শাবনাজ এখনো নাঈমের ‘ময়না’

‘চাঁদনী’ সিনেমায় বাংলাদেশ পায় শাবনাজ-নাঈম জুটিকে। ১৯৯১ সালের ৪ অক্টোবর মুক্তি পায় ছবিটি। রাতারাতি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন এই জুটি। ১৯৯৪ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন। ‘জিদ’, ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘অনুতপ্ত’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সোনিয়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’ ও ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিগুলোয় একত্রে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা। আজ ২৭ বছরে পা দিল তাঁদের সংসারজীবন।

নাঈম ও শাবনাজের বিয়ে হয় ১৯৯৪ সালে। ছবি: সংগৃহীত

‘চাঁদনী’ সিনেমায় বাংলাদেশ পায় শাবনাজ-নাঈম জুটিকে। ১৯৯১ সালের ৪ অক্টোবর মুক্তি পায় ছবিটি। এরপর থেকে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন এই জুটি। অন্যদিকে নায়ক-নায়িকার ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার জায়গাটাও পোক্ত হতে থাকে। ‘বিষের বাঁশি’ ছবির সময়ে এসে প্রেমে জড়ান দুজন। ১৯৯৪ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন। আজ ২৭ বছরে পা দিল তাঁদের সংসারজীবন। মান-অভিমান আর ভালোবাসায় কেমন কাটল তাঁদের দিনগুলো?

মা–বাবার বিবাহবার্ষিকী, তাই একটি কেক এনে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দুই মেয়ে নামিরা ও মাহাদিয়া। সন্তানদের নিয়ে কেক কেটে, ছবি তুলে দিনটির স্মৃতি ধরে রেখেছেন শাবনাজ ও নাঈম। প্রতিবছর এ আয়োজনটাই একটু বড় পরিসরে করা হয়। এবার করোনা মহামারির কারণে তেমন কিছুই করা হলো না। কেক কাটার পর মেয়েদের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে কেবল।

কেক কেটে বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেন নাঈম ও শাবনাজ। ছবি: সংগৃহীত

সংসারের বন্ধন এত দৃঢ়, কী করে হলো? শাবনাজ বলেন, ‘এক একটা বয়সে এক এক রকম করে কেটেছে আমাদের। কখনো খুব ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে, কোনো কোনো সময় গেছে অনেক আনন্দে। দুজনে মিলে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছি, আনন্দ করেছি। বাচ্চা হওয়ার পরের জীবন আরেক রকম। বহু রাত আমরা না ঘুমিয়ে একসঙ্গে কাটিয়েছি।’

শাবনাজ-নাঈমের ২৬ বছরের সংসারে প্রতিবারের মান-অভিমানের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৩০ মিনিট। রাগারাগি হলে কী করতেন নাঈম? শাবনাজ বললেন, ‘মেয়েরা তো একটুতেই রেগে যায়। এখনো আমার রাগ হলে নাঈম “সরি” বলে। আমি খুবই কম “সরি” বলি। এটা নিয়ে আমার মেয়েরাও বলে, “মা, তোমার দোষ থাকলেও তুমি একদমই সরি বলো না”। যখন নাঈম ও মেয়েরা মিলে ধরে, তখন আমি বাধ্য হয়ে “সরি” বলি। আমি রাগ করলেও নাঈম আগে এসে কথা বলে। নাঈম চায় না, বাসার ভেতর কোনো রাগারাগি থাকুক। রাগ করলে এখনো সে আমাকে ময়না বলে রাগ ভাঙায়।’ কথাগুলো বলতে বলতে সেই সিনেমার ভঙ্গিতেই হাসতে থাকেন শাবনাজ। ‘বিষের বাঁশি’ ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল ময়না। সেই থেকে আজও তিনি নাঈমের ময়না।

আমি রাগ করলেও নাঈম আগে এসে কথা বলে। নাঈম চায় না, বাসার ভেতর কোনো রাগারাগি থাকুক। রাগ করলে এখনো সে আমাকে ময়না বলে রাগ ভাঙায়
শাবনাজ
মেয়েদের সঙ্গে শাবনাজ–নাঈম। ছবি: সংগৃহীত

শখ করে সিনেমায় এসেছিলেন শাবনাজ ও নাঈম। চেয়েছিলেন, প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ যদি ব্যবসাসফল হয়, তাহলে তাঁরা সিনেমায় নিয়মিত কাজ করবেন। ছবিটি ব্যবসাসফল হলো। শাবনাজ বললেন, ‘আমরা দুজনই অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান ছিলাম। সিনেমায় কাজ করে খেতে হবে, এ রকম কোনো চাপ ছিল না। আমরা এসেছিলাম শখ করে। “চাঁদনী” করার পর অন্য কোনো ছবিতেও যুক্ত হইনি। কারণ, দেখতে চেয়েছিলাম, ছবিটা কেমন হয়। ওই ছবি ফ্লপ করলে আমরা আর ছবিই করতাম না। পরে দেখা গেল ছবি হিট। তারপর আমরা প্রফেশনালি কাজ শুরু করলাম।’

নিজেদের প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ দেখতে শাবনাজ-নাঈম প্রেক্ষাগৃহে যান ছবি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে। দর্শকেরা চিনে ফেলেন দুজনকেই। আরও কাছ থেকে তাঁদের দেখার জন্য রীতিমতো জটলা পাকিয়ে ফেলেন তাঁরা। সেদিন চাঁদনি চকে পুলিশ মোতায়েন করে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের করতে হয় শাবনাজ-নাঈমকে। প্রথম ছবির পর এই জুটি এতই জনপ্রিয় হয়ে গেলেন যে দুজনের বাড়ির সামনে সব সময়ই মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত। ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে শাবনাজ বলেন, ‘আমি তখন লালমাটিয়ায় থাকতাম। প্রতিদিন ছেলেরা আমাদের বাসার গেটে দাঁড়িয়ে থাকত। আমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করত। ঢাকার বাইরে একবার এক চরে গেলাম শুটিং করতে, সেখানেও হাজার হাজার মানুষ আমাদের দেখতে এসেছিল।’

বিবাহবার্ষিকীতে তারকা বাবা–মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ে। ছবি: সংগৃহীত

মেয়েদের চোখে তাঁদের তারকা মা–বাবাই আদর্শ দম্পতি। শাবনাজ-নাঈমের বড় মেয়ে নামিরা নাঈম পড়ছেন কানাডায়। চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ আছে তাঁর। করোনা মহামারির কারণে এখন তিনি দেশে, মা–বাবার কাছে। ছোট মেয়ে মাহাদিয়া নাঈম দেশে পড়াশোনা করছেন। গান করা, গল্প লেখার প্রতি টান আছে। ইউটিউব ঘাঁটলেই তাঁর গান শোনা যাবে। মা–বাবা যে এত জনপ্রিয়, সেটা দুই বোনের কেউই অনেক দিন পর্যন্ত জানতেন না। একবার তাঁদের সঙ্গে বাইরে বের হয়ে টের পেলেন, মানুষ তাঁদের কত ভালোবাসে। তাঁদের ভাষ্য, ‘বাসায় মা–বাবাকে দেখছি যেন দুটি মাটির মানুষ। তারকা তাঁরা ঘরের বাইরে। বাইরে গেলেই বুঝি মা–বাবা কত জনপ্রিয়।’ মা–বাবার পথে হাঁটতে চান না দুই বোন। বরং ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে চান।

শাবনাজ-নাঈম জুটি হয়েছিলেন ২০টি ছবিতে। মনে করিয়ে দেওয়া যাক সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটির কথা। ‘জিদ’, ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘অনুতপ্ত’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সোনিয়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’ ও ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিগুলো এই প্রজন্মের কেউ কেউ হয়তো দেখে থাকবেন। কিন্তু নব্বই ও পরের দশকে এই ছবিগুলো ছিল ভীষণ জনপ্রিয়।