স্বামীর নামের জায়গায় শাকিবের নাম লিখে বিপাকে অপু

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকোলাজ : আমিনুল ইসলাম

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস যে এখন আর স্বামী-স্ত্রী নন, এটি সবারই জানা। তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে তিন বছরের বেশি হতে চলল। ছেলে আব্রাম খান জয়ের বিষয়ে মাঝেমধ্যে তাঁদের দেখা হলেও সম্পর্কে শাকিব ও অপু এখন সাবেক স্বামী-স্ত্রী। অথচ সম্প্রতি প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ পেতে আবেদনপত্রে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস তাঁর স্বামীর নামের জায়গায় শাকিব খানের নাম লিখেছেন। বিষয়টিতে অবাক হন সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্যরা। যাচাই–বাছাই শেষে তাই আটকে যায় অপুর সদস্যপদ পাওয়ার সুযোগ। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির কাছে তথ্য সংশোধন করে জমা দিলে পরে দুই দিন আগে তাঁকে সদস্যপদ দেওয়া হয়।

শাকিব খান ও ছেলে আব্রাম খান জয়
ছবি : ফেসবুক থেকে

প্রথম আলোকে অপু বিশ্বাসের তথ্য গোপনের বিষয়টির কথা নিশ্চিত করেছেন প্রযোজক–পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম। তিনি জানালেন, সাধারণত কাউকে চলচ্চিত্রের প্রযোজক হিসেবে নাম নিবন্ধন করতে হলে এক লাখ তিন হাজার টাকা ফি দিতে হয়। কিন্তু কোনো প্রযোজকের স্বামী বা স্ত্রী বা সন্তান হলে তিনি মাত্র ১১ হাজার টাকা ফি দিয়েই এই সদস্যপদ লাভ করার সুযোগটা পেতে পারেন। অপু বিশ্বাস এই সুযোগই নিতে চেয়েছিলেন বলেও জানালেন সংগঠনের এই সাধারণ সম্পাদক।

অপু বিশ্বাস ও আব্রাম খান জয়
ছবি : ইনস্টাগ্রাম

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপু বিশ্বাস তাঁর ও সন্তান আব্রাম খান জয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ‘অপু-জয় প্রোডাকশন হাউস’ নামে নতুন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ‘অভিমান’ নামে একটি ছবির নামও নিবন্ধন করেছেন। ছবিটি সরকারি অনুদানের জন্য জমা দিতে চান অপু বিশ্বাস, এমনটাই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে।

ছেলে আব্রাম খান জয়কে নিয়ে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
ছবি : সংগৃহীত

ঘটনার বিবরণ দিয়ে শামসুল আলম বললেন, ‘মাঝে কিছুটা সময় প্রযোজক সমিতির দায়িত্বে একজন প্রশাসক ছিলেন। ওই সময়ে অপু বিশ্বাস তাঁর সদস্যপদ চেয়ে আবেদন করেন। অনুমোদন পাওয়ার আগে প্রশাসক বিদায় নেন। আবার কার্যনির্বাহী কমিটি সংগঠনের দায়িত্ব নেয়। এরপর অপু বিশ্বাসের আবেদন ফাইলটি আমরা পাই। আমরা দেখতে পেলাম, নথিতে নিজেকে শাকিব খান রানার স্ত্রী উল্লেখ করেছেন অপু। তিনি এ–ও লেখেন, “প্রযোজকের স্ত্রী আমাকে সুবিধা বিবেচনায় সদস্যপদ দেওয়া হোক।”’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম
ছবি : সংগৃহীত

শামসুল আলম আরও বললেন, ‘সারা দেশের মানুষ জানেন, অপু বিশ্বাস এখন আর শাকিব খানের স্ত্রী নন। আদালতের মাধ্যমেই তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে। আমরা যখন নথিপত্রে দেখলাম, স্বামী নাম হিসেবে শাকিব খানের নাম ব্যবহার করেছেন, তা তো সমর্থন দিতে পারি না। এই ধরনের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কাউকে সদস্যপদ দেওয়া মানে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া। এরপর আমরা সবাই অপুর সত্য গোপন করার বিষয়টি মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। সবাই একবাক্যে বলেছেন, ১ লাখ ৩ হাজার টাকার বদলে ১১ হাজার টাকায় সদস্যপদের বিশেষ সুবিধা নিতে এমনটা করেছেন তিনি। তাই আবেদনের ফাইলটা স্থগিত করে জানিয়ে দিই, তথ্য সংশোধন করে নতুনভাবে আবেদন করলে আমরা অবশ্যই সদস্যপদ দেব। পরে তিনি স্বামীর নামের জায়গা থেকে শাকিব খানের নাম বাদ দিয়ে আবেদন করেন, আমরাও সদস্যপদ দিই। তাঁকে এক লাখ তিন হাজার টাকায় সদস্যপদ নিতে হয়েছে। কিন্তু শুরুতে তিনি যা করতে চেয়েছেন, তা বড় অনিয়ম।’

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
ছবি : ফেসবুক

কী কারণে তিনি এমনটা করেছেন, তা কি আপনারা জানতে চেয়েছেন? এমন প্রশ্নে শামসুল আলম বললেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা জানতে চাইনি। তবে বুঝতে পেরেছি তাঁর মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তিনি লজ্জিত হয়েছেন। তিনি যেহেতু একজন ভালো অভিনেত্রী, দেশের জনপ্রিয় নায়িকা—এসব বিবেচনায় তাঁকে আর বিব্রত ও লজ্জা দিতে চাইনি। তবে আমরা তাঁর কাছে এর ব্যাখ্যা চাইতেও পারতাম। কিন্তু আমরা আর ওদিকটায় যাইনি।’

‘সম্রাট’ ছবির দৃশ্যে অপু বিশ্বাস ও শাকিব খান
ছবি : সংগৃহীত

২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রেখে তাঁরা দুজন সমানতালে সিনেমার শুটিং অব্যাহত রাখেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরের একটি হাসপাতালে জন্ম হয় শাকিব ও অপুর সন্তান আব্রাম খান জয়ের। পরের বছরের ১০ এপ্রিল একটি টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে নিজের গোপন বিয়ের খবরটি সবার কাছে জানিয়ে দেন অপু বিশ্বাস। আট বছর আগের সে বিয়ের খবর যেই না জনসমক্ষে চলে আসে, তখনই দুজনের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে মুখ–দেখাদেখি বন্ধ করে দেন। তাঁদের সেই টানাপোড়েন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায়। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপুর কাছে তালাকের নোটিশ পাঠান শাকিব খান। শাকিব-অপুর সেই সংসার ভেঙে যায় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ।