স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে স্বস্তি নির্মাতাদের

ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির ওয়েব ফিল্মের জন্য একত্র হয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও পূর্ণিমা।
প্রথম আলো

করোনা যেন শাপে বর হয়েছে এখানে। নির্মাতাদের কাছে এক দুয়ার বন্ধ হয়ে নতুন দুয়ার খুলছে। করোনাকালে স্বল্পসংখ্যক সিনেমা হলে দর্শকও হয় স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে প্রযোজকেরা আশঙ্কায় ছিলেন লোকসানের। কিন্তু দর্শকের কাছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায়, নির্মাতাদের সুযোগ বাড়ছে। অনেক নির্মাতা এই প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি বানাচ্ছেন। কেউ কেউ এখানে ছবির অনলাইন স্বত্ব বিক্রি প্রায় চূড়ান্ত করে নেমে পড়ছেন শুটিংয়ে। এতে ছবি নির্মাণে লোকসানের আশঙ্কা যেমন কমছে, তেমনি লাভেরও একটি নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে।

নির্মাতা অমিতাভ রেজা ২০১৬ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ‘আয়নাবাজি’ নামে। চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত সেই ছবি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। তবে ‘আয়নাবাজি’ থেকে আসা পুরো লভ্যাংশ নানা কারণে ওঠাতে পারেনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। নানা সময়ে এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি ওয়েব ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজির ঘোষণা দিয়েছেন। নিয়েছেন পরীক্ষিত চঞ্চল চৌধুরীকে। তবে এবার তিনি বানাচ্ছেন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর প্রথম ওয়েবভিত্তিক চলচ্চিত্র সিরিজ ‘মুন্সিগিরি’ প্রযোজনা করছে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি। অমিতাভ রেজা বলেন, ‘স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে নির্মাতা স্বাধীনভাবে ছবি বানাতে পারেন। প্রথমেই তিনি জেনে যান যে এই সিনেমা নিয়ে তিনি কতটুকু কাজ করতে পারবেন। ওটিটিতে নির্মাতার জন্য কাজ করাটা স্বাধীন ও সহজ হয়। কারণ, ছবির পুরো বাজেট দিয়ে তিনি কাজ করতে পারেন। তবে যেহেতু এটা ওটিটিই প্রযোজনা করে, তাই তাদের একটা গাইডলাইন থাকে। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী প্রযোজনাটি নির্মাণ করতে হয়।’

‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রে চঞ্চল চৌধুরী।
সংগৃহীত

২০১৮ সালে ‘পোড়ামন টু’ ও ‘দহন’ দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন নির্মাতা রায়হান রাফি। হাতে আছে চারটি ছবি—‘পরাণ’, ‘স্বপ্নবাজি’, ‘ইত্তেফাক’ ও ‘দামাল’। কিন্তু এর মধ্যেই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ‘জানোয়ার’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে হইচই বাধিয়ে ফেলেছেন এই নির্মাতা। সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই ফিল্ম বেশ আলোচিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চারটি ছবি হাতে থাকতে কম সময়ের মধ্যে ফিল্ম বানানো ও মুক্তির পেছনের গল্পটি কী? রায়হান রাফি বলেন, ‘সিনেমা হল ও অ্যাপস দুটি আলাদা মাধ্যম। তাই কনটেন্টের ধরনও আলাদা। তবে এখানে কম খরচে সিনেমা নির্মাণ করা যায়। কারণ, সাধারণত একটা সিনেমায় স্টার কাস্টদের পেছনেই ছবির বাজেটের একটা বড় অংক চলে যায়। একটা গতানুগতিক ধারণা ছিল, স্টার কাস্টিং ছাড়া সিনেমা চলে না। কিন্তু “জানোয়ার”–এ কোনো স্টার কাস্টিং নেই। স্টার ছাড়াই ওয়েব ফিল্মটি জনপ্রিয় হয়েছে। দুই দিনেই ছবিটির খরচ উঠে এসেছে। সুতরাং অ্যাপস প্রমাণ করেছে যে, কনটেন্টই সব। ভালো কনটেন্ট তৈরি হলে লোকসানের ভয় নেই।’
তবে এই নির্মাতা মনে করেন, অ্যাপসের জন্য ফিল্ম বানালে যে লোকসানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এমনটি নয়। অনেক সময় কনটেন্ট বিক্রিতে নির্মাতাও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কনটেন্ট বিক্রিরও নানা ধাপ থাকে।

‘জানোয়ার’ ওয়েব ফিল্মের পোস্টার
সংগৃহীত

কিছু কিছু নির্মাতা সিনেমার আংশিক অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার জন্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইন কনটেন্ট স্বত্ব বিক্রি করেন। এখন যেহেতু সিনেমা হল থেকে টাকা উঠে আসার নিশ্চয়তা কম, সেহেতু এসব প্ল্যাটফর্মের কাছে অনলাইন স্বত্ব বিক্রি করেও একটা আয়ের পথ তৈরি হচ্ছে। তবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত নির্মাতা দীপংকর দীপন মনে করেন, করোনাকালীন এই অবস্থায় টিকে থাকার জন্য এটি করছেন নির্মাতারা। একটা মূল ধারার ছবিতে যে খরচ হয়, বর্তমানের স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে তা জোগান দেওয়া কঠিন। চলচ্চিত্র একটি বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানে অনেক লোক কাজ করেন। সবাইকে এ সময় টিকে থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ সময় যদি চলচ্চিত্রের নির্মাণ না হয়, তাহলে মানুষ পেশা পরিবর্তন করে ফেলবে। এটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় ক্ষতি। সাময়িকভাবে এ সময় টিকে থাকার জন্য এটি করছেন নির্মাতারা।’

‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির পোস্টার
সংগৃহীত

কয়েক বছর ধরেই ক্রমাগত কমছে সিনেমা হল। এরই মধ্যে কোভিড–১৯ সংক্রমণে সিনেমা হল বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। গত অক্টোবর মাসের দিকে সিনেমা হল খুললেও লোকসানের ভয়ে সিনেমা মুক্তি দেননি প্রযোজকেরা। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি একেবারে বন্ধই বলা চলে। এমন সময় ছোট পর্দা ও বড় পর্দার বেশ কিছু নির্মাতা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে ওয়েব ফিল্ম বানিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছেন। দেশি–বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোয় নির্মাণের জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বড় ক্যানভাসের বেশ কয়েকটি ওয়েব ফিল্মের। সবকিছু মিলে নির্মাতারা মনে করছেন, এক দুয়ার বন্ধ হয়ে নির্মাতাদের জন্য খুলে গেছে আরেক দুয়ার, যা নির্মাতাদের দিয়েছে আরও বেশি ও ভালো কাজ করার সুযোগ।