সৌমিত্রর জন্য ববিতার প্রার্থনা

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবরে মন খারাপ তাঁর সহশিল্পী বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পী ববিতারকোলাজ

ভারতের বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবরে মন খারাপ তাঁর সহশিল্পী বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পী ববিতার। আজ সোমবার সকালে কথা হলে তাঁর এই মন খারাপের কথা জানান। বললেন, দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন ধরে কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত শনিবার রাতে সৌমিত্রকে দুই ইউনিট প্লাজমা দেওয়া হয়। গতকাল দেওয়া হয়েছে আরও এক ইউনিট।
ববিতা বললেন, ‘বিভিন্ন নিউজপোর্টালে সৌমিত্র দার অসুস্থতার খবর শুনছি। আজ তো এমনও শুনলাম, তাঁকে ভেন্টিলেশনে সাপোর্ট দেওয়া হতে পারে। এসব শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। কত স্মৃতি আমাদের!’
১৯৭৩ সাল ববিতার অভিনয়জীবনের সেরা বছর। ওই বছরই ববিতা অভিনীত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা মুক্তি পায়। এই সিনেমায় তিনি সৌমিত্র চ্যাটার্জির স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রশংসিত হন দেশ-বিদেশে। ‘অশনি সংকেত’ ছবির শুটিং সময়ের স্মৃতি মনে করে ববিতা জানালেন, ‘অশনি সংকেত’ ছবির পরও সৌমিত্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেশ আন্তরিক ছিল। যখনই বাংলাদেশে কোনো কাজে আসতেন, কথা হতো। দেখাও হতো। খুব অসাধারণ সময়ও কাটত। ববিতা বললেন, ‘অসুস্থতার খবরে কত কী যে মনে পড়ছে। তবে শুধু একটা কথাই বলব, ফিরে আসুন সৌমিত্র দা। সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসুন। আপনার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।’

সৌমিত্রর সঙ্গে ববিতার অনেক স্মৃতি
সংগৃহীত

ববিতা বললেন, মনের দিক দিয়ে সৌমিত্র দা বেশ শক্ত। আমি তো শুনলাম, এই করোনার মধ্যেও নাকি তিনি সপ্তাহ দু-এক আগে কিসের যেন শুটিং করছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার দিকে বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া মেডিকেল বুলেটিনে জানানো হয়, একই রকম রয়েছে সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থা। তাঁর মধ্যে কিছুটা মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু গভীর রাতে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, জ্বরের পাশাপাশি সংক্রমণ রয়েছে বুকে। বেড়েছে অস্থিরতা। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হতে পারে।

‘অশনি সংকেত’ ছবির শুটিং সময়ের স্মৃতি মনে করে ববিতা জানালেন, ‘অশনি সংকেত’ ছবির পরও সৌমিত্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বেশ আন্তরিক ছিল। যখনই বাংলাদেশে কোনো কাজে আসতেন, কথা হতো। দেখাও হতো। খুব অসাধারণ সময়ও কাটত।
শোকে মুহ্যমান চিত্রনায়িকা ববিতা। ফাইল ছবি
আরও পড়ুন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হলে সেখানে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ ছাড়া সংক্রমণ ধরা পড়ে তাঁর মূত্রনালিতেও। বেলভিউ নার্সিংহোমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ ট্যান্ডন গতকাল সন্ধ্যায় জানান, এই প্রবীণ অভিনেতাকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসা চলছে। রাজ্য সরকারও এখানে দুজন সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ করেছে।

সত্যজিৎ রায় ও ববিতা, অশনি সংকেত
সংগৃহীত

এই নিয়ে সৌমিত্রের চিকিৎসার জন্য ১৬ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এখন নিয়মিত চলছে অক্সিজেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গতকাল তাঁকে সর্বাধিক মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকেরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তাঁকে ভেন্টিলেশন দেওয়ার।
হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, আজ তাঁর শ্বাসনালিতে টিউব পরানো হবে। মস্তিষ্কের সমস্যায় যাতে জল, পানীয় কিংবা খাবারের কণা খাদ্যনালির বদলে শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়ে প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্যই এই সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে টিউবটি আবার ভেন্টিলেশন দেওয়ার সময় কাজে ব্যবহার করা যাবে। চিকিৎসকেরা এ কথাও বলেছেন, করোনার পাশাপাশি এখন তাঁর শরীরে বাসা বেঁধে থাকা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি বায়োপিকের শুটিংয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌমিত্র। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পড়াশোনা করেন হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সংগৃহীত
আরও পড়ুন