জাক ও কবরীর শেষ দেখা হয় চ্যানেল আইয়ের একটি অনুষ্ঠানে।

‘রাজ্জাকের সঙ্গে প্রথম দেখার ঘটনাটা বেশ মজার’, বলেন ববিতা। তিনি বলেন, ‘আমরা তখন গেন্ডারিয়া থাকি। বয়স ৯-১০ বছর। বেহুলা, আনোয়ারাসহ রাজ্জাক ভাইয়ের আরও কী কী ছবি যেন মুক্তি পেয়েছে। সুচন্দা আপার সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেই সুবাদে আমাদের বাসায় তাঁর যাতায়াত ছিল। জহির রায়হান ভাইও ছিলেন। আমাদের ঘরে একটা ফ্রিজ ছিল। সেটার দরজা খুলে আমি প্রায়ই ভেতরে ঢুকে থাকতাম। একদিন রাজ্জাক ভাইয়ের সামনে পড়ে যাই। ফ্রিজের দরজা খুলে উঁকি মারতেই তিনি দেখে ফেলেন। বলে ওঠেন, ‘ওমা, তুমি ফ্রিজের মধ্যে কী করছ?’

রাজ্জাকের সঙ্গে ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিতে ববিতা।

মারা যাওয়ার আগে গুলশানের বাড়ি লক্ষ্মীকুঞ্জে রাজ্জাকের সঙ্গে ববিতার দেখা হয়। ববিতা বলেন, ‘সেদিন অনেক গল্প করেছিলাম। তাঁকে বলেছিলাম, বাড়িটি নতুন করে বানানো হয়েছে। একদিন আপনি আসবেন। আমি নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াব। বাড়িতে বাগান করেছি, ঘুরিয়ে দেখাব। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল পারিবারিক। আরেক দিন ফোন করে শুনি তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে কক্সবাজারে গেছেন। এরপর আর আসা হয়নি।’