হলে চলে না বিদেশি সিনেমা, তবু আমদানির দাবি

পুরোনো ছবি চালিয়ে দর্শক টানতে পারছে না সিনেমা হলগুলো।কোলাজ ছবি

নতুন স্বাভাবিকে প্রেক্ষাগৃহ খুললেও নেই নতুন ছবি। পুরোনো ছবি চালিয়ে দর্শক টানতে পারছে না সিনেমা হলগুলো। তাই প্রদর্শক সমিতি চাচ্ছে বিদেশি (মূলত ভারতীয়) ছবি আমদানি করতে। কিন্তু এর আগে সিনেমা হলে ভারতীয় ছবি খুব একটা দর্শক টানতে পারেনি।
বছরে অন্তত ১০টি ভারতীয় ছবি যেন বাংলাদেশে মুক্তি পায়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এমন আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এমনকি ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি ভাষার ছবি আনতে আমদানির শর্ত সহজ করারও দাবি জানিয়েছে তারা। ঘরোয়াভাবে এই সমিতির নেতারা দেখা করেছেন তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, এমনটি জানিয়েছে সমিতির সূত্র। প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতি এবং শিল্পী সমিতিকে যৌথভাবে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলেছেন মন্ত্রী মহোদয়। করোনার এই দুর্যোগে বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন বলে কথা দিয়েছেন তিনি।’

দুই দেশে বিনিময় হওয়া কয়েকটি ছবির দৃশ্য। বাঁ থেকে বেলাশেষে, ছুঁয়ে দিল মন, কেলোর কীর্তি ও রাজা ৪২০

মন্ত্রণালয়ে আবেদন নিয়ে আলোচনা করতে প্রযোজক পরিবেশক সমিতি ও প্রদর্শক সমিতি আগামী সোমবার দুপুরে আলোচনায় বসবে। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘ভারতীয় ছবি আমদানির জন্য মন্ত্রণালয়কে কোন উপায়ে চিঠি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

তবে বিগত বছরগুলোতে আমদানি করা ভারতীয় ছবির দিকে তাকালে দেখা যায়, সিংহভাগ ছবিই বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১০ সালের পরে দুটি হিন্দি ছবি ওয়ান্টেড ও ডন টু এবং বাংলা ছবি বদলা, সংগ্রাম, খোকাবাবু, খোকাবাবু ৪২০, অভিমান, বেপরোয়া, বেলা শেষে, ওয়ান, তোমাকে চাই, হরিপদ ব্যান্ডওয়ালাসহ প্রায় ২০টি ভারতীয় ছবি আমদানি করে বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ছবিই প্রেক্ষাগৃহে লাভের মুখ দেখেনি।

‘কেলোর কীর্তি’ সিনেমার দৃশ্যে দেব।
ছবি: সংগৃহীত

তবে আমদানি করে ভারতীয় ছবি আনার দাবি কেন, এমন প্রশ্নে সমিতির ওই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আগে ভারতীয় ছবিগুলো ভারতে মুক্তি পাওয়ার পরে আনা হতো। বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়ার আগেই সেগুলো ইউটিউব ও অনলাইনে চলে আসত। তাই সেই ছবিগুলো দেখার আগ্রহ থাকত না দর্শকের। কিন্তু এবার থেকে সেই ছবিগুলোই আনা হবে, যেগুলো ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেই একই সময়ে মুক্তি পাবে।
খোদ ভারতেই সিনেমা হলে দর্শক টানতে পুরোনো জনপ্রিয় ছবি চালানোর জন্য হলমালিকদের দিচ্ছে যশ রাজ ফিল্মস। ভারতীয় পরিচালক ও প্রযোজকেরা ঝুঁকছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে। সেখানে ভারতীয় ছবি আমদানি করে মুক্তি দিয়ে সিনেমা হলে দর্শক টানার প্রস্তাব কতটা যুক্তিসংগত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রদর্শক সমিতির তথ্যমতে, সারা দেশে এখন ৭০টির মতো ছোট–বড় সিনেমা হল খোলা। কোনো হলেই খুব একটা দর্শক আসছেন না। নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার সাথী সিনেমা হলে এখন চলছে পুরোনো ছবি শান্ত কেন মাস্তান। ৮০০ সিটের হলটির রক্ষাণাবেক্ষণসহ প্রতিদিনের খরচ সাত থেকে আট হাজার টাকা। কেবল ছুটির দিন শুক্রবার টিকিট বিক্রি থেকে আসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সপ্তাহের বাকি ছয় দিনের গড় টিকিট বিক্রি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

ভেঙে ফেলা হয়েছে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ এলাকার পুরোনো সিনেমা হল পূর্ণিমা।
ছবি: প্রথম আলো

একই চিত্র অন্যান্য সিনেমা হলের। সাথী সিনেমা হলের মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিঞা আলাউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিনই বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুনছি। এভাবে বেশি দিন চালাতে পারব না। ঢাকার মধ্যে এশিয়া সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। পূরবী ও মুক্তি সিনেমা হল প্রায় বন্ধের পথে।’
১৬ অক্টোবর থেকে প্রেক্ষাগৃহ খুলে দিলেও নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছে মাত্র দুটি। এ মধ্যে সাহসী হিরো আলম কিছুদিন পরই বেশির ভাগ হল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর ঊনপঞ্চাশ বাতাস মুক্তি পেয়েছে কেবল মাল্টিপ্লেক্সে। যদিও ২০টির বেশি ছবি সেন্সর সনদ পেয়ে মুক্তির অপেক্ষায়। কিন্তু লোকসানের আশঙ্কায় মুক্তি দিতে চাচ্ছেন না প্রযোজকেরা।