হাজার কোটি টাকার বণ্টন নিয়ে কিছু কথা

ফাহমিদুল হকফেসবুক

নতুন প্রেক্ষাগৃহ বানানো, বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ চালু এবং চালু থাকা প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করতে এক হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। অর্থের পরিমাণ বেশ ভালো। এর সুফল পাওয়া যাবে, কতটুকু সুচিন্তিত ব্যবহার ও সদ্ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর। এক হাজার কোটি টাকা হলো এক হাজার ছবির বাজেট। করোনাভাইরাসের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চলচ্চিত্রক্ষেত্র, তা মোকাবিলায় এ বাজেট ভালো সঞ্জীবনী আকারে কাজ করতে পারে।

এ বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করার পক্ষে আমি। অর্ধেকটা চলচ্চিত্র কারখানার ক্ষতি পোষানো আর অর্ধেকটা দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপের জন্য।

৫০০ কোটি টাকা চলচ্চিত্র কারখানার ক্ষতি পোষানো

সরকার ৫০০ কোটি টাকাকে দুই ভাগে বরাদ্দ করতে পারে। যেসব প্রেক্ষাগৃহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ ও প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের জন্য আবেদন আহ্বান করতে পারে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ বণ্টিত হতে পারে। যেহেতু স্বল্প সুদের ব্যাপার আছে তাই প্রকৃত দাবিদারেরাই এগিয়ে আসবেন এমন আশা যেমন করা যায়, তেমনি প্রকৃত দাবিদারেরা যেন বরাদ্দ পান, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একইভাবে যেসব চলচ্চিত্রের নির্মাণপ্রক্রিয়া মাঝপথে থেমে আছে, সেসব প্রজেক্টকে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্যিক ও স্বাধীন ধারার সবাইকে সুযোগ দেওয়া দরকার।

সবচেয়ে বড় কথা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া। সফট পাওয়ার বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে। সার্টিফিকেশন আইনে যোগ করা ডিসির সার্টিফিকেট বাতিল করার ক্ষমতা উঠিয়ে নিতে হবে। তা না হলে যতই অর্থ বরাদ্দ হোক, লাভ হবে না।
যেসব প্রেক্ষাগৃহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ ও প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের জন্য আবেদন আহ্বান করতে পারে সরকার ।
কোলাজ

বাকি ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ

জহির রায়হান, আলমগীর কবির, সুভাষ দত্তসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত চলচ্চিত্রকারের চলচ্চিত্র রেস্টোরেশনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া। একক ছবি যেমন সূর্য দীঘল বাড়ি থেকে বেদের মেয়ে জোছনা—এ রকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবিকে এই তালিকায় নেওয়া। বিসিটিআইর (বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট) প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এটার উন্নয়নের জন্য কিছু প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে। স্বনামধন্য বিদেশি প্রশিক্ষককে তিন মাসের জন্য আনা এবং এ জন্য বাজেট রাখা। সবচেয়ে বড় কথা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া। সফট পাওয়ার বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে দিতে হবে। সার্টিফিকেশন আইনে যোগ করা ডিসির সার্টিফিকেট বাতিল করার ক্ষমতা উঠিয়ে নিতে হবে। তা না হলে যতই অর্থ বরাদ্দ হোক, লাভ হবে না।

স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখছেন দর্শকেরা
সংগৃহীত

দর্শক প্যানপেনে জলো দেশীয় কনটেন্ট না দেখে বিদেশি কনটেন্টই দেখতে থাকবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েব টিভি বিনোদনের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের বাস্তবতা। একে অনেক ছাড় দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। এটা গণমাধ্যম নয়, অনেকখানি ব্যক্তিগত মাধ্যম। তাই রেটিংসহ ক্রাইম, থ্রিলার, ভায়োলেন্স, ইরোটিসিজমকে অনুমোদন করতে হবে।

লেখক: ফাহমিদুল হক, চলচ্চিত্র সমালোচক ও বিশ্লেষক, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]