হিরো আলমের আর কোনো দুঃখ নেই

হিরো আলম
সংগৃহীত

সেন্সর সনদ পাওয়া ২২টি নতুন ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। সিনেমা হল বন্ধ বলে সেগুলো মুক্তি পায়নি। অথচ হল খোলার পর ছবিগুলোর প্রযোজকেরা সেসব ছবি মুক্তি দেননি লোকসানের ভয়ে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ছবি মুক্তি দিয়েছেন হিরো আলম। দীর্ঘ প্রায় সাত মাস পর গতকাল শুক্রবার এই অভিনেতার ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবি দিয়ে সিনেমা হল খুলেছে। দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় খুশি হিরো আলম। তিনি মনে করেন, নতুন স্বাভাবিকে দর্শক যে টিকিট কেটে তাঁর সিনেমা দেখছে, এটাই তাঁর কাছে ছবি ‘সুপার হিট’ হওয়ার মতো। তাঁর আর কোনো দুঃখ নেই।

‘সাহসী হিরো আলম’ সিনেমার একটি দৃশ্য
সংগৃহীত

‘সাহসী হিরো আলম’ মুক্তি পেয়েছে দেশের ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে। গতকাল পাঁচটি সিনেমা হল ঘুরেছেন ছবির প্রযোজক ও মূল অভিনেতা আলম। কথা বলেছেন দর্শকদের সঙ্গে। তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন? হিরো আলম জানান, করোনার সময় সিনেমা হল পাবেন কি না, সেটা নিয়েই তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেখানে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সিনেমা হল পেয়েছেন তিনি। গতকাল সকাল থেকে তিনি প্রেক্ষাগৃহে ঘুরেছেন। জানালেন, তাঁর ছবি দেখে দর্শক ভালো বলেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন দর্শক পেয়েছি, সেটাই লাখ শুকরিয়া। দুঃসময়ে আমার ছবি মানুষ দেখছে, এতেই আমি খুশি। কারণ, মানুষ এখনো জানেই না যে হল খুলেছে। সাত মাস পর সিনেমা হল খুলছে, সেখানে দর্শক আমার ছবি টিকিট কেটে দেখেছে, এটা তো ছবি সুপার-ডুপার হিট হওয়ার মতো ঘটনা। অনেকেই বলেছিল, মানুষ হিরো আলমের ছবি টিকিট কেটে দেখবে না। আমার ছবি নিয়ে অনেকে নিন্দা করত, নানা কথা বলেছিল।’

হিরো আলমের সঙ্গে সেলফি তুলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ফাইল ছবি

করোনায় গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ। নিয়ম মেনে সিনেমার শুটিং শুরু হলেও প্রযোজক, নির্মাতা, প্রদর্শকদের দাবি ছিল সিনেমা হল খোলা নিয়ে। পরে ১৪ অক্টোবর সিনেমা হল খোলার অনুমতি দেয় সরকার। ছবি না পেয়ে এ সময় কিছু হল পুরোনো ছবি দিয়ে হল চালু করে। হিরো আলম তাঁর নতুন ছবি মুক্তি দেন ৫০টি হলে। তাঁর ছবি মুক্তি নিয়ে কে কী বলেছে, তা জানতে চাইলে হিরো আলম কিছুক্ষণ চুপ ছিলেন। তাঁর গলার স্বর কিছুটা নেমে যায়। দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কী আর বলব ভাই, কত মানুষ আমাকে মুখের ওপর বলেছে, আপনি ছবি বানাতে পারবেন না, আপনার ছবি হলে চলবে না, চললেও কেউ দেখবে না। এসব শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম। আজ আমি খুশি, আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার ছবি হলে চলছে। এক টাকা ব্যবসা করলেও সেটা আমার কাছে লাখ টাকা।’ তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষ এক দিনে বড় হতে পারে না। তিনি তাঁর মতো করে চেষ্টা করবেন ভালো ছবি বানাতে। যারা বলেছিল হিরো আলমের ছবি ভালো না, তাদের উদ্দেশে আলম বলেন, ‘যারা ভালো বলছে না, তারা সিনেমা দেখেনি, তারা নিন্দুক। তারা ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি করে মন্তব্য করে। আমি হিরো আলম বলছি, আপনি অনেক দিন ছবি দেখেন না। আমার ছবি হলে এসে দেখে বলুন কোন দিক দিয়ে খারাপ।’

‘সাহসী হিরো আলম’ সিনেমার আরেকটি পোস্টার
সংগৃহীত

নিজের ছবির প্রদর্শনী চলছে—এ রকম সব কটি হল ঘুরে দেখবেন আলম। ইতিমধ্যে ঘুরে দেখা হলগুলোর দর্শক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হলে হলে ঘুরছি। কোনো দর্শকই বলেননি আমার ছবি খারাপ হয়েছে। সবাই বলেছে, আপনি আলোচনায় আসবেন। দর্শক বলেছে, আপনার ছবির গল্প, ডায়ালগ, গান ভালো লেগেছে। দর্শক আমার আরও ছবিতে দেখতে চায়। আমি মনগড়া কথা বলছি না, এগুলো দর্শকদের মুখে শোনা। দর্শকদের কারণেই আমি হিরো আলম থেমে থাকব না। আরও ছবি বানাব।’

বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন আলম। সিডি যখন চলছিল না, তখন তিনি কেবল ব্যবসা শুরু করেন। কেবল সংযোগের ব্যবসার সুবাদে গানের ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। ইউটিউবে হিরো আলমের এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তাঁর ভিডিও নিয়ে কৌতুক শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তাঁর ভিডিও নিয়ে হয় ট্রল। এরপর তিনি শুরু করেন সিনেমা প্রযোজনা ও অভিনয়। গত নির্বাচনে নিজ এলাকা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন আলম।