স্পষ্ট কথা বলতে একপা পেছাতেন না কবরী : আলমগীর

দেখতে দেখতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত অভিনয়শিল্পী কবরীর মৃত্যুর এক বছর হয়ে গেল। গত বছরের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। করোনা তাঁকে শেষ রক্ষা দেয়নি। মৃত্যুর আগে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করছিলেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করছিলেন। কিন্তু পুরো কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি। কবরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা কথা বলেছি তাঁর সহকর্মী আলমগীর- এর সঙ্গে। তিনি জানালেন অভিনয়শিল্পী ও মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন কবরী।

অভিনেতা আলমগীর স্মৃতিচারণ করলেন কবরীকে নিয়ে

কবরীর দুটি দিক। প্রথমত, তিনি একজন অসাধারণ অভিনেত্রী আর দ্বিতীয়ত, অসাধারণ একজন মানুষ। অভিনেত্রী কবরী সম্পর্কে বলা আমার ধৃষ্টতার মধ্যে পড়ে। তিনি যতটা বড় মাপের অভিনয়শিল্পী, ওটার আশপাশেও আমরা নেই। তাই তাঁর অভিনয় নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাব না কোনো দিনই। তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, মানুষ হিসেবে অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। স্পষ্টভাষী মানুষ ছিলেন, স্পষ্ট কথা বলতে একপা পেছাতেন না।

আলমগীর

খুব কেয়ারিং ছিলেন আমাদের প্রতি। খুবই স্নেহ করতেন। ভালোবাসতেন। সেই আগেকার দিনে যখন প্রথম নায়ক হয়ে এসেছি, তখন আমাদের যখন এক পয়সারও মূল্য নেই মার্কেটে বা প্রোডাকশন ম্যানেজার বা প্রডিউসারদের কাছে—তখন তিনিই কিন্তু আমাদের পাশে দাঁড়াতেন। আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমার জন্মভূমি’তে তিনি নায়িকা ছিলেন, কিন্তু আমার বিপরীতে নন, রাজ্জাক ভাইয়ের বিপরীতে। মাহফুজুর রহমান (চিত্রগ্রাহক) ছিলেন, মিনু রহমানও ছিলেন। আমার সঙ্গে সেই ছবিতে কোনো নায়িকাই ছিলেন না। আমি একটা খ্যাপা চরিত্রে অভিনয় করেছি, মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে।

সারাহ বেগম কবরী

একটা ছোট্ট ঘটনা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে যখন আউটডোরে গেছি কুমিল্লায়, কোথায় থাকব না থাকব, তা ভেবে তো কারও কোনো কিছু যাবে আসবে না। আমি কে, আমার কী আছে, কোথা থেকে আসছি, লেখাপড়া কত দূর—ওসবের কিন্তু কোনো মূল্য নেই ওখানে। চলচ্চিত্রে মূল্যটা হচ্ছে, কত ভালো অভিনেতা আপনি। কী কাজ করছি, সেটার মূল্য আছে। থাকার জায়গার অভাবে শুটিংবাড়িতে আমাকে আর মাহফুজকে বড় বারান্দা ছিল, খড় বিছিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে থাকতে হয়েছে সেখানে। পরদিন এটা আবার কবরী দেখে ফেলেন। তিনি দেখার পর প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ডেকে, নিজে টাকা দিয়ে চৌকি কিনে এনে দুটি তোশক দিয়ে, দুটি বালিশ এনে দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তখনকার সেই কবরীকে নিয়ে আসলে কী বলব! আমি মাত্র এসেছি চলচ্চিত্রে, দু–চার দিন শুটিং করেছি—এসব তো ভুলিনি, ভুলব না কোনো দিন।

‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমায় কবরী

চলচ্চিত্রে আমরা যখন এসেছি, তখন কি আমাদের কাছে অত টাকা থাকত। তখন মানে ’৭২–এ, কবরী তো তখন স্টার। আমরা তো কেউই না। কিন্তু আমরা তাঁর আদর পেতাম। আমাকে ও মাহফুজকে জীবনে প্রথম তখনকার কন্টিনেন্টালে নিয়ে লাঞ্চ করিয়েছে। এই ব্যাপারগুলো তো অনন্য। আউটডোর শুটিংয়ে গেলে আজকাল দরজা বন্ধ করে আর্টিস্টরা যাঁর যাঁর রুমে বসে থাকেন। কোনো শুটিংয়ে তিনি থাকলে এটা করতে দিতেন না। সবাইকে সন্ধ্যার পর ডেকে নিয়ে আড্ডা দিতেন, হইহুল্লোড় করতেন। নিজের হাতে বেড়ে খাওয়াতেন। আবার পান থেকে একটু চুন খসলে বকাও দিতেন।