হাসপাতালে যেমন কাটছে আলমগীরের দিন

আলমগীর
প্রথম আলো

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছয় দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি নায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক আলমগীর। হঠাৎ তাঁর করোনায় আক্রান্তের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন দেশ-বিদেশে থাকা তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। আজ শুক্রবার সকালে বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কেমন আছেন জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘ভালো আছি, সুস্থ আছি।’

হাসপাতালে কীভাবে সময় কাটে জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা হাতে নিয়ে পত্রিকা পড়ি। এরপর নার্সকে ডাকলে, তারা এসে ওষুধ দেন। আমি নাশতাও সেরে নিই। নাশতা শেষে বাসার সবার সঙ্গে কথা হয়। রুনার (রুনা লায়লা) সঙ্গে দিনে তিনবার কথা হয়। সন্তানদের সঙ্গে কনফারেন্সে দুবার করে কথা হয়। বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা হয়। ফেসবুকে অনেকে খবর নেন, তাঁদের রিপ্লাই দিই। হাসপাতালে বসেই অফিসের খবরাখবরও নিই।’

কথায় কথায় আলমগীর বললেন, ‘দুপুরে খাওয়া শেষে দুই ঘণ্টা ঘুমাই। সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখি। হাসপাতালে আমি আইপিএলের ম্যাচগুলোই দেখি। রাতের খেলার কোনোটারই ফলাফল দেখতে পারি না। কারণ, রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল সাতটায় যে আবার উঠে যাই। বই পড়ি। ক্ল্যাসিক সিনেমাও দেখছি।’

আইপিএলে কোনো দল প্রিয় কি না, জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘আমার কাছে তো দুইটা দল প্রিয়, একটায় যেখানে মুস্তাফিজ খেলছে, অন্যটায় যেখানে সাকিব আল হাসান খেলে। সত্যি কথা বলতে, আমি কোনো দল নিয়ে নেই, দেশ নিয়েই আমি আছি। আমার দেশের দুজন খেলোয়াড় যেই দলে, সেই দুই দলই আমার প্রিয়। বাংলাদেশ যেখানে আছে, বরাবরই আমি সেখানে আছি।’

মুঠোফোনে অল্প ভলিউমে গানও শোনেন আলমগীর। করোনায় আক্রান্ত হলেও মানসিকভাবে শক্ত থাকতে বললেন বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী। তিনি বললেন, ‘মানসিকভাবে ভেঙে গেলেই কিন্তু আমি শেষ। সব সময়ই মানসিকভাবে শক্ত থেকে যদি ভাবা হয়, আই উইল প্রুভ ইট, তাহলে অবশ্যই প্রুভ ইট করা সম্ভব।’

সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করছেন আলমগীর। তিনি বললেন, ‘মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবার খাচ্ছি। এককালে মাংস অনেক প্রিয় হলেও এখন মাছ বেশি প্রিয়।’

আলমগীর ও রুনা লায়লা
সংগৃহীত

হাসপাতালে সবার আন্তরিকতার কথাও বলতে ভোলেননি আলমগীর। তিনি বললেন, ‘এখানকার চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, তাঁরা খুবই বন্ধুবৎসল ও যত্নশীল। এটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। হাসপাতালের সবার আন্তরিকতা ও পুরো পরিবেশটা সত্যিই চমৎকার। হাসপাতালের অবস্থান ব্যস্ত এলাকায় এবং ঢোকার সময়টায় ভিড় থাকলেও একবার ভেতরে ঢুকে গেলে এটা যেন অন্য একটা পৃথিবী।’

ছয় দিন ধরে করোনা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলমগীর। জানালেন, ‘এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা ওষুধের মাত্রা কমিয়েছেন। আজ শুক্রবার তিনটা ওষুধ কমানো হয়েছে। ইনশা আল্লাহ আস্তে আস্তে একেবারেই কমবে।’

রুনা লায়লা
প্রথম আলো

এদিকে বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পীর স্ত্রী উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লাও জানালেন, আলমগীর ভালো আছেন। তাঁকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। যেদিন করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসবে, সেদিনই বাসায় ফিরবেন। চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্তরিকতার সঙ্গে আলমগীরের দিকে খেয়াল রাখছেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের কিংবদন্তি দম্পতি আলমগীর ও রুনা লায়লা। গত শনিবার সকালে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে তাঁরা করোনার দ্বিতীয় টিকা গ্রহণ করেন। তাঁদের সঙ্গে একই দিনে টিকা গ্রহণ করেন আলমগীরের তিন সন্তান মেহরুবা আহমেদ, আঁখি আলমগীর, তাসবির আহমেদসহ মোট ১২ জন।

রুনা লায়লা ও আলমগীর
সংগৃহীত

আলমগীরের করোনায় আক্রান্তের খবরটি রুনা লায়লা তাঁর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান। ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘আলমগীর সাহেব কোভিড-১৯ পজিটিভ। ঢাকার একটি স্থানীয় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। অসাধারণ কয়েকজন দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের নার্স ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছেন। বেশ যত্ন করছেন। আলমগীর সাহেবও এখন মানসিকভাবে শক্ত আছেন এবং ভালো অনুভব করছেন। সবাই তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের সবার শুভকামনা ও দোয়া তাঁকে দ্রুত নিরাময় করবে...।’