সিনেমা হলে টিকিটের সঙ্গে বিক্রি হয়েছে মাস্ক

নতুন স্বাভাবিকে খুলল সিনেমা হল। ছবি: প্রতিবেদক

‘এই টিকিট, টিকিট। নিচে ৫০, ওপরে ৭০।’ চেঁচিয়ে ডাকছিলেন ৬০ ছুঁই ছুঁই এক ব্যক্তি। মাস্কে ঢাকা মুখ। দুপুরে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে বিক্রি হচ্ছিল সিনেমার টিকিট। করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় সাত মাস পর খুলেছে প্রেক্ষাগৃহ। বিক্রেতা যেমন মাস্ক পরে টিকিট বিক্রি করেছেন, তেমনি ক্রেতারাও মাস্ক পরে ঢুকছেন সিনেমা দেখতে। লোকসানের ভয়ে মহামারির এ সময়ে যখন কোনো প্রযোজক সিনেমা দিতে চাননি, তখন হলগুলোকে নতুন ছবি দিয়েছেন হিরো আলম। মহামারির ভেতর হিরো আলম প্রযোজিত ও অভিনীত ছবি দিয়েই চালু হলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহ।

জীবানুনাশক নিয়ে প্রস্তুত কর্তৃপক্ষ। ছবি: প্রতিবেদক

প্রেক্ষাগৃহ খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কতগুলো প্রেক্ষাগৃহ খুলল, কতজন দর্শক এলেন সিনেমা দেখতে? সেসব সরেজমিনে দেখতে শুরুতেই যাই আজিমপুরের বিজিবি সিনেমা হলে। সেটা বন্ধ। নিউমার্কেট এলাকার বলাকাও বন্ধ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে ফার্মগেটের আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হল। ছন্দ হলে চলছে পুরোনো ছবি শাকিব খান অভিনীত রাজধানীর রাজা।

আনন্দ হলে মানুষের জটলা ছিল। এলোমেলো দাঁড়িয়ে পোস্টারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাঁরা। দেয়াল ছেয়ে গেছে সাহসী হিরো আলম ছবির পোস্টারে, ওপরে লেখা ‘চলিতেছে’, পাশে জ্বীন এবং বিশ্বসুন্দরী ছবির পোস্টারে লেখা, ‘আসিতেছে’। জটলা থেকে ভেসে আসে, ‘... তোর জন্য ১০ ট্যাহা ধরা খাইলাম। কইলাম মাস্ক নিয়া যাই, কইলি লাগবে না। অহন টিকিটের লগে মাস্ক কেনা লাগল।’ দীর্ঘদিন পর প্রেক্ষাগৃহ খোলায় কেউ এসেছেন ছবি দেখতে, আবার যাঁরা এসেছেন তাঁদের অনেকেই জানেন না যে অনেক দিন বন্ধ থাকার পর হল খুলেছে। মাথায় কাপড়ের বোঝা নিয়ে নতুন পোস্টারের দিকে তাকিয়ে থাকা এক ব্যক্তি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজনের কাছে জানতে চান, কবে খুলেছে ভাই? আজই খুলেছে, জানার পর হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘রাতে ছবি দেখুম।’

আনন্দ হলে ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবির ট্রেলার। ছবি: প্রতিবেদক

টিকিটের দাম ১০ টাকা কমানো হয়েছে। কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে দু–একজন সামাজিক দূরত্ব মানলেও, বেশির ভাগই মানছেন না। টিকিট বিক্রেতা টাকা হাতে নিয়েই জানতে চান, সঙ্গে মাস্ক আছে, না থাকলে টিকিটের সঙ্গে কেটে নেওয়া হচ্ছে মাস্কের দাম। প্রতিটির দাম পাঁচ টাকা। মিরপুরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন জসিম উদ্দীন। সিনেমা দেখতে এসে তিনি বলেন, ‘হল খোলা সেডা জানতাম না। আইসা দেখি হল খোলা। বহু দিন হয় ছবি দেখি না, তাই টিকিট কিনলাম।’

বেলা যখন প্রায় তিনটা। ভেঙেছে দুপুর সোয়া বারোটার শো। এক দর্শক হল থেকে বের হচ্ছিলেন। তাঁর কাছে জানতে চাই, দীর্ঘদিন পর হলে ছবি দেখে কেমন লাগল? তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ছবির ভালো-মন্দ দেইখা আসিনি। সিনেমার যে অবস্থা, ভাবলাম দেখি, সে জন্য হলে আইছি। হল খোলা রাখা উচিত।’ জানা গেল, ওই শো দেখেছেন প্রায় ১৫ দর্শক। প্রবেশের আগেই দর্শকদের মুখে মাস্ক ও হাতে স্যানিটাইজার মেখে নিতে হচ্ছিল। হলের ভেতর দর্শকেরা বসেছিলেন দূরত্ব বজায় রেখে। অন্তত পাঁচ আসন করে ফাঁকা রেখে হল কর্তৃপক্ষ বসতে দিয়েছিলেন দর্শকদের। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় ছিল প্রথম শো, যেখানে দর্শক ছিলেন মাত্র সাতজন। সকাল ও দুপুরের তুলনায় বেলা তিনটায় দর্শক সমাগম ছিল তিন গুণ।

আগের মতোই প্রতিদিন পাঁচটি করে প্রদর্শনী হবে আনন্দ ও ছন্দ সিনেমায়। আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হলের জেনারেল ম্যানেজার মোহম্মদ শামসুউদ্দিন বলেন, ‘আমরা গত সাত মাস বহু কষ্টে দিন কাটিয়েছি। খোলার ঘোষণায় আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা হল চালু রাখতে চাই। তবে দর্শক নেই। আশা করছি, সামনে দর্শক আসবেন। সে জন্য কিছু ভালো মানের ছবি দরকার।’