সিনেমার পর্দায় আশার আলো

তালিকা নিয়ে বসলে নিজ দেশ, পাশের দেশ বা দূরদেশের অনেকগুলো সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হবে

করোনা মহামারির মধ্যে ঢাকায় শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। প্রেক্ষাগৃহ কমে যাওয়া দেশে এমন সঙ্গনিরোধকালে এ উৎসব যেন ঘুটঘুটে অন্ধকারে একচিলতে আলো। আজ শনিবার বিকেলে পর্দা উঠবে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর নিভে যাবে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের আলো। পর্দা আলো করে শুরু হবে সিনেমা।

ফরাসি অভিনেতা ও পরিচালক সুজান ওয়েন্ডেনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি স্প্রিং ব্লোসম এবারের উৎসবের উদ্বোধনী সিনেমা। এক প্রৌঢ় ও এক তরুণীর সম্পর্ক নিয়ে ছবির গল্প। পৃথিবীর ৭৩টি দেশ থেকে এ রকম বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ কাহিনির সিনেমা দেখা যাবে ঢাকায়। সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবিগুলো বড় পর্দায় যাদের দেখা হয়নি, গত বছর চলে যাওয়া তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে সেসব দেখার সুযোগ মিলবে। এ ছাড়া থাকবে বাংলাদেশি পরিচালকদের ভিন্ন ভিন্ন দৈর্ঘ্যের ৪১টি সিনেমা। হিন্দি ভাষার ছবির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতাদের বাংলা সিনেমাও থাকবে উৎসবে।

সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকার এ উৎসবে দেখা যাবে তাঁর ৭টি ছবি

তালিকা নিয়ে বসলে নিজ দেশ, পাশের দেশ বা দূরদেশের অনেকগুলো সিনেমা দেখতে ইচ্ছে হবে। শ্যাম বেনেগালের দ্য মেকিং অব দ্য মাহাত্মা, মিলা কুদ্রায়াশোভার মাই পারসোনাল ড্রাগন, ক্লারা পিকাসোর দ্য প্রোটাগোনিস্ট, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গুমনামি, ফাখরুল আরেফিনের গণ্ডি, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ঊনপঞ্চাশ বাতাস, মৃত্তিকা গুণের কালো মেঘের ভেলা। শিশুদের জন্য রয়েছে অভীক রায়ের মাস্টারমশাই, মোগান বায়াতের বর্ন অব দ্য আর্থ, ফিরাস খৌরির ম্যারাডোনাস লেগসসহ অনেকগুলো সিনেমা। এগুলো দেখা যাবে প্রতিযোগিতা বিভাগ, লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড, ট্রিবিউট, রেট্রোস্পেকটিভ, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেনস, স্পিরিচুয়াল, উইমেন ফিল্ম মেকারস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মস শাখাগুলোয়। ১০ শাখায় ২২৫টি সিনেমার বেশির ভাগই দেখা যাবে বিনা মূল্যে। কোথাও কোথাও পূর্ণদৈর্ঘ্য ৫০ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি দেখা যাবে ৩০ টাকায়। আন্তর্জাতিক মানের শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র উপভোগ করতে নিজ শহরের এ উৎসব থেকে কে বঞ্চিত হতে চাইবেন?

উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এই উৎসবের প্রথম আসরে। ছবি : সংগৃহীত

করোনার থাবা অগ্রাহ্য করে এ বছর উৎসবটির আয়োজন ছিল বেশ ঝক্কিপূর্ণ। বিদেশি অতিথিরা এ বছর ঢাকায় আসছেন না। একটি করে আসন ফাঁকা রেখে প্রদর্শনীতে বসার ব্যবস্থা থাকবে। মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না কোনো মিলনায়তনে। আর চাইলে ঘরে বসে অনলাইনে নিবন্ধন করেও ছবি দেখা যাবে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে উৎসব আয়োজনে কষ্টের অভিজ্ঞতা জানিয়ে উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসব ভার্চ্যুয়ালি ও ফিজিক্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করেছি। বিদেশি অতিথিরা আসছেন না বলে বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিলাম। পৃষ্ঠপোষকের অভাবে বহু কষ্টে সেই খরচেরও মাত্র ৬০ শতাংশ জোগাড় করতে পেরেছি। তবু উৎসবটি হওয়া দরকার। মহামারির কারণে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের সামাজিক দায়িত্ব।’

১৯৯২ সাল থেকে ঢাকায় এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। আজ বিকেল ৪টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ১৯তম এ উৎসব উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী।