শাকিবের সিদ্ধান্ত হাস্যকর: রুবেল

শাকিব খান। ছবি: সংগৃহীত
শাকিব খান। ছবি: সংগৃহীত

করোনা–পরবর্তী চলচ্চিত্রজগৎ বাঁচাতে ছবিপ্রতি পারিশ্রমিক তিন ভাগের এক ভাগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢালিউড তারকা শাকিব খান। এই সময়ে এসে তাঁর এ সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন ঢালিউডের একসময়ের সাড়া জাগানো অভিনেতা রুবেল। তিনি মনে করেন, এ সিদ্ধান্ত আরও পাঁচ বছর আগে নিলে সেটা চলচ্চিত্রাঙ্গনের কাজে আসত।

করোনা–পরবর্তীকালে চলচ্চিত্রজগৎ বাঁচাতে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঢালিউডের নায়ক শাকিব খান। গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এ খবর পড়ে প্রতিক্রিয়া জানান নায়ক রুবেল। তিনি বলেন, ‘এখন শাকিবের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হাস্যকর। এখন কে সিনেমা বানাতে টাকা বিনিয়োগ করবে? এ সিদ্ধান্ত যদি সে আরও পাঁচ বছর আগে নিত, তাহলে সেটা সাধুবাদ পাওয়ার মতো ব্যাপার হতো। কেননা এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা আর উঠে দাঁড়ানোর মতো নেই। প্রযোজকেরা ছবি বানানো বাদ দিয়ে অন্য কাজে মন দিয়েছেন।’

রুবেল মনে করেন, চলচ্চিত্রাঙ্গন এখন কোমায় আছে। একে আগে দম ফিরিয়ে দিতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে হাত ধরে একে তুলে হাঁটাতে হবে, এরপর দৌড়ানোর কথা ভাবা যাবে। তিনি বলেন, ‘একজন নায়কের সম্মানী দিতে গিয়েই এখনকার অনেক প্রযোজক পথে বসে যান। অথচ আমাদের সময়ে সিনেমার টাকা উঠে আসত। একজন প্রযোজক একটা ছবির টাকা ফেরত পাওয়ার পর আরও তিনটি ছবিতে বিনিয়োগ করতেন।’

শাকিব খান ছবিপ্রতি ৬০-৭০ লাখ টাকা সম্মানী নেন। প্রযোজক-পরিচালকদের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ, শাকিব যদি সম্মানী কমিয়ে দিতেন, তাহলে তাঁরা কিছু বেশি ছবি তৈরি করতে পারতেন। এতে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের চেহারাটা অন্য রকম হতো। অন্যদিকে শাকিবের প্রতি চলচ্চিত্রের নির্ভরতার কথাও স্বীকার করে রুবেল বলেন, ‘শাকিব খান এখনকার সময়ের একজন জনপ্রিয় নায়ক, সেটা আমরা মানি। কিন্তু এই সময়ে এসে পারিশ্রমিক নিয়ে এমন সিদ্ধান্তের কোনো অর্থ হয় না।’

করোনায় মানুষ সিনেমা হলে যাচ্ছে না। এতে সিনেমাশিল্প নতুন ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা নিয়ে কী ভাবছেন শাকিব খান? তিনি মনে করেন, মানুষ ঘরে বসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ছবি দেখছে। করোনার মধ্যেও এই সেক্টর থেকে বিনোদন অঙ্গন লাভবান হয়েছে। এসব বিবেচনায় শাকিব তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকে এসকে অ্যাপ বানানোর পরিকল্পনা করেছেন।

রুবেল। ছবি: সংগৃহীত
রুবেল। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপে সিনেমা দেখা প্রসঙ্গটি নিয়েও কথা বলেছেন নায়ক রুবেল। তিনি বলেন, ‘সিনেমা মানেই থিয়েটার। সিনেমা হলে বড় পর্দায় অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে অনেক মানুষের সঙ্গে বসে একটা সিনেমা দেখে যে অনুভূতি বা আনন্দ পাওয়া যায়, ঘরে বসে টিভি বা স্মার্টফোনে সেই আনন্দ পাওয়া যায় না। সিনেমা দেখতে হলে মানুষকে হলেই যেতে হবে।’

সিনেমাশিল্পের উঠে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে মত দিয়েছেন রুবেল। তিনি মনে করেন, সরকার চাইলেই এ শিল্প আবার তাঁর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে। রুবেল বলেন, ‘এফডিসি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। সুতরাং একে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার আন্তরিক হবে, এটা আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি সরকারের একার পক্ষেও কাজটি করা সম্ভব নয়। এ অঙ্গনের সব শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা দরকার আছে। চলচ্চিত্রকে ভালো না বাসলে সেটা সম্ভব নয়।’

মাসুম পারভেজ রুবেল ১৯৮২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরের বছর আবারও তিনি একই পদক জিতে নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াকালীন ২৬ বছর বয়সে বড় ভাই মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা প্রযোজিত ও শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘লড়াকু’ ছবির মধ্য দিয়ে ঢালিউডে যাত্রা করেন। মার্শাল আর্টে পারদর্শী একজন নায়ক হওয়ায় তাঁর ছবিতে সব সময়ই থাকত নিত্যনতুন সব মারাপিটের দৃশ্য। দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা রুবেল চলচ্চিত্রে এখনো সক্রিয়।